ঢাবি না নিলেও নাসায় যোগ দিয়ে যোগ্যতার প্রমাণ দিলেন ইমরান

নরসিংদীর আল ইমরান চেয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষক হতে। একাধিকবার চেষ্টার পরও তাকে নেওয়া হয়নি। অবশেষে তিনি নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (নাসা) জেট প্রোপালশন ল্যাবরেটরিতে (জেপিএল) যোগ দিয়েছেন।

ছোটবেলা থেকেই আল ইমরানের নতুন কিছু জানার প্রতি আগ্রহ বেশি ছিল। যে কোনো জিনিস পেলেই তার গবেষণায় লেগে যেতেন। ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করার কারণে তার মহাকাশ নিয়ে গবেষণার আগ্রহ হয়। এই আগ্রহ শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (নাসা) জেট প্রোপালশন ল্যাবরেটরির (জেপিএল) গবেষক বানিয়েছে।

চলতি জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ইমরান মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার জেপিএলে পোস্ট ডক্টরাল ফেলো হিসেবে যোগ দিয়েছেন।

ইমরানের (৩৩) বাড়ি নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার পশ্চিম রামপুর। তার বাবা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মো. নুরুল ইসলাম। মা মাহমুদা খাতুন গৃহিণী। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে ইমরান তৃতীয়। ভাইয়েরা বেসরকারি চাকরি ও বোন মাদ্রাসায় শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন।

ইমরান ২০০৪ সালে খিদিরপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে ৩.৫৭ পেয়ে পাস করেন। পরে তিনি খিদিরপুর কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে তিনি ২০০৬ সালে বিজ্ঞান বিভাগে ৪.৪ পেয়ে পাস করেন। ইমরানের ইচ্ছে ছিল বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এ পড়াশোনা করার। কিন্তু রেজাল্ট কম থাকায় তিনি ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারেননি। পরে তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিভাগে ভর্তি হন। 

কিন্তু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও কোনো ক্লাস করেননি। পরবর্তী বছরে ইমরান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। তিনি অনার্স ও মাস্টার্স উভয় পরীক্ষায় প্রথম হন। অনার্সে তার সিজিপিএ ৩.৬৯। মাস্টার্সে ৩.৯৭। 

অনার্স-মাস্টার্স শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল ইমরানের। এ জন্য তিনি একাধিকবার আবেদন করেছিলেন। কিন্তু কোনোবারই তিনি নিয়োগের জন্য বিবেচিত হননি। পরে তিনি ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগে প্রায় এক বছর শিক্ষকতা করেছেন।

পরে ২০১৭ সালে ইমরান উচ্চ শিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। যুক্তরাষ্ট্রের আলাবামার অবার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্ল্যানেটারি জিওসায়েন্সে মাস্টার্স করেন তিনি। অর্জন করেন পূর্ণ সিজিপিএ ৪। এর পর ২০২২ সালে ইমরান ইউনিভার্সিটি অব আরকানসাসে স্পেস অ্যান্ড প্ল্যানেটারি সাইন্সে পিএইচডি করেন। পিএইচডির শেষ দিকে জেপিএলে পোস্ট ডক্টরাল ফেলোর বিজ্ঞপ্তি দেখেন ইমরান। 

তিনি আবেদন করার পরে কয়েক ধাপের যাচাই-বাছাই, পরীক্ষা, সাক্ষাৎকার শেষে জেপিএলে গবেষক হিসেবে কাজ করার সুযোগ পান। ৩ জানুয়ারি জেপিএলে যোগ দেন ইমরান। 

জেপিএলের ওয়েবসাইটে পোস্ট ডক্টরাল ফেলোর তালিকায় ইমরানের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তিনি ইতোমধ্যে তার কাজ শুরু করে দিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার পাসাডেনায় জেপিএল অবস্থিত। নাসার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, মর্যাদাসম্পন্ন গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্রগুলোর একটি জেপিএল। জেপিএলের ব্যবস্থাপনায় রয়েছে ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (ক্যালটেক)। জেপিএলের অর্থায়নে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকার। নাসার জন্য মনুষ্যবিহীন নভোযান তৈরি, পরিচালনা ও গবেষণার কাজ করে জেপিএল।

জেপিএলে ইমরানের কাজের ক্ষেত্র হলো মঙ্গলগ্রহ। মঙ্গলগ্রহে প্রাণের সম্ভাব্য বসবাসযোগ্য পরিবেশ অনুসন্ধানে (ডিসকভারি) কাজ করবেন তিনি। 

ইমরান বলেন, ঢাবিতে শিক্ষক হতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমাকে নেওয়া হয়নি। এই না হওয়াটা আমার জন্য সম্ভাবনার বড় দুয়ার খুলে দিয়েছে। কয়েকটি ধাপে কঠোর যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে নাসার জেপিএলে গবেষক হিসেবে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। এখানে কাজ করতে পারাটা অনেক বড় সম্মানের বিষয়।

তিনি আরও বলেন, জীবনে কিছু হারালে হতাশ হওয়ার কারণ নেই। জীবন আরও অনেক সম্ভাবনা নিয়ে আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। কঠোর পরিশ্রম ও দৃঢ়তা দিয়ে এই সম্ভাবনাকে লুফে নিতে হয়। আমিও তাই করেছি।