রিজার্ভ ব্যবহারে সতর্ক হওয়া উচিত ছিল: ড. আহসান এইচ মনসুর

পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, বর্তমানে মূল্যস্ফীতির যে চাপ তার বেশির ভাগই বৈশ্বিক কারণে সৃষ্ট। পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ কিছু কারণও রয়েছে। বিশ্বব্যাপীই মূল্যস্ফীতির হারের ঊর্ধ্বগতিই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। এর মধ্যে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হারই বেশি বাড়ছে। এ হার আরও বাড়বে এমন আশঙ্কাও রয়েছে। বৈশ্বিকভাবে যে দুর্যোগ বা যুদ্ধবিগ্রহ দেখা দিলে মানুষের মধ্যে এ ধরনের আস্থাহীনতার সৃষ্টি হয়। এর সঙ্গে পণ্যের জোগানেও প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয়। এতে পণ্যে ও সেবার দাম বেড়ে গিয়ে মূল্যস্ফীতি ঘটায়। এবারের মূল্যস্ফীতির নেপথ্যে বড় কারণ হচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এ যুদ্ধ না থামলে বৈশ্বিকভাবে মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতিতে লাগাম পড়বে না। বাংলাদেশ যেহেতু আমদানিনির্ভর, খাদ্য থেকে শিল্পের যন্ত্রপাতি কাঁচামাল আমদানি করতে হয়, সে কারণে এ দেশেও মূল্যস্ফীতির হার খুব বেশি কমবে না। আমদানিজনিত মূল্যস্ফীতি হবে।

মূল্যস্ফীতির ক্ষতির দিক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এর প্রথম আঘাত আসে দরিদ্র মানুষের ওপর। এরপর মধ্য আয়ের মানুষের ওপর। তাদের আয় কমে যায়, পণ্যের দাম বেড়ে যায়। এই দুই শ্রেণির মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হলে তারা চাহিদা অনুযায়ী পণ্য কিনতে পারে না। ফলে শিল্প উৎপাদনে ভাটা পড়ে। দেশের পুরো অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে সরকার বিপাকে পড়ে মুদ্রার মান কমে গেলে ও আমদানি ব্যয় বেড়ে গেলে সব খাতেই হিসাব-নিকাশে টান পড়ে। যেটি এখন পড়েছে। এখন উৎপাদন বাড়াতে হবে। এর মাধ্যমে আমদানির চাপ কমাতে হবে। রেমিট্যান্স বাড়িয়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে হবে।

তিনি আরও বলেন, রিজার্ভ ব্যবহারে সরকারকে আরও সতর্ক হওয়া উচিত ছিল। কেননা এখন রিজার্ভ বেশি থাকলে মুদ্রার মান এত বেশি হারে কমত না। আমদানি নিয়েও খুব বেশি দুশ্চিন্তা করতে হতো না।

তিনি বলেন, আইএমএফসহ উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে যে ঋণ পাওয়া যাবে তাতে বৈদেশিক লেনদেনের ওপর কিছু চাপ কমবে। এর পাশাপাশি সরকারকে রেমিট্যান্স বাড়াতে হবে। রপ্তানি বাড়ানো এখন চ্যালেঞ্জিং। তারপরও যতটুকু সম্ভব ধরে রাখতে হবে। এখন বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করা কঠিন। তবে উন্নয়ন সহযোগীদের বরাদ্দ করা যেসব অর্থ পাইপলাইনে আটকে আছে, সেগুলোকে ছাড় করানোর উদ্যোগ নিলে ভালো হবে। সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে উৎপাদন বাড়ানোর দিকে। যাতে আমদানি কম করতে হয়।