ঐতিহাসিক উদ্‌যাপনে বাংলাদেশ

স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী, একই সঙ্গে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী। এই দুই মাহেদ্রক্ষণের ঐতিহাসিক উদযাপন করছে বাংলাদেশ। এই দুই উপলক্ষকে সামনে রেখে ১০দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য আয়োজনের উদ্বোধন হয়েছে গতকাল। দেশব্যাপী বিস্তর আয়োজনে এই দুই জোড়া উদযাপনের পরিকল্পনা থাকলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার সীমিতসংখ্যক অতিথি নিয়ে প্রতিদিনের কর্মসূচি পালন করা হবে। রাজধানীর জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে গতকাল বিকালে উৎসবের উদ্বোধন করা হয় শত কণ্ঠে জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে। অনুষ্ঠানে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট সরাসরি অংশ নেন। এছাড়া চীনা প্রেসিডেন্ট, জাপান ও কানাডার প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠান। রাতে সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় অংশ নেন বাংলাদেশ এবং ভারতের শিল্পীরা। বিকাল সাড়ে ৪টায় রাজধানীর প্যারেড স্কয়ারে ‘ভেঙেছ দুয়ার, এসেছ জ্যোতির্ময়’ শীর্ষক থিমে শুরু হয় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ। সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহামেদ সলিহ্‌। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, মালদ্বীপের ফার্স্টলেডি ফাজনা আহমেদ, প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ-পত্নী রাশিদা খানম, বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানাসহ মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, দেশি-বিদেশি আমন্ত্রিত অতিথি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, বিভিন্ন বাহিনী ও সংস্থা প্রধান, সামরিক ও বেসামরিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। শিশুশিল্পীদের সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত এবং এর পরপরই শত শিশুশিল্পীর সংগীত পরিবেশনার মাধ্যমে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হয়। মুজিববর্ষের থিমসংয়ের মিউজিক ভিডিও পরিবেশনার পর বিমানবাহিনী ফ্লাই পাস্টের রেকর্ড করা ভিডিও প্রচার করা হয়। অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথির বক্তব্য অংশে প্রচারিত হয় চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এবং জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদে সুগার ধারণ করা ভিডিওবার্তা। এরপর অনুষ্ঠানে উপস্থিত সম্মানিত অতিথি হিসেবে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহামেদ সলিহ্‌ বক্তব্য দেন। সম্মানিত অতিথিদের ‘মুজিব চিরন্তন’ শ্রদ্ধা-স্মারক উপহার দেয়ার পর সভাপতি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে আলোচনাপর্ব সমাপ্ত হয়। আলোচনাপর্বের পর শুরু হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পর্বে ‘ভেঙেছ দুয়ার এসেছ জ্যোতির্ময়’ থিমের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত অডিও-ভিজ্যুয়ালে তুলে ধরা হয় জাতির পিতার সংগ্রামী জীবনের নানা অধ্যায়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাদ্যযন্ত্র সহযোগে অর্কেস্ট্রা মিউজিকের সঙ্গে গান পরিবেশন, বঙ্গবন্ধুকে প্রতীকী চিঠি উৎসর্গ, ‘মুজিব শতবর্ষের কার্যক্রম ফিরে দেখা’ শীর্ষক ভিডিও প্রদর্শন করা হয়। এছাড়াও বঙ্গবন্ধুকে উৎসর্গ করে বন্ধুরাষ্ট্রের সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় প্রথম দিনের আয়োজনে ছিল ভারতের প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী মমতা শঙ্করের নেতৃত্বে একটি বিশেষ পরিবেশনা। বর্ণিল আতশবাজি ও লেজার শো’র মাধ্যমে শেষ হয় প্রথম দিনের জমকালো আয়োজন। বিকেল সাড়ে ৪টায় শুরু হওয়া এ অনুষ্ঠান শেষ হয় রাতে। বর্ণাঢ্য আয়োজনের এই উদ্বোধন অনুষ্ঠান সব টেলিভিশন ও বেতার চ্যানেল, অনলাইন মিডিয়া এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় সরাসরি সম্প্রচার করে। ১৭ই মার্চ থেকে ২৬শে মার্চ পর্যন্ত ‘মুজিব চিরন্তন’ প্রতিপাদ্যে প্রতিদিন আলাদা থিমভিত্তিক আলোচনা অনুষ্ঠান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, অডিওভিজ্যুয়াল এবং অন্য বিশেষ পরিবেশনার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করা হবে। আমাদের আলোর পথে নিয়ে এসেছেন বঙ্গবন্ধু: জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় কমিটির সভাপতি ও জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বলেছেন, আমরা তিমির রাত্রিতে অবস্থান করছিলাম, সেখান থেকে আমাদের আলোর পথে নিয়ে এসেছেন বঙ্গবন্ধু। সেজন্য আমাদের আজকের আয়োজন- ‘ভেঙেছ দুয়ার এসেছ জোতির্ময়, তোমারই হোক জয়।’ বঙ্গবন্ধু যেখানেই থাকো, তোমার জয় হোক। গতকালের অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, বাঙালি এক হতভাগ্য জাতি। শত শত বছর বিদেশি দ্বারা, বহিরাগতদের দ্বারা, বিদেশি ভাষার দ্বারা শাসিত, শোষিত, লাঞ্ছিত ও বঞ্চিত ছিল। এরপর দেশভাগের (ভারত-পাকিস্তান) পর পাকিস্তানের সঙ্গে গিয়ে দেখলাম সেটা মহা ফাঁকিস্তান। সেই দীর্ঘ তিক্ত অভিজ্ঞতা সহজে ভুলবার নয়। বহিরাগতরা আমাদের বারবার লুণ্ঠন করেছে। এমনকি পর্তুগিজ জলদস্যু, মারাঠা দস্যুরাও লুণ্ঠন করেছে। গোলামির জিঞ্জির থেকে মুক্ত করতে এক মহাপুরুষের আবির্ভাব ঘটলো। তিনি হলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু আমাদের মুক্তি দিলেন। বিনিময়ে তাকে সপরিবারে জীবন দিতে হলো। কিন্তু তিনি অমর হয়ে গেলেন। মানুষ একবারই মরে। কিন্তু তার কর্ম দ্বারা স্থির হয় তিনি অমর কি-না। তিনি আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। আমরা সেটা উপভোগ করছি। একটা পরাধীন জাতিকে গোলামির অভিশাপ থেকে মুক্ত করেছেন। এজন্য আমরা তার কাছে চিরঋণী। আল্লাহর কাছে তার জন্য মোনাজাত করি। রফিকুল ইসলাম আরো বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন সফল হতে চললো। এমতাবস্থায় তার জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করছি। আপনারা আমাদের সহযোগিতা করবেন। এই আয়োজনের জন্য মুখ্য সমন্বয়ক কামাল আবদুল নাসের চৌধুরীসহ পুরো টিমের অক্লান্ত পরিশ্রম ভুলবার নয়। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। বিকালে ধর্মীয় গ্রন্থ থেকে তেলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু করা হয়। এরপর মুজিব শতবর্ষের থিমসং উপস্থাপনা করা হয়। এটি লিখেছেন কবি কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী ও সুর করেছেন নকিব খান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এমপি। আপনার মতামত দিন প্রথম পাতা অন্যান্য খবর বাংলাদেশবিরোধী অপশক্তি এখনো দেশ-বিদেশে সক্রিয়: প্রধানমন্ত্রী