মিয়ানমারের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা দিলো যুক্তরাষ্ট্র

মিয়ানমারের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এবার টার্গেট করা হয়েছে দেশটির সামরিক বাহিনীর জেট ফুয়েল সরবরাহকে। মিয়ানমারের বিমান বাহিনী সাম্প্রতিক সময়ে বেসামরিক নাগরিকদের টার্গেট করে একের পর এক বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। এটি থামাতে যেসব প্রতিষ্ঠান মিয়ানমারকে জেট ফুয়েল সরবরাহ করে তাদেরকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়েছে। শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয় হিসেবে পরিচিত ট্রেজারি বিভাগ থেকে এই নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেয়া হয়। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।খবরে বলা হয়, এই দফায় দুই জন ব্যক্তি এবং ছয়টি প্রতিষ্ঠান এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েছে। এক বিবৃতিতে মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ বলেন, নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসা সবাই সামরিক জান্তাকে যুদ্ধবিমানের জ্বালানি সরবরাহের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। জ্বালানি সরবরাহ, আমদানি ও মজুতে তাদের সহায়তা মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে দেশের নাগরিকদের ওপর অবিরাম হামলা চালাতে সক্ষম করে তুলেছে। ট্রেজারি বিভাগের ‘সন্ত্রাসবাদ ও অর্থনৈতিক গোয়েন্দা শাখা’র আন্ডার সেক্রেটারি ব্রায়ান নেলসন বলেন, ক্ষমতা দখলের পর থেকে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা দেশটির জনগণকে নিপীড়ণ-নির্যাতন করে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটির শান্তিকামী ও গণতন্ত্রপন্থী জনগণের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।সামরিক বাহিনীর এই নৃশংসতা রোধের জন্য যা যা করা সম্ভব, যুক্তরাষ্ট্র করে যাবে।

এর আগে ২০২১ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লেইংয়ের নেতৃত্বে এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সুচির নেতৃত্বাধীন সরকারকে হটিয়ে দেশের ক্ষমতা দখল করে সামরিক বাহিনী। তারপর থেকেই দেশটির সেনাবাহিনীর সঙ্গে দ্বন্দ্ব-সংঘাত শুরু হয়েছে দেশটির বেসামরিক জনগণ ও সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলোর। সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখলের পর গত দুই বছরের দ্বন্দ্ব সংঘাতে মিয়ানমারে এ পর্যন্ত নিহত হয়েছেন প্রায় ৪ হাজার মানুষ। এছাড়া বাস্তুচ্যুত হয়েছেন লাখ লাখ মানুষ। হুমকির মুখে পড়েছে বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরত যাওয়ার প্রক্রিয়াও। 

ক্ষমতা দখলের পর জনগণকে টার্গেট করে যে সহিংসতা সামরিক জান্তা শুরু করেছিল, তা এখনও অব্যাহত আছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্ত হয়েছে বিমান হামলা। এসব হামলায় ডজন ডজন মানুষের মৃত্যুর খবর প্রায়ই প্রচারিত হচ্ছে বিশ্ব গণমাধ্যমে। নিন্দার ঝড় বয়ে গেলেও থামছে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। ফলে তাদেরকে থামাতে নিষেধাজ্ঞাকেই একমাত্র সমাধান মনে করছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা। ফলে পশ্চিমা দেশগুলো দফায় দফায় নিষেধাজ্ঞা শক্তিশালী করছে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে। সামরিক জান্তার অর্থ সংগ্রহের ক্ষমতা হ্রাসের চেষ্টা করছে। 

এই মাসে প্রকাশিত জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে, সেনাবাহিনীর ‘নির্বিচারে বিমান হামলা এবং গোলাবর্ষণ’-এর কারণে মিয়ান্মারের উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে সহিংসতা আরও তীব্র হচ্ছে। এসব অঞ্চলে বেসামরিক জনসংখ্যাকে বাস্তুচ্যুত করার জন্য গ্রামগুলোতে ব্যাপক অগ্নিসংযোগ করেছে সামরিক জান্তা। ভিক্টিমদের সহায়তায় আন্তর্জাতিক দাতা গোষ্ঠীগুলোকেও যেতে দেয়া হচ্ছে না। জান্তা সরকারের দাবি, তারা মিয়ানমারে সক্রিয় সন্ত্রাসবাদীদের নির্মূলে এসব অভিযান চালাচ্ছে।