প্রস্তুতি চলছে পুরোদমে, একসাথে ফাঁসি হবে ৪ ধর্ষকের

ভারতকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল দিল্লিতে চলন্ত বাসে মেডিকেল পড়ুয়া এক ছাত্রীকে ধর্ষণ ও পরে তার মৃত্যুর ঘটনা। সেই ধর্ষণ-হত্যা নির্ভয়া হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এর বিরুদ্ধে পুরো ভারত জেগে উঠেছিল। রাজপথ প্রকম্পিত হয়েছিল ধর্ষকদের ফাঁসির দাবিতে। ওই নৃশংসতার দায়ে অভিযুক্ত হওয়ায় মৃত্যুদন্ডের রায় দেয়া হয়েছে চার নরপিশাচ বিনয় শর্মা, অক্ষয় কুমার সিং, মুকেশ কুমার সিং ও পবন গুপ্তকে। তাদের প্রাণভিক্ষার আবেদন বিভিন্ন দপ্তরে খারিজ হয়ে গেছে। তবে মুকেশের আবেদন এখনও প্রেসিডেন্ট রামনাথ কোবিন্দর দপ্তরে পাঠানোর কথা রয়েছে। প্রেসিডেন্ট তা প্রত্যাখ্যান করলেই ফাঁসির রশিতে ঝুলানো হবে অপরাধীদের। তবে কবে তাদের ফাঁসি কার্যকর করা হবে তা এখনও অনিশ্চিত। তা সত্ত্বেও চার অপরাধীকে এরই মধ্যে তিহার কেন্দ্রীয় কারাগার কমপ্লেক্সের ৩ নম্বর জেলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানেই ফাঁসি কার্যকর হবে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন জি নিউজ। বৃহস্পতিবার তিহার জেল প্রশাসন জানিয়েছে, চার অপরাধীর ফাঁসি কার্যকরের প্রস্তুতি পুরোদমে চলছে। আসামীদেরকে প্রথমবারের মতো একই জেলে রাখা হয়েছে। তবে তাদেরকে একই সেলে রাখা হয় নি। রাখা হয়েছে বিভিন্ন সেলে। তিহার জেল ডিরেক্টরেটের সূত্রগুলো বলেছেন, আসামীদেরকে একই সময়ে ফাঁসির কাষ্ঠে নেয়া হবে। তার আগে চারদিকে কঠোর নজরদারি করা হবে। চারদিক থাকবে সুনসান নীরব, যাতে অপরাধীরা কোনো রকম সমস্যা সৃষ্টি করতে না পারে। চার নরপিশাচকে একইসঙ্গে প্রথমবারের মতো ফাঁসির রশিতে ঝোলানো হবে। ফাঁসির মঞ্চের চারপাশে অধিক পরিমাণে উপস্থিত থাকবেন জেল কর্মকর্তা ও স্টাফরা। ফাঁসি কার্যকরের দিন জেলখানায় স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় বেশি কর্মকর্তা উপস্থিত থাকবেন। জেলের বাইরেও সাধারণ মানুষের উপস্থিতি হতে পারে। এরই মধ্যে দিল্লির আদালত তিহার জেল কর্তৃপক্ষকে একটি নির্দেশনা দিয়েছে। তাতে নির্ভয়া গণধর্ষণ ও হত্যা মামলায় চার অপরাধীর ফাঁসি কার্যকরের শিডিউল সম্পর্কে ১৭ই জানুয়ারির মধ্যে একটি রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। জেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে তারা ফাঁসি কার্যকরের বিষয়ে দিল্লি সরকারকে লিখিতভাবে জানিয়েছে। তাতে ২২শে জানুয়ারি তারিখ নির্ধারণ করতে বলা হয়েছে। এরপরেই আদালত ওই নির্দেশনা দিয়েছে। মুকেশের প্রাণভিক্ষার আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছেন দিল্লি লেফটেন্যান্ট গভর্নর। রিপোর্ট অনুযায়ী, তার প্রাণভিক্ষার আবেদন প্রথম প্রত্যাখ্যান করে দিল্লি সরকার। পরে ওই আবেদন পাঠিয়ে দেয়া হয় লেফটেন্যান্ট গভর্নরের কাছে। তাতে আবেদন প্রত্যাখ্যান করে সুপারিশ করা হয়। দিল্লি গভর্নমেন্টের এই সুপাশি মেনে নেন লেফটেন্যান্ট গভর্নর অনীল বাইজাল। তিনি ফাইল পাঠিয়ে দেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। দিল্লি সরকারের কাছ থেকে মুকেশ সিংয়ের প্রাণভিক্ষার আবেদন পাওয়ার কথা নিশ্চিত করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। জানা গেছে, সেই আবেদন এখন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। প্রেসিডেন্ট রাম নাথ কোবিন্দর বিবেচনার জন্য তা পাঠিয়ে দেয়া হবে তার কাছে। রাজ্য সরকার দিল্লি হাইকোর্টকে জানিয়ে দিয়েছে, তারা অপরাধীদের আগামী ২২শে জানুয়ারি ফাঁসি দিতে পারছে না। এ কথা জানানোর পর অপরাধীদের মৃত্যুদন্ডের রায় স্টে করতে বুধবার অস্বীকৃতি জানায় দিল্লি হাইকোর্ট। এ সময় কোট জানিয়ে দেয়, মুকেশ সিংকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছে ট্রায়াল কোর্ট। সে সেখানে আবেদন করতে পারে। হাইকোর্ট আরো জানিয়ে দিয়েছে, দিল্লির পাতিয়ালা হাউজ কোর্ট অপরাধীদের বিরুদ্ধে যে মৃত্যুদন্ডের রায় দিয়েছেন তাতে কোনো ভুল বা অন্যায় দেখছে না হাইকোর্ট। ২২শে জানুয়ারি সকাল ৭টায় অভিযুক্ত বিনয় শর্মা (২৬), কুমেশ কুমার (৩২), অক্ষয় কুমার সিং (৩১) ও পবন গুপ্তকে (২৫) ফাঁসি দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়।