অটিজম চিকিৎসার নতুন দিগন্ত

অটিজম শব্দটির শুনতেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে উঠে এমন একটি শিশু যে সব সময় আত্মমগ্ন থাকে; কারো সঙ্গে কথা বলে না, খেলা করে না, নিজের জগতেই নিজে বিচরণ করে। যার কোনো বন্ধু নাই, কারো চোখে চোখ রেখে কথা বলে না বা শোনে না; একই কাজ বার বার করতে থাকে। এদের অনেকে আবার কথাও বলতে পারে না। অনেকে কথা বলতে পারলেও সঠিকভাবে পারে না। আবার অনেকে নিজের হাত কামড়িয়ে রক্তাক্ত করে, অনেকে হাতের কাছের জিনিস-পত্র ভেঙে নষ্ট করে। আবার কেউ বাসার দরজা জোরে জোরে শব্দ করে কেউবা বিছানা-তোষক নিচে ফেলে দেয় সে এক অবর্ণণীয় কষ্টকর পরিবেশ। এর থেকে কি কোনো মুক্তির পথ নাই? সেই মুক্তির পথের সন্ধান দিতেই আজকের এই প্রঅটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার:

অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার এক ধরনের নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার; যেখানে অনেক ধরনের মানসিক সমস্যা বা প্রতিবন্ধকতা একসাথে ঘটে ফলে, বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পরিপূর্ণ মানসিক বৃদ্ধি ঘটে না। এ ধরনের নিউরোলজিক্যাল সমস্যায় মস্তিষ্কের স্বাভাবিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয় যার সঙ্গে মানসিক বিকাশগত জটিলতাও প্রকাশ পায়। এই সমস্যার কারণে জন্মের ১৮ মাস থেকে ৩ বছর বয়সের মধ্যেই শিশুর আচরণগত এবং মানসিক সীমাবদ্ধতা পরিলক্ষিত হয়। ফলে, কথা বলা বা ঠিকমতো শব্দ উচ্চারণ করা, নতুন জিনিস বুঝতে পারা বা শেখা কিংবা সামাজিক সম্পর্ক গড়ে তোলা শিশুর জন্য বেশ বড় চ্যালেঞ্জ হয়েঅটিজমে কি ঘটে?

প্রতিটি মানুষের ২৩ জোড়া ক্রমোজম থাকে। অটিজমে আক্রান্ত ব্যক্তির ২১ নং ক্রমোজম ত্রুটিযুক্ত হয়। ফলে তার নিউরো- ডেভেলপমেন্ট বা মনোবিকাশের সমস্যা হয়। ব্রেনের নিউরোণসমূহ সঠিকভাবে তথ্য আদান-প্রদান করতে না পারায় শিশুর আচরণ, কথা-বার্তা ও বুদ্ধিবৃত্তি স্বাভাবিকভাবে কাজ করে না। ব্রেন ডেভেলপ হয়ে পরিপূর্ণতা পেলে ব্রেনের নিউরোণসমূহ সঠিকভাবে তথ্য আদান-প্রদান করলে শিশুর আচরণ, কথা-বার্তা ও বুদ্ধিবৃত্তি স্বাভাবিক অবিভাবকগণের করণীয়:

আপনার শিশু অটিজমে আক্রান্ত শুনে ভেঙে পড়বেন না। মাথা ঠাণ্ডা রেখে শান্তভাবে করণীয় সম্পর্কে চিন্তা করুন। শিশুর সমস্যাগুলো শনাক্ত করুন। এ ধরনের শিশুর অবিভাবকদের সঙ্গে পরিচয় থাকলে তাদের সঙ্গে পরামর্শ করুন। এদের মধ্যে যদি কারও সন্তানের উন্নতি হয়েছে বলে জানতে পারেন তাহলে কোথা থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন? কোথা থেকে থেরাপি নিচ্ছেন? কোথায় লেখাপড়া করে? খাবারের রুটিন কি? এ সকল তথ্যসমূহ জেনে নিন। যদি কারও সন্তান হাইপার থাকে তাহলে তার বিষয়ে অধিক সতর্কতা অবলম্বন করুন। বহুবিধ অসুবিধার মধ্যেও আপনার সন্তানের চিকিৎসার দায়িত্ব আপনাকেই নচিকিৎসা:

হোমিওপ্যাথিতে অটিজম শিশুদের ভালো মানের চিকিৎসা রয়েছে। চিকিৎসায় শিশুদের বুদ্ধি, ধৈর্য্য, আই-কট্রাক্ট, শিশুর আচরণ, কথা-বার্তা ইত্যাদি বিষয়ে উন্নতি হয়। এছাড়াও হাইপার শিশুদের আচরণও স্বাভাবিক হয়। ‘অটিস্টিক শিশুদের’ সমস্যা যেহেতু ‘নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার’ সেহেতু প্রয়োজন ‘নিউরো ডেভেলপমেন্ট’ চিকিৎসায় অভিজ্ঞতাসম্পন্ন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক। চিকিৎসা শুরুর পর রোগীর মানসিক উন্নতি হলে, আগের তুলনায় মনোযোগী এবং নিজের কাজ নিজে করার আগ্রহ তৈরি হলে বুঝতে হবে চিকিৎসা সঠিক হচ্ছে। তবে, একথা স্মরণ রাখতে হবে এই পরিবর্তন প্রথম দিকে ধীরে-ধীরে হয়। অটিস্টিক শিশুদের চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথির সফলতা এবং ঝামেলা মুক্ত চিকিৎসা পদ্ধতিতে আকৃষ্ট হয়ে ক্রমেই এই চিকিৎসার প্রতি রোগীদের আস্থা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

অটিস্টিক শিশুদের চিকিৎসায় সাধারণত: রোগীর ‘মায়াজমের’ দিকে খেয়াল রেখে প্রধাণত: কার্সিনোসিন, থুজা, মেডোরিনাম, সিফিলিনাম, টিউবারকুলিনাম, সালফার, ক্যালকেরিয়া-কার্ব, ক্যালকেরিয়া-ফস, অ্যাগারিকাস, বিউফোরানা, ন্যাট্রাম-মিউর, ন্যাট্রাম-সাল্‌ফ ইত্যাদি ওষুধ ব্যবহৃত হয়। ছাড়াও চিকিৎসার পাশাপাশি সঠিক খাদ্য ও কিছু ব্যায়ামের প্রয়োজন যা মস্তিষ্কের নিউরোনের কার্যকারিতা বৃদ্ধির জন্য সহায়ক। অবিভাবকদের শিশুর অটিজম চিকিৎসায় আরও যত্নবান হয়ে তাদেরকে স্বাভাবিক জীবন-ধারায় ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।

লেখক: ডা. এমএ হক, পিএইচ.ডি (স্বাস্থ্য), এম.ফিল (স্বাস্থ্য), ডিএইচএমএস। গবেষক ও চিকিৎসক (নিউরোসাইকিয়াট্রিক ডিজঅর্ডার)।

চেম্বার: ড. হক হোমিও ট্রিটমেন্ট অ্যান্ড রিসার্র্স সেন্টার, বিটিআই সেন্ট্রা গ্রান্ড, গ্রাউন্ড ফ্লোর (জি-৪), ১৪৪ গ্রীন রোড, পান্থপথ, ঢাকা।