সীমিত পরিসরে হজ

কার্যত প্রতীকী হজ হতে যাচ্ছে এবার। আগামী মাসে অনুষ্ঠেয় মুসলিমদের ধর্মীয় বিশ্বাসের ৫ স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম এই হজে অংশগ্রহণ করতে পারবেন খুবই সীমিত সংখ্যক মানুষ। তাদের সংখ্যা হবে এক হাজারেরও কম। সৌদি আরবের বাসিন্দা এবং সেখানে বসবাসকারী বিদেশিদের মধ্য থেকে এসব হজযাত্রীকে বাছাই করা হবে। কীভাবে তাদের বাছাই করা হবে সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো ঘোষণা দেয়া হয়নি। সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফায়সাল বিন ফারহান আল সৌদ বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেনকে টেলিফোন করে হজ বিষয়ক সর্বশেষ পরিস্থিতি জানিয়েছেন সোমবার। সৌদি সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সৌদি আরবের বাইরে থেকে কোনো হজযাত্রী এবার হজে যেতে পারবেন না। ফলে বাংলাদেশ সহ মুসলিম জাহানের লাখ লাখ হজযাত্রীর মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে তারা হজের টাকা জমা দিয়ে সরকারি নির্দেশনার অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের আশা হতাশায় পরিণত হয়েছে। অনলাইন আরব নিউজ এবং বিবিসি এসব খবর দিয়েছে। আরব নিউজ লিখেছে, সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহ্‌ বিষয়ক মন্ত্রণালয় বলেছে, চলমান করোনাভাইরাস মহামারি ও তা থেকে বৈশ্বিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে সুরক্ষিত রাখার জন্য সীমিত সংখ্যক হজযাত্রীকে হজ করতে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, গত বছরও পবিত্র হজ পালন করেছেন প্রায় ২৫ লাখ মুসলিম। কিন্তু করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা ও তা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ার কারণে বিশ্বের মুসলিমরা সৌদি আরব সফর করতে সক্ষম হবেন না। তাই মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিয়েছে চলমান মহামারি ও প্রচণ্ড ভিড়ে তা ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকিকে সামনে রেখে। মন্ত্রণালয় বিবৃতিতে বলেছে, বিভিন্ন দেশের যেসব মুসলিম সৌদি আরবের ভেতরে অবস্থান করছেন, শুধু তারাই এতে অংশ নিতে পারবেন। পবিত্র হজ যাতে নিরাপদভাবে পালিত হয়, সব প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা অনুসরণ করা হয় এবং প্রয়োজনীয় সামাজিক দূরত্ব পালন করা হয়- তার আলোকে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় বলেছে, বিভিন্ন দেশে এবার করোনাভাইরাসের ঝুঁকি রয়েছে। তা থেকে বৈশ্বিক এই বড় সমাবেশে সংক্রমণের ঝুঁকিও অত্যন্ত বেশি। মুসলিমরা যাতে নিরাপদে ও নিরাপত্তার সঙ্গে পবিত্র হজ ও ওমরাহ পালন করতে সক্ষম হন- সব সময় সেটা অগ্রাধিকারে থাকে সৌদি আরবের কাছে। সোমবার সরকারের গৃহীত এ সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছে কাউন্সিল অব সিনিয়র স্কলারস। সৌদি আরবের এমন সিদ্ধান্তে সমর্থন দিয়েছেন মিশরের আওকাফ বিষয়ক মন্ত্রী মোহামেদ মোকতার গোমা। ওদিকে বিবিসি বলেছে, সব মিলে এবার এক হাজারেরও কম মানুষ হজে অংশ নেয়ার সুযোগ পাবেন। মূলত এবারের হজটি স্রেফ প্রতীকী হতে যাচ্ছে। এর আগে সৌদি আরব কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল যে, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে বাইরের দেশ থেকে হজ করতে যাবার সুযোগ বাতিল করা হচ্ছে এবার। হজের সুযোগ পাবেন শুধু সৌদি আরবের বাসিন্দা এবং দেশটিতে বসবাসরত বিদেশিরা। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র দপ্তরের পাঠানো এক বিবৃতি থেকে জানা যাচ্ছে, সৌদি আরবের বাসিন্দাদের জন্যও যে হজ করার সুযোগ খুব একটা উন্মুক্ত থাকছে, তা নয়। যে এক হাজারেরও কম মানুষের অংশ নেয়ার সুযোগ হবে মুসলমানদের বার্ষিক এই বৃহত্তম সম্মেলনে, সেখানে বিদেশ থেকে অল্প কয়েকজনকে প্রতীকী হিসেবেও অংশ নেয়ার সুযোগ দেয়া হবে। তবে কীভাবে এই অংশগ্রহণকারীদের বাছাই করা হবে, তা নিয়ে এখনো কোনো ঘোষণা আসেনি। সোমবার সন্ধ্যায় সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে টেলিফোন করেন। নিবন্ধনকারীদের কী হবে? এ বছর হজে অংশ নেয়ার জন্য বাংলাদেশ থেকে ৬১ হাজার মানুষ নিবন্ধন করেছিলেন। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী টাকাও জমা দিয়েছিলেন তারা। এখন তাদের অর্থ কি ফেরত দেয়া হবে, দিলে কোন্‌ প্রক্রিয়ায়, নাকি আগামী বছর হজ নিবন্ধনে তাদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে- এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বুধবার ধর্ম মন্ত্রণালয়ে একটি বৈঠক হবে বলে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। সোমবার সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থার এক ঘোষণায় বলা হয়েছে, দেশটিতে বসবাসরত খুবই সীমিত সংখ্যক মানুষ এবার হজ পালনের সুবিধা পাবেন। প্রতি বছর হজ মৌসুমে আনুমানিক কুড়ি লাখের বেশি মানুষ হজ পালন করেন। এর আগে আশংকা করা হয়েছিল, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে এবার হজ বাতিল করতে পারে দেশটির কর্তৃপক্ষ। সৌদি আরবে এ পর্যন্ত এক লাখ ৬১ হাজারের বেশি মানুষ করোনাভাইরাস সংক্রমিত হয়েছেন। মারা গেছেন ১,৩০৭ জন। এর আগে সুরক্ষার জন্য মার্চের শুরুতে বিদেশি নাগরিকদের জন্য মক্কা ও মদিনায় ওমরাহ্‌ পালন ও ধর্মীয় সব কর্মকাণ্ড বন্ধের বিরল ঘোষণা দিয়েছিল সৌদি আরব। এর কয়েকদিন পর সৌদি নাগরিক ও বাসিন্দাদের জন্যও ওমরাহ্‌ হজ সাময়িক সময়ের জন্য স্থগিত করা হয়। মসজিদে নামাজ পড়া, এমনকি ঈদের জামাতের উপরেও বিধিনিষেধ ছিল। একই সময়ে সকল আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বাতিল করে দেশটি। সেখানে বিভিন্ন শহরে কারফিউ জারি ছিল। সৌদি আরব মাত্র কয়েকদিন আগে দেশব্যাপী লকডাউন প্রত্যাহার করে। হজ কী? ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের একটি হজ। ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী সামর্থ্য থাকলে এবং শরীর সুস্থ থাকলে প্রত্যেক মুসলমানের জন্য হজ অবশ্য পালনীয় বা ফরজ। বছরে একটা নির্দিষ্ট সময়েই হজ করা যায়। বাংলাদেশ থেকেও প্রতি বছর অনেক মানুষ হজ পালন করতে যান। বাংলাদেশ থেকে ২০২০ সালে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে হজে যাওয়ার কোটা এক লাখ ৩৭ হাজার।