মিলেনি ধানের ন্যায্যমূল্য, তাই সুনামগঞ্জে এক তৃতীয়াংশ বোরো জমি পতিত থাকার শংকা

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি::সুজন চৌধুরী শাল্লা উপজেলার মনুয়া গ্রামের একজন গৃহস্থ। তিনি প্রতিবছর বোরো জমি রংজমা দিয়ে থাকেন। বিনিময়ে অনেক টাকা পকেটে ঢুকান। যারা রংজমা নেয় তারাও ধান পেয়ে মহাধুমধামে চলতে পারে। এবার সুজন চৌধুরীর ৫০ কেদার জমি কেউ রংজমা বা বর্গা নিতে আসছে না। বেশ কয়েকজন কৃষকের সাথে কথা বলে তিনি হতাশ হয়ে পড়ে আছেন। যদি জমি বর্গা বা রংজমা না দিতে পারেন জমি পতিত থাকার আশংকা রয়েছে তার। এ চিত্র শুধু শাল্লা উপজেলার নয় জেলার ১১টি উপজেলা জুড়ে। কেন জমি রংজমা বা বর্গা যাচ্ছে না এ বিষয়ে জানতে গিয়ে কৃষকরা জানান, ধানের দর এত কম যে, উৎপাদন খরচ তোলা যায় না- লাভতো দুরের কথা। এ ছাড়া সরকারী খাদ্য গুদামে ধান ঢুকানোর ভাগ্য সবার জুটেনা। তাই জমি বর্গা কিংবা রংজমা নিতে আগ্রহ নেই কৃষকের। এ হিসেব কষে দেখা গেছে জেলার প্রায় এক তৃতীয়াংশ বোরো জমি পতিত থাকার আশংকা রয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ সুত্রে জানা যায়, জেলার ৩ লাখ কৃষক বোরো আবাদ করেন। গেলবার জেলার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ১৭ হাজার ৪৩৫ হেক্টর তন্মধ্যে ২ লাখ ২৪ হাজার হেক্টর বোরো জমি আবাদ হয়েছে। উৎপাদন হয়েছিল ১৩ লাখ ১২ হাজার ৫০০ মে: টন। এত বাম্পার ফলনের পর ধানের দর না পাওয়ায় কৃষকরা এবার বোরো আবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। কৃষি পেশায় ধরে রাখতে সরকারকে এক্ষুনি কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে বলে জানান গৃহস্থরা। এদিকে কৃষকরা জানান, কৃষি জমির মালিক অনেকের লাঙল, জোয়াল, ট্রাক্টর, কাজের লোক নেই। নিজেরা কোনভাবেই বোরো আবাদ করতে পারবেন না। তাই তারা প্রতি বছর বর্গা কিংবা রংজমা দিয়ে থাকেন। বর্গাচাষীরাও ধান ফলন শেষে মুনাফার মুখ দেখতে না পাওয়ায় আগ্রহ একেবারেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। আগে বর্গচাষীরা জমি বর্গা নিতে গৃহস্থের বাড়িতে লাইন ধরত। এখন গৃহস্থরা বর্গাচাষীদের খুঁজেও পাচ্ছেন না। অনেক বর্গচাষী এ পেশা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। কেউ যাবার চিন্তায় আছেন। তবে তারা বলছেন সরকার যদি বীজ, সার, কীটনাশক ফ্রি দেয় এবং ধানের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করে তবেই এ পেশায় হাল ধরবে তারা। তাহিরপুরের শনি ও মাটিয়ান হাওরের কৃষক জুনাব আলী ও রুস্তুম আলী জানান, গেলবার বাম্পার ফলন হলো। খুশীতে মনটা ভরা ছিল। কিন্তু যখন ধান ন্যায্য মূল্যে বিক্রি করতে পারি নাই তখন এ পেশার প্রতি আগ্রহ থাকে কি করে? জামালগঞ্জের হালির হাওরের কৃষক ময়না মিয়া বলেন, আমার জমি এখন পর্যন্ত কেউ বর্গা নিতে আসছে না। আসলেও দাম এত কম বলে যে, বর্গা দেওয়া কোন ভাবেই সম্ভব না। তার মানে বর্গা দেয়া আর পতিত থাকা সমান। দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার চেয়ারম্যান ফারুক আহমদ বলেন, আমাদের আদি পেশা কৃষি। এ দেশের ৯০ ভাগ মানুষ কৃষির উপর নির্ভরশীল। যেভাবে ধানের দর পতন হচ্ছে পাট শিল্পের মতো এটিও হারিয়ে যেতে পারে। সরকারকে এ বিষয়ে এক্ষুনিই ভাবা উচিত। বিশ্বের কিছু দেশে কৃষিতে উৎপাদিত ফসল সরকার বেশী দামে কিনে নিয়ে যায়। পরে এ ফসল ভুর্তকি দিয়ে বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে কৃষিকে বাঁচিয়ে রেখেছে। বিদেশের মতো আমাদের সরকারকেও এরকম উদ্যোগ নিয়ে কৃষি শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক জাকারিয়া মোস্তফা বলেন, ধানের লক্ষ্যমাত্রা আরো বাড়াতে হবে। তবেই কৃষকরা বেশী করে গুদামে ধান দিতে পারবে। অন্যতায় কৃষক এ পেশায় ঠিকে থাকতে পারবে না।