সিলেটে মহাসড়কে ধাপিয়ে বেড়াচ্ছে অটোরিকশা-ইজিবাইক!

নন্দিত সিলেট:সিএনজি অটোরিকশা। মহাসড়কে নিষিদ্ধ এই হালকা যান। ২০০৫ সালে নির্বাহী আদেশে আসে এই নিষেধাজ্ঞা। তারপরও মহাসড়কে ধাপিয়ে বেড়াচ্ছে এই যানবাহন। এ কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনায় ঘটছে প্রাণহানির ঘটনা। সেই সিএনজি অটোরিকশার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরেক যন্ত্র দানব ইজিবাইক। যানবাহন ক্যাটাগরিতে পড়ে না ইলেকিট্রক চার্জে চলা ইজিবাইক নগর-শহরে চলছে হাজারে হাজার। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারি না থাকায় সড়ক মহাসড়কে ধাপিয়ে বেড়াচ্ছে এসব হালকা যান। পরিসংখ্যান মতে, সিলেটে রেজিস্ট্রেশনকৃত সিএনজি অটোরিকশার চেয়ে নাম্বার বিহীন সিএনজি অটোরিকশা ও ইজিবাইক চলাচল করছে বেশি। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটি) সিলেটের তথ্য মতে, ২০১৪ সালে সিএনজি অটোরিকশার রেজিস্ট্রেশন দেওয়া বন্ধ হয়। ওই সময় পর্যন্ত সিলেট জেলায় রেজিস্ট্রেশনকৃত সিএনজি অটোরিকশা সংখ্যা ১৯ হাজার ২৩২টি। তবে রেজিস্ট্রেশন বিহীন সিএনজি অটোরিকশা ও ইজিবাইকের কোনো পরিসংখ্যান এই দফতরে নেই। সিএনজি অটোরিকশার শ্রমিক ইউনিয়ন সূত্রে জানা গেছে, শুধু সিলেট জেলায় রেজিস্ট্রেশন বিহীন অন্তত ২৫ হাজার সিএনজি অটোরিকশা চলাচল করছে। এর বাইরে ইজিবাইক চলাচল করছে কয়েক হাজার। এসব ইজিবাইককেও প- সিরিয়ালে নাম্বার দিচ্ছে বিআরটিএ মৌলভীবাজার শাখা। বিআরটিএ সিলেটের সহকারি পরিচালক সানাউল হক বলেন, রেজিস্ট্রেন বিহীন অটোরিকশার বিরুদ্ধে ট্রাফিক আইনে মামলা দেওয়া যায় না। আর ইজিবাইক কোনো যানবাহনের ক্যাটাগরিতে পড়ে না। যে কারণে ডাম্পিং করা ছাড়া কোনো পন্থা নেই। তবে সিলেটে ডাম্পিং এরিয়া না থাকায় অভিযান চালিয়েও কোনো সফলতা আসছে না। আর মহাসড়কে সিএনজি অটোরিকশা ও ইজিবাইক চলাচলের অনুমতি নেই। কিন্তু তারপরও চলাচল করছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেটে গ্রাম-শহরে সিএনজি অটোরিকশার শতাধিক শ্রমিক ইউনিয়ন রয়েছে। এসব ইউনিয়ন বা সমিতিতে রেজিস্ট্রেশনকৃত অটোরিকশায় ভর্তি ফি দিতে হয় ২ হাজার টাকা। রেজিস্ট্রেশন বিহীন সিএনজি অটোরিকশা ক্ষেত্রে নেওয়া হয় ৫ হাজার টাকা। রোড পার্মিট হিসেবে গাড়ি প্রতি সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশে ভর্তি ১ হাজার ও মাসোহারা দিতে হয় ১শ‘ টাকা এবং মাসে একদিন পুলিশের ডিউটি করতে হয়। নগরে চলাচল করা অটোরিকশায় পুলিশকে মাসোহারা এক হাজার টাকা করে দিতে হয়। এতে করে সড়কে চলাচলের জন্য সাংকেতিক চিহ্ন হিসেবে মিলে স্টিকার। আলাপরচিতায় এমন তথ্য দেন একাধিক সিএনজি অটোরিকশা চালক। অভিযোগ রয়েছে, রেজি: নং-৭০৭ এর অধীনে শ্রমিক ইউনিয়নের নামে আসা দসাংকেতিক টোকেনে চলে রেজিস্ট্রেশন বিহীন অটোরিকশা। গাড়ির সামনে লাগানো সাংকেতিক স্টিকার থাকলেও চলাচল করা যায় সহসাই। ফলে নিষেধাজ্ঞা স্বত্বেও ঝুঁকি নিয়ে এসব যানবাহন চলাচল করতে দেওয়া হচ্ছে মহাসড়কেও। সূত্র জানায়, সিলেট নগরেই ট্রাফিক পুলিশের অনেক কর্মকর্তা ও সদস্যের একাধিক সিএনজি অটোরিকশা, ইজিবাইক ও ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা রয়েছে। মাঝেমধ্যে অভিযানের নামে হয় আইওয়াশ। শনিবার সিলেট-তামাবিল সড়কে অভিযান চালিয়ে নাম্বার বিহীন ৬টি সিএনজি অটোরিকশা জব্দ করেছে জেলার জৈন্তাপুর থানা পুলিশ। একইভাবে রোববার নগরের টুকেরবাজার এলাকায়ও অভিযান চালায় এসএমপি পুলিশ। সিলেট জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা ও মিডিয়া) আমিনুল ইসলাম বলেন, মহাসড়কে সিএনজি অটোরিকশা চলাচল বন্ধে হাইওয়ে পুলিশ পদক্ষেপ নেওয়ার কথা। কিন্তু তাদের লোকবল কম থাকায় অধিক্ষেত্রগুলো জেলা পুলিশকে দেখতে হয়। এ জন্য মাঝেমধ্যে অভিযান চালালেও মহাসড়কে অটোরিকশা বন্ধ করা যাচ্ছে না। আর যে সময়ই অভিযান হয়, সেসব অভিযানে রেজিস্ট্রেশন বিহীন অটোরিকশাও জব্দ করা হয়েছে। এবিষয়ে সিলেট নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (ট্রাফিক) নিকোলিন চাকমা বলেন, নগর এলাকার অধিভূক্ত মহাসড়কে সিএনজি অটেরিকশা চলাচল বন্ধে বার বার অভিযান চালানো হচ্ছে। এ যাবত হাজোরের উপরে সিএনজি অটোরিকশা, সহস্রাধিক ইজিবাইক ও কয়েক হাজার ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা জব্দ করা হয়। কিন্তু ডাম্পিংয়ের স্থান না থাকায় মামলা দিয়ে, মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দিতে হচ্ছে। ফলে আবারো রাস্তায় বেরোচ্ছে এগুলো। সমিতির টোকেনে এসব অটোরিকশা চলাচল করে। যদি পুলিশ জড়িত থাকে, তবে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।