সিলেটে বিলুপ্তির পথে মিঠাপানির মাছ

নন্দিত সিলেট:শহরতলীর টুকেরবাজার এলাকার বাসিন্দা আইয়ুব আলী দু’বছর হলো মাছ ধরার পেশা ছেড়ে দিয়ে বর্তমানে রিক্সা চালান। নিজের চৌদ্দ পুরুষের পেশা ছেড়ে এই পেশায় কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন আর আগের মতো খাল বিল নেই। তাছাড়া আগের মতো আর হাওর বাওরে মাছ পাওয়া যায়না। বেঁচে থাকার তাগিদে তাই তার পেশা পরিবর্তন। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, জলাশয় ভরাটকরণ, কারেন্ট জালের অবাধ ব্যবহার, অপর্যাপ্ত বৃষ্টি ও খরা আর অভয়াশ্রমের অভাবে সিলেটে মিঠা পানির মাছ উৎপাদন ও মৎস্য চাষ ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে। বিলুপ্তির পথে অনেক প্রজাতির মিঠাপানির মাছ। অনেক মৎস্যজীবী তাদের পেশা পরিবর্তন করে ভিন্ন ভিন্ন পেশায় যোগ দিচ্ছেন। এছাড়াও সিলেটে মৎস্য খামার গড়ে তুলতেও তেমন কোন আগ্রহ নেই কারো। তবে সরকারী উদ্যোগে সিলেটে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি আর মৎস্য চাষীদের মৎস্য চাষে উৎসাহ প্রদানে নানা প্রশিক্ষণ ও কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে মৎস্য অধিদপ্তর। সিলেটে দেশীয় মিঠাপানির মাছের আকাল বিষয়ে জানতে চাইলে মৎস্য সংশ্লিষ্টরা এসব তথ্য জানিয়েছেন। মৎস্য অধিদপ্তরের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, সিলেটের বিভিন্ন নদী বিল হাওর আর জলাশয়ে ৯১ প্রজাতির মিঠাপানির মাছ রয়েছে। তবে গত কয়েক বছরে সিলেটের অধিকাংশ বিল আর জলাশয় ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে বর্তমানে এসব মাছের আকাল দেখা দিয়েছে। অনেক প্রজাতির মাছ প্রায় বিলুপ্তির পথে। ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে ডানকিনা, চেলাপাতা, টেংরা, পুটি সোল, মাগুর আর গুতুম মাছের প্রজাতিও। এছাড়া সিলেটে মাছের অভয়াশ্রম সীমিত থাকার কারণেও অধিকাংশ দেশী মাছ বিলুপ্তির পথে। এসব মাছের বিচরন এলাকা নদী হাওর বাওর, খাল বিল, আর জলাশয় বিষাক্ত দাহ্য পদার্থে দুষিত হয়ে যাচ্ছে। কৃষিকাজে যে রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয় তার প্রভাবও গিয়ে পড়ে এসব ছোট মাছের উপর। ধারাবহিক দুষণ আর পলি পড়ে ভরাট হয়ে যাচ্ছে নদী। আর কম দামে জলাশয় ক্রয় করে তা ভরাট করে আবাসন শিল্প গড়ে তুলছেন অনেকে। যে কারণেও মাছের অবাধ বিচরন এলাকা ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। সঙ্গত কারণেই সিলেটে বর্তমানে দেশী মাছের উৎপাদন কম। এছাড়াও সিলেটে মাছের কোন অভয়াশ্রম নেই। সিলেট সদর উপজেলার জিলকার হাওর ও ওসমানী নগর উপজেলায় একটি হাওরকে সরকারী ভাবে মাছের অভয়াশ্রম ঘোষণা করলেও হাওর দুটির রক্ষণাবেক্ষণে তেমন কোন সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা নেই। ফলে সিলেট ক্রমেই দেশী মাছ শুণ্য হয়ে পড়ছে। আর সিলেটের মাছের বাজার ধীরে ধীরে দখলে নিচ্ছে বিভিন্ন বিদেশী মাছ। সিলেট মৎস্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক সুলতান আহমদ জানিয়েছেন, দেশীয় মিঠাপানির মাছ রক্ষায় তারা নানা পদক্ষেপ ও কর্মসূচী নিয়েছেন। জেলেদের প্রশিক্ষণ প্রদান, মাছের প্রজাতি রক্ষায় উম্মুক্ত বিল ও জলাশয়ে কীটনাশক প্রদান থেকে বিরত থাকতে জনসাধারণের মধ্যে গণসচেতনতা সৃষ্টি, মৎস্য সপ্তাহ পালন, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাদের মাধ্যমে জেলেদের ক্ষুদ্র ও মাজারি ঋণ প্রদানসহ নানা কর্মসূচী। সিলেটে মৎস্যজীবীদের পেশা পরিবর্তন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এমন কোন তথ্য তাদের দপ্তরে নেই। কেউ যদি তার পারিবারিক প্রয়োজনে জেলের পেশা ছেড়ে দিয়ে থাকে তবে থাকতে পারে। কিন্তু পেশাটি এখনো যেমন লাভজনক রয়েছে , ভবিষ্যতে তা আরো লাভজনক হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।