কাজে অনিয়ম করেও জনতাকে 'মামলার' হুমকি!

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি : সুনামগঞ্জ-দোয়ারাবাজার মহাসড়কের প্রায় ৪৬ কোটি টাকার কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয়রা। অনিয়মের বিষয়ে কথা বললে, চাঁদাবাজির মামলায় ঢুকিয়ে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়। এজন্য এখন আর সড়কের কাজের অনিয়ম নিয়ে কোন কথা বলেন না স্থানীয় জনগন। সুনামগঞ্জ-দোয়ারাবাজার মহাসড়কের ১০ কিলোমিটার অংশের প্রশস্তকরণ এবং নতুন করে বিটুমিনের কাজ করছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। গত বছরের ডিসেম্বর মাস থেকে এই কাজ শুরু হয়েছে, শেষ হবার কথা ২০২০ সালের জুন মাসে। কাজ করছে সিলেটের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জন জেবি কন্সট্রাকশন। ১৮ ফুট সড়কের বর্ধিত ৩ ফুট অংশে বক্স করে প্রথম ১ ফুট বালু, পরের ১০ ইঞ্চি বালু ও কাটা পাথর বা ইটের কোয়া মিশিয়ে ভরাট করার কথা। শেষের ৮ ইঞ্চি ১৮ ফুট প্রশস্তের সড়কে একইভাবে বালু-পাথর মিশিয়ে করার কথা। এরপরে হবে বিটুমিনের কাজ। স্থানীয় লোকজনের দাবি সড়কের বর্ধিত অংশের বক্সের পুরোটাই বালু দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে। সড়কের পার্শ্ববর্তী ইউনিয়ন মান্নারগাঁওয়ের সাবেক ইউপি সদস্য সিরাজ মিয়া জানান, কয়েকদিন আগে স্থানীয় গণ্যমান্যরা জড়ো হয়ে অনিয়মের প্রতিবাদ করেছিলেন। ঠিকাদারের লোকজন তখন সকলকে জানায়, ‘আপনারা যেহেতু কাজ বুঝেন, আপনারাই করেন, আমরা কাজ না করেই চলে যাব। শেষে সকলেই চলে আসেন এবং বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানকে জানানো হয়। তিনি জানালেন, ঐক্যবদ্ধভাবে এলাকাবাসী প্রতিবাদ করেও কোন লাভ হয়নি। ঠিকাদার অনেক প্রভাবশালী, কেউ বিচ্ছিন্নভাবে কথা বললে, কাজের এলাকায় থাকা ঠিকাদারের লোকজন হুমকি দিয়ে বলে, বেশি কথা বলে লাভ নেই। কথা বললে চাঁদাবাজির মামলার আসামী হবে। আমবাড়ী’র শাহাব উদ্দিন তালুকদার বলেন, একটি স্থানেও বক্সে পাথর-বালুর মিশ্রণ ঠিক করে দেয়নি ঠিকাদারের লোকজন। এসব নিয়ে কথা বললে হুমকি দেওয়া হয়।’ দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোনিয়া সুলতানা এ প্রসঙ্গে বললেন, আমি নতুন এসেছি এই উপজেলায়, আমার বিষয়টি জানা হয়নি, খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেবো। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জন জেবি কনস্ট্রাকসন’এর প্রকল্প ম্যানেজার আবদুল মতিন জানালেন, এমন হয়ে থাকলে উপরের কাজ করার সময় বালু তুলে সিডিউল মোতাবেক কাজ করা হবে। কাউকে হুমকি-ধমকি দেবার অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করেন তিনি। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জন-জেবি’র পরিচালক লুৎফুর রহমান অনিয়মের অভিযোগ সত্য নয় দাবি করে জানালেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানের সুনাম নষ্ট হোক, এটি আমরা কোনভাবেই চাইবো না। সড়ক বর্ধিত করতে ৩ ফুট বক্স করা লাগছে, যেটুকু বালু দেবার কথা সেটুকুই বালু দেওয়া হচ্ছে। কাজ যেহেতু হাতে করা হচ্ছে, সামান্য কম বেশি হতে পারে। তবে কাটা পাথর বা ইটের কোয়া ছাড়া কেবল বালু দেওয়া হচ্ছে, সরেজমিনে যাচাই করলে এই অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যাবে না। এই সড়কের দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী অমিয় চক্রবর্তী’র কাছে কাজে অনিয়ম প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বলেন, সিডিউল মোতাবেক কাজ আদায় করার চেষ্টা করছি। অনিয়মের অভিযোগের বিষয়টি যাচাই করে দেখা হবে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মুঠোফোন রিসিভ না করায় এই বিষয়ে তাঁর বক্তব্য নেওয়া যায়নি। সড়ক ও জনপথ বিভাগ সিলেটের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আনোয়ারুল আমিন অনিয়মের এমন অভিযোগ শুনে বললেন, এমনটা হতেই পারে না। আমি সংশ্লিষ্টদের বলবো বিষয়টি যাচাই করে দেখার জন্য।