সোনারগাঁওয়ে আসামি ধরতে গিয়ে র‌্যাবের গুলি, বৃদ্ধ নিহত

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার সাদিপুর ইউনিয়নের বরগাঁও চেয়ারম্যানপাড়া এলাকা থেকে আবুল কাশেম (৬৫) নামে এক বৃদ্ধের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

বর্তমানে ওই বৃদ্ধের লাশ সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রাখা হয়েছে। নিহতের স্ত্রীর দাবি, র‌্যাব পরিচয়ে সাদা পোশাকধারী কিছু লোক শুক্রবার মধ্যরাতে তার স্বামীকে গুলি করে হত্যা করেছে।

পাশের বাড়ির সেলিম (২৩) নামে এক প্রতিবেশীকে গ্রেফতারের কারণ জানতে চাওয়ায় উত্তেজিত হয়ে র‌্যাব পরিচয়দানকারীরা তার স্বামীকে সরাসরি তার সামনে পেটে গুলি করে হত্যা করেছে।

এ ঘটনায় হুমায়ুন কবির (৪৩) নামে আরেকজন আহত হয়েছেন। নিহত আবুল কাশেম বরগাঁও গ্রামের মৃত কদম আলীর ছেলে।

সোনারগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রাখা বৃদ্ধের লাশের পাশে তিনজন পুলিশ সদস্য পাহারায় রয়েছেন। নিহত বৃদ্ধের চাচাতো বোন নাসিমা বেগম ও স্ত্রী রমিজা বেগম লাশের পাশে বসে কান্না করছিলেন।

সোনারগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিহতের লাশের পাশে বসে বিলাপ করে তার স্ত্রী রমিজা বেগম বলেন, উপজেলার বরগাঁও চেয়ারম্যানপাড়া এলাকায় শুক্রবার দিনগত রাত দেড়টার দিকে তার স্বামী ও তিনি প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে ঘরের বাইরে বের হন। এ সময় বাড়ির পাশে রাস্তার মধ্যে কয়েকজনের চিৎকার চেঁচামেচির শব্দ শুনতে পান।

রাস্তায় গিয়ে দেখতে পান তাদের পার্শ্ববর্তী বাড়ির সেলিম নামে এক যুবককে কয়েকজন জিন্স প্যান্ট ও গেঞ্জি পরা লোক টেনেহেঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছেন। এ সময় সেলিমের বাড়ির লোকজন কান্নাকাটি করছিল।

বৃদ্ধ আবুল কাশেম ওই লোকদের কাছে তাদের পরিচয় জানতে চাইলে সাদা পোশাকধারীরা ওই বৃদ্ধকে লাঠি দিয়ে দুটি আঘাত করলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। একপর্যায়ে বৃদ্ধ উত্তেজিত হয়ে মাটি থেকে উঠে হৈ চৈ করে সাদা পোশাকধারীদের গালি দেন। এতে সাদা পোশাকধারীরা বৃদ্ধের পেটে গুলি করেন। এ সময় ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। পরে তার লাশ সোনারগাঁও থানা পুলিশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়।  

সাদিপুর ইউনিয়ের বরগাঁও গ্রামের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানান, গভীর রাতে গুলির শব্দ পাওয়ার পর এলাকার মসজিদের মাইকে ডাকাত পড়েছে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। পরে এলাকাবাসী এগিয়ে আসলে সাদা পোশাকধারী লোকজন গ্রামবাসীকে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়েন।

এ সময় হুমায়ুন কবির (৪৩) নামে একজনের পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়। তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়।

এলাকাবাসী জানান, শুক্রবার সকালে পার্শ্ববর্তী গজারিয়াপাড়া এলাকায় রোজিনা আক্তার নামের এক পোশাক শ্রমিককে গলাকেটে হত্যার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ওই এলাকায় অভিযান চালায় র‌্যাব। তবে র‌্যাব পরিচয়ে অভিযান পরিচালনাকারীদের গায়ে কোনো র‌্যাবের পোশাক ছিল না। ফলে এলাকাবাসীর সন্দেহ হয়। একপর্যায়ে তাদের ডাকাত বলে দাবি করে চ্যালেঞ্জ করলে তাদের সঙ্গে এলাকাবাসীর তর্ক শুরু হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গুলি ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। র‌্যাবের পোশাকধারী হলে হয় তো তাদের কাছে কেউ কোনো কৈফিয়ত চাইতো না।  

সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন বলেন, শুক্রবার দিনগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে গুলিবিদ্ধ এক বৃদ্ধকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। পরীক্ষা করে জানা যায়, হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই ওই বৃদ্ধ মারা গেছেন। তার নাভির উপরে একটি বুলেটের চিহ্ন রয়েছে।

এ ব্যাপারে র‌্যাব-১১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল তানভীর মাহমুদ পাশা বলেন, রোজিনা আক্তার নামে এক পোশাক শ্রমিককে গলাকেটে হত্যার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে সেলিম নামে এক আসামিকে গ্রেফতার করতে গেলে র‌্যাব সদস্যদের বাধা দেয় একদল লোক। এ সময় ফাঁকা গুলি করে আসামিকে নিয়ে আদমজি অফিসে চলে আসেন র‌্যাব সদস্যরা। পরে সকালে জানতে পারি এক বৃদ্ধ গুলিতে মারা গেছেন, আরেকজন আহত হয়েছেন।

সোনারগাঁ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ আহসানউল্লাহ বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। কীভাবে মারা গেছেন তা এখন পর্যন্ত জানা যায়নি। এ বিষয়ে কোনো কিছু জানার থাকলে তিনি র‌্যাবের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।