অপরাধ রোধে জৈন্তাপুর থানার ওসি গুডটাচ বেডটাচ ফর্মুলা

আমার থানা এলাকা জৈন্তাপুরে বিভিন্ন স্থানে ভারতীয় তীরখেলার ভয়াবহ সিন্ডিকেট ছিলো। ছিলো মাদকের ছড়াছড়িও। তীরখেলায় জড়িয়ে শ্রমজীবি লোকজন সারাদিনের কষ্টার্জিত টাকা বিলিয়ে দিতো। বাড়িতে ফিরতো শূন্য হাতে। চালসহ ঘরের খরচ না আনার কারণে বাড়িতে বউয়ের সাথে ঝগড়াঝাটিতে লিপ্ত হতো। মাদকের গল্প ছিলো আরও ভয়াবহ। থানা এলাকার অদুরেই যুগযুগ ধরে চলতো মাদকের অবাধ বিকিকিনি। উপজেলার বিভিন্নস্থানে বখাটে আর উত্তক্তকারীও কম ছিলনা। সর্বপুরি আইনশৃংখলা ব্যাঘাতের অগণিত রশদই ছিলো নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপারের মতো। এখন অনেকে সচেতন। তৈরী হয়েছে গণসচেতনতা। মাদক,তীরখেলার মতো ভয়াবহ অন্ধকার জগৎ ছেড়ে আলোকিত জীবনে ফিরেছে অগণিত যুবক। শতভাগ সফল হয়ে গেছি এমনটা বলছিনা। তবে মাদক, জয়া, তীরখেলামুক্ত জৈন্তাপুর গঠনে চেষ্টার ত্রুটি করছিনা। বুধবার থানা কম্পাউন্ডে একান্ত আলাপচারিতায় কথাগুলো বলছিলেন জৈন্তাপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শ্যামল বনিক। থানা সুত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ৩ আগস্ট জৈন্তাপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিসেবে যোগদান করেন শ্যামল বনিক। দেশের উত্তরপুর্বাঞ্চলীয় ভারত সীমান্তবর্তী উপজেলা জৈন্তাপুর। সঙ্গত কারণে মাদকসহ সীমান্ত অপরাধের জন্য নানা কারণে আলোচিত এ থানা এলাকা। জৈন্তারাজ্যের আর প্রাকৃতিক অনেক নিদর্শনও দেশব্যাপী আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে জৈন্তাপুর। এই থানার অপরাধ পরিক্রমায় স্পর্শকাতর দিকগুলোর মধ্যে সব সময়ই মাদক, চোরাচালান আর ভারতীয় তীরখেলা। এই অপরাধগুলোকে নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খেয়েছেন সাবেক সকল কর্মকর্তারা। তবে আশার কথা কথা হলো জৈন্তাপুর উপজেলার আইনশৃংখলা পরিস্থিতির সার্বিক চিত্র আগের তুলনায় এখন অনেকটাই স্বাভাবিক। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিসেবে যোগদানের পর জৈন্তাপুর থানা এলাকায় মাদক, ভারতীয় তীরখেলা, জুয়া, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই আর ইভটিজিং বন্ধে অভিন্ন কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে চৌকস পুলিশ কর্মকর্তা শ্যামল বনিক। সহযোগিতা চেয়ে তিনি এলাকার সচেতন মহল, জনপ্রতিনিধি, জনসাধারণকে আহবান জানান অপরাধমুক্ত জৈন্তাপুর গঠনে। ঘোষনা করেন গুডটাচ, বেডটাচ ফর্মুলা। এ কাজে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে হাতে হ্যান্ডমাইকে প্রচারনা চালান একাধিক পথসভায়। উপজেলা সদর থেকে শুরু করে ৬টি ইউনিয়নের গুরুত্বপুর্ন পয়েন্টে তিনি মাদক, জঙ্গি, তীরখেলা, ইভটিজিং বিরোধী পথসভা করেন। প্রাথমিক থেকে শুরু করে উপজেলার বড় বড় হাইস্কুল এবং কলেজ সমুহের শিক্ষার্থীদের সচেতন করে তুলতেও সমানতালে প্রচারনায় অংশ গ্রহণ করেন। মাদক, জঙ্গি, তীরখেলা, ইভটিজিং প্রতিরোধসহ অপরাধ দমনে তিনি শিক্ষার্থীদের এগিয়ে আসার আহবান জানান। তার এই গুডটাচ,বেডটাচ ফর্মুলাসহ জনসচেতনামুলক প্রচারাভিযান জনসাধারণের মনে দাগ কাটে। বিভিন্ন অনলাইন নিউজ পোর্টালসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সমুহেও ফলাও করে তা প্রচারিত হয়। তার এ উদ্যোগে সফলতা আসে। কমতে শুর করে থানা এলাকার অপরাধ প্রবনতা। থানার অপরাধচিত্রেও তা সফলতার স্বাক্ষর বহণ করে। প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সুত্রে জানা যায় মাসিক আইন শৃংখলা মিটিংয়েও অপরাধ প্রবনতা হ্রাস ও ওসি শ্যামল বনিকসহ থানা পুলিশের ভুমিকা প্রশসংনীয় হয়। জৈন্তাপুর মডেল থানার ষ্ট্যাটম্যান্ট অফিসার সুত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ৩ আগস্ট ওসি হিসেবে শ্যামল বনিক যোগদানের পর হইতে ৬ নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে জৈন্তাপুর মডেল থানার পরিচালিত বিভিন্ন অভিযানে ২২৫জন অপারাধি গ্রেফতারে সক্ষম হয় জৈন্তাপুর থানা পুলিশ। তার মধ্যে উপজেলার কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর, নারী নির্যাতনকারী আব্দুল আলী মেম্বার, ১৭জন ডাকাত, চোরাকারবারি, তীরখেলা পরিচালনাকারী,অজ্ঞানপার্টির সদস্যসহ দাগি অগণিত অপরাধী। অপরাধ দমনে পরিচালিত অভিযানের পাশাপাশি টিলাকাটা, অতিথি পাখি শিকারীদের আটক,পাখি অবমুক্তকরণ, জৈন্তাপুরের লালাখাল, শ্রীপুর, গোয়াবাড়ি, সাইট্রাস গবেষনা কেন্দ্রসহ ঘুরতে আসা পর্যটকদের নিরাপত্তা জোরদার করণসহ নেয়া হয়েছে ব্যতিক্রমি নানা উদ্যোগ। জৈন্তাপুরের সার্বিক আইন শৃংখলা পরিস্থিতির উন্নয়নের ব্যাপারে কথা হলে উপজেলার ৪নং দরবস্ত ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাহারুল আলম বাহার জানান, জৈন্তাপুরের সার্বিক আইন শৃংখলা পরিস্থিতি আগের তুলনায় অনেক ভালো। বিশেষ করে থানার ওসি শ্যামল বনিকের মাদক, জঙ্গি, তীরখেলা প্রতিরোধে গৃহিত ভুমিকা প্রশংসনীয়। উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক কমিটির সদস্য স্থানীয় যুশপরের বাসিন্দা নাসির উদ্দিন রাসেল জানান,মাদক উদ্ধার,অপরাধ দমনসহ সামাজিক সচেতনতায় থানা পুলিশের বর্তমান ওসির ভুমিকার অত্যান্ত কার্যকর ও সময়পযোগি। তার গৃহিত উদ্যোগ সমুহ একটি মাদক,জঙ্গি,তীরখেলাসহ অপরাধমুক্ত জৈন্তাপুর গঠনে সহায়ক ভুমিকা পালন করবে বলে আমার বিশ্বাস। একান্ত আলাপ চারিতায় শ্যামল বনিক বলেন, মাদক, জঙ্গি, ইভটিজিং, চুরি ডাকাতি, ছিনতাইজুয়াসহ অপরাধমুক্ত জৈন্তাপুর গঠনে জৈন্তাপুর মডেল থানা পুলিশ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সিলেটের পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন পিপিএমের নির্দেশনায় মাদক,তীর আর ইভটিজিং প্রতিরোধে নানামুখি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। আমাদের অভিযানে গ্রেফতার হয়েছে কুখ্যাত মাদব সম্রাট জাহাঙ্গীর, নারী নির্যাতনকারী আব্দুল আলী মেম্বারসহ অগিণত ভয়ংকর ডাকাত। ইতোপুর্বে অন্ধকার ছেড়ে আলোর পথে এসেছে বেশকজন তীরখেলা পরিচালনাকারী চক্রের সদস্যসহ বেশকজন অপারধী। অপরাধের বিরোধ্যে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে,ভবিষ্যতেও জিরো ট্রলারেন্সই থাকবে। অপরাধমুক্ত জৈন্তাপুর গড়ে তুলতে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টিসহ অপরাধ দমনে পুলিশকে সহযোগিতা করণে তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।