সুনামগঞ্জে দেড়ঘন্টায়ও শেষ হয় আধ ঘন্টার সড়ক!

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি:হাওরের এলাকা তাহিরপুর। ধান, মাছ, বালু, পাথর, কয়লায় সমৃদ্ধ উপজেলা অর্থনৈতিকভাবে আলাদা ভূমিকা রাখছে সুনামগঞ্জে। দিগন্তবিস্তৃত হাওর, আকাশের গা বেয়ে নেমে আসা পাহাড় সীমান্তবর্তী এ উপজেলাকে পর্যটকদের কাছেও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। সবার চোখ তাহিরপুরে থাকলেও যোগাযোগব্যবস্থা এ উপজেলাকে অনেক দূরের পথ করে রেখেছে। বেহাল সড়কে দুর্ভোগের কথা জানলে কেউ আর এ পথে পা বাড়াতে চান না। এ পথে চলাচলকারীদের কাছে সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর সড়ক যেন আতঙ্কেরই আরেক নাম। ভাঙাচোরা রাস্তা আর ঝুঁকিপূর্ণ বেইলি ব্রিজ এ সড়কে যাতায়াতকারী জনগণের জন্য দুর্বিষহ অবস্থার সৃষ্টি করে চলেছে প্রতিনিয়ত। সুনামগঞ্জ সদর থেকে তাহিরপুর উপজেলার দূরত্ব মাত্র ৩৮ কিলোমিটার। স্বাভাবিক গতিতে চললে আধ ঘণ্টাতেই এ পথ পেরিয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে দেড় ঘণ্টাতেও পথ ফুরোয় না। যার পুরোটা সময়ই যাত্রীদের চলতে হয় ঝাঁকুনি খেয়ে আর গাড়ি উল্টে যাওয়ার ভয় নিয়ে। খানাখন্দে ভরা সড়কটি সংস্কারের দাবি জানিয়ে নানা সময় আন্দোলন কর্মসূচি করলেও মরণফাঁদ হয়ে উঠা সড়কটি চলাচলের উপযোগী করার উদ্যোগ নেয়নি কেউ। সুনামগঞ্জ সড়ক উপ বিভাগের উপ সহকারী প্রকৌশলী মো. ওসমান মিয়া একাত্তরের কথাকে লিখিতভাবে জানান, ৩৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর সড়কটি সুনামগঞ্জ-কাচিরগাতি-বিশ্বম্ভরপুর সড়ক নামে পরিচিত। এ সড়কে ৬টি বেইলি ব্রিজ আছে। এসব ব্রিজের কোনোটিতেই ৫ টনের বেশি ভারি যানবাহন চলাচলের সুযোগ নেই। এর বেশি ওজনের যানবাহন ব্রিজে তোলাটা ঝুঁকিপূর্ণ। ক্ষমতা কম থাকায় পরবর্তীতে ব্রিজগুলোর স্থলে স্থায়ী ব্রিজ তৈরি কথা থাকলেও উল্টো জোড়াতালি দিয়ে বেইলি ব্রিজগুলোই চালু রাখা হয়েছে। নির্বাহী প্রকৌশলীর দেওয়া তথ্যমতে, মুক্তিখোলায় একটি বেইলি ব্রিজ আছে যা নির্মিত হয়েছে ১৯৮৬ সালে, আরেকটি ২০১২ সালে, রাজঘাটে ২০০০ সালে, পলাশে ২০০৩ সালে, তেরাকান্দিতে ২০০২ সালে এবং জগন্নাথপুরে ২০০২ সালে নির্মিত হয়েছে। ব্রিজগুলো দিন দিন আরো বেশিমাত্রায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠলেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। প্রায়ই বেইলি ব্রিজগুলো ভেঙে পড়ে বা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। ক’দিন আগে রাজঘাটের বেইলি ব্রিজটি (পুলের ঘাট নামে পরিচিত) মালবাহী ট্রাকসহ ভেঙে পড়ায় ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে এ পথে চলাচলকারীদের। কয়েকদিন সময় নিয়ে ব্রিজটি সংস্কার হলেও আবারো ভেঙে পড়ার ঝুকি রয়ে গেছে। কিন্তু থেমে থাকার উপায় নিয়ে, ঝুঁকি নিয়েই পথ চলতে হচ্ছে। কারণ নানা কারণে দিনে দিনে এ সড়কের গুরুত্ব বাড়ছে। পলাশ এলাকা বাসিন্দা উচ্ছাস দাশ বলেন, বেইলি ব্রিজগুলো সবার কাছেই আতঙ্ক হয়ে আছে। এগুলো ভেঙে পাকা ব্রিজ করা না পর্যন্ত এ সড়কে চলাচলকারীদের দুঃশ্চিন্তা কমার সম্ভাবনা নেই। সড়ক বিভাগ জানায়, বহুল ব্যবহৃত লাউড়েরগড়ের সড়কটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের নয়। ধনপুর থেকে লাউড়েরগড় সড়কটি এলজিইডি এর অধীনে রয়েছে বলে জানান এলজিইডি, সুনামগঞ্জ এর নির্বাহী প্রকৌশলী ইকবাল আহমেদ। এ সড়কের হাল সম্পর্কে তিনি জানান, সুরমা নদীর উপর ব্রিজ হওয়ার পর এ সড়কে যানবাহন চলাচল বেড়ে গেছে। কিন্তু অতীতে এ সড়কটি নির্মাণ করা হয়েছিল শুধুমাত্র মোটরসাইকেল বা ছোট আকারের যানবাহন চলাচলের জন্য। বেড়ে যাওয়া যানবাহনের চাপে প্রায়ই রাস্তা ভেঙে যায়। এ সমস্যা নিরসনে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন শীঘ্রই সড়কে নতুন রাস্তা ও রাস্তা প্রশস্তকরণের কাজ একনেকে অনুমোদিত হয়ে আসবে। তিনি আরো জানান জাদুকাটা নদীর উপর ৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে বিন্নাকুলী থেকে শিমুলবাগান পর্যন্ত নির্মাণাধীন ব্রিজের কাজ পুরোদমে চলছে। ব্রিজের অ্যাপ্রোচ রোড শিমুলবাগান হয়ে বারেক্কাটিলা পর্যন্ত বর্ধিত করা হবে। এতে পর্যটকদের জন্য চলাচল আরো সহনীয় উঠবে। বড়ছড়া, ডাম্পেরবাজারে ব্রিজের কাজ চলছে এবং তা তাহিরপুরের সাথে মধ্যনগরের যোগাযোগব্যবস্থাকে আরো উন্নত করে তুলবে। মহেশখলা-কলমাকান্দা ব্রিজের প্রযোজনীয়তার কথা জানানো হয়েছে। যদিও এলজিইডির পর্যটনের উন্নয়নের কোনো আলাদা প্রকল্প নেই তবু ও এসব কাজ সম্পন্ন হলে সুনামগঞ্জে সড়ক উন্নয়নের পাশাপাশি পর্যটনের শিল্পের ও প্রত উন্নয়ন সাধিত হবে। সুনামগঞ্জের তথা বাংলাদেশের আর্থ সামজিক উন্নয়নে বিশাল ভুমিকা রাখা তাহিরপুরের সাথে জেলা শহরসহ সারাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন খুলে দেবে বিশাল সম্ভাবনার দুয়ার এটা সকল এলাকাবাসীর প্রত্যাশা।