মহাসড়কে জন্ম নেওয়ার শিশুটি ছোট মনি নিবাসে

হবিগঞ্জের মাধবপুরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে জন্ম নেওয়া মানসিক ভারসাম্যহীন তরুণীর নবজাতক সন্তান দত্তক পাননি জনৈক দম্পতি। শিশুটির জন্মের পর থেকে চেষ্টা করেও ওই দম্পতি নিতে পারেননি। অবশেষে মধ্যরাতে মা ও শিশুটিকে সিলেটে প্রেরণ করা হয়েছে।

ছোটমনি নিবাসের অধীন শিশুটিকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শিশুকল্যাণ বোর্ডের সিদ্ধান্তে তাকে সিলেট প্রেরণ করা হয়। অন্যদিকে সোমবার (২৩ জানুয়ারি) রাত ১১টা পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে এ বিষয়ে আইনি সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়নি।

মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) দুপুরে এ বিষয়ে সিদ্ধান্তের জন্য হবিগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আবেদন করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মাধবপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. আশরাফ আলী।

মো. আশরাফ আলী বলেন, যেহেতু শিশুটিকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে প্রেরণ করা হয়েছে। তাই তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মাকেও সেখানে ভর্তি রাখা হয়েছে। সমাজসেবা বিভাগের সেন্ট্রাল হোমের মাধ্যমে সিলেট ছোটমনি নিবাসের অধীন শিশুটিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) সিনিয়র আইনজীবী পারভীন আক্তার বলেন, এখনও আদালতের অর্ডার পাওয়া যায়নি। তবে আমরা অপেক্ষায় আছি। ইতোমধ্যে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। এর আগে সোমবার রাত ১১টা পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়েও এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়নি।

মাধবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এএইচএম ইসতিয়াক মামুন বলেন, মা ও নবজাতক দু’জনই সুস্থ আছে। তবে ওই তরুণী তার নাম, ঠিকানা কিছুই বলতে পারছেন না।

নওগাঁ জেলার কেরানীনগর উপজেলার রোজগ্রামের বাসিন্দা মিল্টন সর্দার ও তার স্ত্রী মোছাম্মৎ সোনিয়া আক্তার জানান, মিল্টন সর্দার মাধবপুর একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। চাকরির সুবাধে তারা এখানেই থাকেন। ১৩ বছর পূর্বে তাদের বিয়ে হয়েছে। কিন্তু কোন সন্তান হয়নি। তাই তারা এ শিশুটিকে দত্তক নিতে চান। কিন্তু এখনও তারা কোন সিদ্ধান্ত পাননি। তবে এখনও আশা ছাড়েননি বলে জানান তারা।

উল্লেখ্য, মানসিক ভারসাম্যহীন ওই তরুণী বেশ কয়েকদিন ধরে গর্ভবতী অবস্থায় উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। গত রোববার দুপুরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের জগদীশপুর মুক্তিযোদ্ধা চত্তর এলাকায় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। ব্যথায় কাতর হয়ে রাস্তার পাশে পড়ে কাতরাচ্ছিলেন। বিষয়টি দেখতে পেয়ে মাধবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনজুর আহসান উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে অবহিত করেন। খবর পেয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এএইচএম ইসতিয়াক মামুনসহ ডাক্তার, নার্সসহ স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে অবস্থা বেগতিক দেখে সেখানেই সন্তান প্রসব করান। এ সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের যুগ্ম সচিব জাকিয়া পারভীন, সহকারী পরিচালক ডা. বদিউজ্জামান, সহকারী পরিচালক ডা. রওশন আক্তার জাহান আলো, সহকারী পরিচালক ডা. আসিফ ইকবাল, হবিগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ নূরুল হক, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ইসতিয়াক মামুন, মাধবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনজুর আহসান।