জাতিসংঘ ভবনের সামনে সেক্যুলার বাংলাদেশের পাকিস্তাবিরোধী প্রতিবাদ

তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান তথা আজকে বাংলাদেশে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর চালানো হত্যাযজ্ঞকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে স্বীকৃতি এবং ওই সময় পাকিস্তানের ন্যাক্কারজনক ভূমিকার জন্য দেশটির বিচারের দাবিতে পোস্টার প্রতিবাদ করা হয়েছে। 

স্থানীয় সময় শুক্রবার ইন্টারন্যাশনাল ফোরাম ফর সেক্যুলার বাংলাদেশের সুইজারল্যান্ড শাখা দেশটির রাজধানী জেনেভার ব্রোকেন চেয়ার স্কয়ারে অবস্থিত জাতিসংঘ ভবনের সামনে এই প্রতিবাদ কর্মসূচির আয়োজন করে। এতে অংশ নেন দেশটিতে বাংলাদেশি প্রবাসীরা।

ভারতীয় বার্তা সংস্থা এএনআই এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। আয়োজকদের বরাত দিয়ে এতে বলা হয়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ হয়েছিল ১৯৭১ সালে, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে। চলতি বছরই স্বাধীনতার ৫১ বছর পূর্ণ করবে বাংলাদেশ। ইন্টারন্যাশনাল ফোরাম ফর সেক্যুলার বাংলাদেশের দাবি, আন্তর্জাতিক বিশ্ব যেন ওই হত্যাযজ্ঞকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তানের হানাদার বাহিনী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ ঢাকায় নিরীহ লোকজনের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার পর ওই রাতেই বেতারে স্বাধীনতা সংগ্রামের ঘোষণা দেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এই ঘোষণার পর পরই তাকে  গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী।

ফলে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ শুরু হয় স্বাধীনতা যুদ্ধ। অবশেষে নয় মাসের এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাক হানাদার বাহিনী বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের বিজয় সূচিত হয়। কিন্তু যুদ্ধের নয় মাসে পুরো বাংলাদেশে নিহত হয়েছেন প্রায় ৩০ লাখ মানুষ। প্রতিমাসে গড়ে তিন লাখ ৭৫ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। সেইসঙ্গে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন প্রায় ২ লাখ নারী। 

১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পরিচালিত হত্যাকাণ্ডকে আন্তর্জাতিকভাবে গণহত্যার স্বীকৃতির জন্য বাংলাদেশ গত কয়েক বছর ধরে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এই স্বীকৃতি যদি আদায় করা সম্ভব হয়, সেক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আদালতে পাকিস্তানের বিচার চাওয়ার প্রক্রিয়াটি অনেক সহজ হবে। 

প্রসঙ্গত, ব্রোকেন চেয়ার ভাস্কর্যটি একদিকে যেমন ভঙ্গুরতার প্রতীক, অপরদিকে তেমনই শক্তির প্রতীক। এটি একইসঙ্গে ভারসাম্যহীনতা ও স্থিতিশীলতা এবং সহিংসতা ও মর্যাদার প্রতীক। পূর্বে এর নাম ছিল হ্যান্ডিক্যাপ ইন্টারন্যাশনাল। প্রখ্যাত ভাস্কর ড্যানিয়েল বেরসেট হিউম্যানিটি এন্ড ইনক্লুশন-এর অনুরোধে ১৯৯৭ সালে এই ব্রোকেন চেয়ার হল ভাস্কর্যটি নির্মাণ করেন।

৩৯ ফুট দৈর্ঘ্যের এই ভাস্কর্যটি জাতিসংঘ সদরদপ্তরের সামনে প্লেস ডেস নেশনসে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এ ভাস্কর্যটি ভাঙা চেয়ারের তিনটি পায়ের উপর ভারসাম্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এবং চেয়ারের চতুর্থ পা-টি যেন কোনো হামলায় নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।

ভাস্কর্যটির মাধ্যমে যে শিক্ষা তুলে ধরা হয়েছে, তা হলো- চতুর্থ পা-টি যুদ্ধে আহত যোদ্ধাদের প্রতিচ্ছবি। নষ্ট হয়ে যাওয়া চতুর্থ পা যেমন অন্য তিন পায়ের সঙ্গে ভাস্কর্যে সমান গুরুত্ব পেয়েছে, ঠিক তেমনি যুদ্ধাহত যোদ্ধারাও পদমর্যাদায় অন্য সবার সমান।