সমাবেশ থেকে যে বার্তা দিতে চায় আওয়ামী লীগ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক জনসভার কার্যক্রম শুরু করছে আওয়ামী লীগ। দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা এসব জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন। এরই অংশ হিসেবে আজ যশোরে জনসভা করবে আওয়ামী লীগ। এরপর ৪ঠা ডিসেম্বর চট্টগ্রাম ও ৭ই ডিসেম্বর কক্সবাজারে জনসভা অনুষ্ঠিত হবে। দলটির নেতারা জানিয়েছেন, এই তিন জেলায় অন্তত ১৯ লাখ লোকের সমাগম ঘটানো হবে। এর মধ্যে যশোরের শামস্-উল হুদা স্টেডিয়ামে ৫ লাখ, চট্টগ্রামে ১০ লাখ ও কক্সবাজারের জনসভায় ৪ লাখ লোক মাঠে উপস্থিত থাকবেন বলে তাদের প্রত্যাশা। এছাড়া কিছু জেলায় দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় নেতারা জনসভায় অংশ নেবেন। সবমিলিয়ে নির্বাচনের আগ পর্যন্ত মাসে অন্তত ৬টি জনসভা করতে চায় আওয়ামী লীগ। আর এসব জনসভা থেকে ৮ ধরনের বার্তা দিতে চায় ক্ষমতাসীন দল। নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করতে এবং দলীয় অবস্থান জানান দিতেই এই সমাবেশ কর্মসূএছাড়া বিরোধী দলের চলমান কর্মসূচির বিপরীতে সমাবেশ থেকে দেশবাসীকে বার্তা দিতে চায় ক্ষমতাসীন দল। জনসভার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে চলমান পরিস্থিতি তুলে ধরা হবে। পাশপাশি এই সংকটকাল উত্তরণে দেশবাসীর সহায়তা চাওয়া হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে বিরোধী দলের দাবির বিষয়টির ব্যাখ্যা এবং দলীয় অবস্থান জানানো হবে। সরকারের উন্নয়ন কর্মকা-ের প্রচার, দলীয় কোন্দল নিয়ে নেতা-কর্মীদের বার্তা দেয়া হবে জনসভা থেকে। 

এছাড়া আগামী নির্বাচনকেন্দ্রিক আওয়ামী লীগের প্রতিশ্রুতির বিষয়ও থাকবে কেন্দ্রীয় নেতাদের বক্তব্যে। 

দলীয় সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের নেতা-কর্মীদের উজ্জীবিত রাখতে এখন থেকে নিয়মিত জনসভা করা হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সম্মতি নিয়ে জনসমাবেশ কোথায় করা হবে তা নির্ধারণ করা হচ্ছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে প্রচার-প্রচারণা আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। 

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, আগামী নির্বাচন আরেকটি লড়াই। তাতে আমরা জয়লাভ করবো। আন্দোলনের নামে যারা গাড়ি পুড়িয়েছে, গাড়ির ভেতরে মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে যারা এদেশে উন্নয়নের একটি দৃষ্টান্ত দিতে পারবে না তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা বা তুলনা করার কোনো সুযোগ আমাদের নেই। আমরা মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল। বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া দল আওয়ামী লীগ নিজের মহিমায় মহিমান্বিত। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যাবে। 

যশোরের জনসভা প্রসঙ্গে যশোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ বলেন, করোনা মহামারির পর রাজনৈতিক কর্মকা- হিসেবে ঢাকার বাইরে জনসভার জন্য যশোরকে বেছে নেয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। তাকে বরণ করে নিতে যশোরের মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। সারা জেলায় সাজ সাজ রব পড়ে গেছে। প্রচুর উদ্দীপনা-উৎসাহ দেখা যাচ্ছে। মানুষকে সমবেত করতে সকল জনপ্রতিনিধিকে নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। জনসভায় আসতে সবার মাঝে উদ্দীপনা দেখতে পাচ্ছি। আশা করছি, প্রধানমন্ত্রীকে দেখার জন্য আগামীকালের জনসভা জনসমুদ্রে পরিণত হবে। এর মাধ্যমে নির্বাচনের আগ পর্যন্ত বাংলাদেশের রাজনীতির নতুন একটি ধারা সূচিত হবে। 

আগামী ৪ঠা ডিসেম্বর চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ড মাঠে আয়োজন করা হয়েছে আওয়ামী লীগের জনসভা। ওই জনসভায় অন্তত ১০ লাখ লোকের সমাগম হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ.জ.ম নাছির। ওই সমাবেশে ব্যাপক লোক সমাগম করতে দলীয় নেতারা ব্যস্ত সময় পার করছেন। 

আসছে ৭ই ডিসেম্বর জনসভা হবে কক্সবাজারের ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। সেখানে ৪ লাখ মানুষের সমাগম হবে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল। তিনি বলেন, আশা করি কক্সবাজারে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় জনসমাবেশ হতে যাচ্ছে। মানুষের মাঝে এখন থেকেই উৎসাহ ও উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে। জনসভাকে কেন্দ্র করে নেতা-কর্মীদের মধ্যে ঐক্য বেড়েছে। তিনি বলেন, আমাদের এখানে গাড়ির সংখ্যা কম। জেলার ৯টি উপজেলা থেকে মানুষ জনসমাবেশে অংশ নেবে। গাড়ির সংখ্যা বেশি থাকলে এই সমাবেশে ৮ থেকে ১০ লাখ লোকের সমাগম হতো। 

দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্ধারিত জনসভার বাইরেও জেলা এবং উপজেলা সম্মেলনের মাধ্যমে দলীয় কার্যক্রম জোরদার করা হচ্ছে। এছাড়া দলের সহযোগী সংগঠনগুলোর কাউন্সিলসহ সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করতে নির্দেশনা রয়েছে। এসব কার্যক্রমে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ছুটে বেড়াচ্ছেন সারা দেশে। পাশাপাশি দলের কেন্দ্রীয় নেতারাও এসব কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। এর পাশাপাশি বিরোধী দলের কর্মসূচি ঘিরে রাজধানীতে দলীয় তৎপরতা বাড়িয়েছে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি। নিয়মিত কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি তাৎক্ষণিক কর্মসূচি পালনেরও নির্দেশনা রয়েছে নগরের নেতাকর্মীদের প্রতি।