কমলগঞ্জে ভূগর্ভে বিস্ফোরণে আতঙ্ক, ঘরের দেয়ালে ফাটল

গ্যাস অনুসন্ধানে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার দুটি ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রাম এলাকার ভূ-গর্ভে একের পর এক বিস্ফোরণ ঘটানো হচ্ছে। এতে এলাকাজুড়ে কম্পনের সৃষ্টি হচ্ছে।

বার বার কম্পন ও শব্দের কারনে শিশু ও অসুস্থরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। পাকা ও আধা পাকা বসতবাড়িতে ফাটলের সৃষ্টি হয়েছে। নলকূপে কাদামাটিযুক্ত পানি বের হচ্ছে। ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্তসহ বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। ড্রিলিং কাজের জন্য বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছে চায়না ন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম করপোরেশন বিজিপি (সিএন পিসি-চায়না)।

গ্যাস অনুসন্ধানে ড্রিলিং ও ভূ-গর্ভে বিস্ফোরণে বাড়িঘরের দেওয়ালে ফাটল, নলকূপে পানি বিনষ্ট হওয়াসহ বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিপূরণের দাবিতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর গণদরখাস্ত দিয়েছে এলাকাবাসী। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় কমলগঞ্জ নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। এ সময় ক্ষতিপূরণ আদায় কমিটির আহ্বায়ক আবু বক্কর, সদস্য হুমায়ুন কবির, সেলিম আহমদ, কয়েছ আহমদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

দরখাস্তে বলা হয়, উপজেলার পতনউষার ইউনিয়নের ধূপাটিলা, নোয়াগাও, শ্রীসূয্য, উসমানগড়, টিলাগড়, বৈদ্যনাথপুর, রাঙ্গাটিলা, গুঞ্জরকান্দি গ্রাম এবং শমশেরনগর ইউনিয়নের কেছুলুটি, সতিঝিরগ্রাম, ঘুষপুর, সোনাপুর, হাজিনগর, দৌলতপুর, ভাদাইরদেউল গ্রামে ভূ-গর্ভে প্রায় তিন সহস্রাধিকেরও বেশি বিস্ফারণ ঘটানো হয়েছে। এতে বেশ কিছু বাড়িঘরের পাকা দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে। কিছু টিউবওয়েল দিয়ে লাল ও ময়লাযুক্ত পানি বের হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলার কমলগঞ্জ, কুলাউড়া ও জুড়ী উপজেলার ৫শ’ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে সার্ভে, ড্রিলিং ও রেকর্ডিং কার্যক্রম বাস্তবায়ন শুরু করেছে চায়না ন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম করপোরেশন। তারা প্রজেক্ট এলাকার সিসমিক লাইনে পূর্ব-পশ্চিমে ৮০ মিটার আন্তর-অন্তর সোর্স পয়েন্ট (ডিলিং পয়েন্ট) চিহ্নিত করে উত্তর-দক্ষিণে ৪০ মিটার অন্তর ৫০/৬০ ফুট বিস্ফোরণ ঘটিয়ে জরিপ করছে।

দেওছড়া চা বাগানের শ্রমিক রাজু গোড় বলেন, বিস্ফোরণের কারণে আমার ঘরের দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে। আরও অনেক শ্রমিকের ঘরের দেয়ালে ফাটল ধরেছে। পতনঊষার ইউনিয়নের ধূপাটিলা ও নোয়াগাঁও গ্রামের কয়েকটি বাড়ির সেমিপাকা দেয়ালে নতুন করে ফাটল দেখা দিয়েছে।

ধূপাটিলা গ্রামের জাহেদ মিয়া, জুবায়েল আহমদ, জুয়েল আহমদ, নূরুল মোত্তাকীন, নোয়াগাঁও গ্রামের আবুল মিয়া, কবির আহমদ ভূঁইয়া বলেন, আমাদের পাকা দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে। শমশেরনগর ইউনিয়নের আলমগীর হোসেন বলেন, বিস্ফোরণে গর্ভবতী মায়েরা বেশি আতঙ্কিত। এটি শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি করছে।

এ প্রসঙ্গে পরিবেশ কর্মী নূরুল মোহাইমীন মিল্টন বলেন, বসতবাড়ির সন্নিকটে যে হারে বিস্ফোরণ ঘটানো হচ্ছে তাতে শুধু ঘরবাড়িরই ক্ষতি হচ্ছে না, এটি দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি করছে। দিনে দুই-তিনশ বিস্ফোরণ হচ্ছে। এতে মাটির স্তর পরিবর্তন, পানি দূষণ, টিউবওয়েলে সমস্যা, বন্যা ও ভূমিকম্পে ঘরবাড়ি ও মাটি ধ্বসে যাওয়ার ঘটনাও ঘটতে পারে।

জানতে চাইলে চায়না ন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের পাবলিক রিলেশন অফিসার ইমাম হোসেন বলেন, অভিযোগ পেয়ে সরেজমিন পরিদর্শন করেছি। কয়েকটি পাকা ঘরে পূর্বের ফাটলের সঙ্গে নতুন করে কিছুটা ফাটল বেড়েছে বলে মনে হয়েছে। তাছাড়া ঘর থেকে নির্দিষ্ট দূরত্বে শটিং হচ্ছে। তবে যারা প্রকৃত অর্থে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।

কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিফাত উদ্দিন বলেন, সরকার থেকে অনুমতি নিয়ে তারা সার্ভে শুরু করেছে। বসতবাড়ি থেকে কমপক্ষে তারা ৮০ মিটার দূরত্বে বিস্ফোরণ ঘটানোর কথা বলেছে। এতে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন তারা ক্ষতিপূরণ পাবেন।