আল্লাহর ওপর পরিপূর্ণ আস্থা রাখার প্রতিদান

জীবনের প্রতিটি প্রয়োজন কিংবা সমস্যা সমাধানের বিষয়ে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও ভরসা রাখাকে তাওয়াক্কুল বলা হয়। মুমিনের জীবনাচারে তাওয়াক্কুল একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। যে মুমিন নিজের চিন্তা ও কর্মে আল্লাহর ওপর আস্থা রাখে, আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যান। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ভরসা করে, তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট।’ (সুরা তালাক, আয়াত : ৩)

বনি ইসরাঈলের এক ব্যক্তি ঋণ পরিশোধের মেয়াদসংক্রান্ত বিষয়ে আল্লাহকে সাক্ষীরূপে যথেষ্ট মনে করে তাঁর ওপর পূর্ণ তাওয়াক্কুল রেখেছিলেন। তিনি তার যথাযথ প্রতিদান দিয়েছেন। সহিহ বুখারির বর্ণনায় ঘটনাটি বিস্তারিত বিবৃত হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, বনি ইসরাঈলের কোনো এক ব্যক্তি বনি ইসরাঈলের অন্য এক ব্যক্তির কাছে এক হাজার দিনার ঋণ চাইল। তখন সে (ঋণদাতা) বলল, কয়েকজন সাক্ষী আনো, আমি তাদের সাক্ষী রাখব। সে বলল, সাক্ষী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট। তারপর (ঋণদাতা) বলল, তাহলে একজন জামিনদার উপস্থিত করো। সে বলল, জামিনদার হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট। ঋণদাতা বলল, তুমি সত্যই বলেছ। এরপর নির্ধারিত সময়ে তাকে এক হাজার দিনার দিয়ে দিল। তারপর ঋণগ্রহীতা সামুদ্রিক সফর করল এবং তার প্রয়োজন সমাধা করে সে যানবাহন খুঁজতে লাগল, যাতে সে নির্ধারিত সময়ের ভেতর ঋণদাতার কাছে এসে পৌঁছতে পারে। কিন্তু সে কোনো যানবাহন পেল না। তখন সে এক টুকরা কাঠ নিয়ে তা ছিদ্র করল এবং ঋণদাতার নামে একখানা পত্র ও এক হাজার দিনার তার মধ্যে রেখে ছিদ্রটি বন্ধ করে সমুদ্রতীরে এসে বলল, হে আল্লাহ! তুমি তো জানো আমি অমুকের কাছে এক হাজার দিনার ঋণ চাইলে সে আমার কাছে জামিনদার চেয়েছিল। আমি বলেছিলাম, আল্লাহই জামিন হিসেবে যথেষ্ট। এতে সে রাজি হয়। তারপর সে আমার কাছে সাক্ষী চেয়েছিল, আমি বলেছিলাম সাক্ষী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট, তাতে সে রাজি হয়ে যায়। আমি তার ঋণ (যথাসময়ে) পরিশোধের উদ্দেশ্যে যানবাহনের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি, কিন্তু পাইনি। তাই আমি তোমার কাছে সোপর্দ করলাম। এই বলে সে কাঠের টুকরাটি সমুদ্রে নিক্ষেপ করল। আর কাঠের টুকরাটি সমুদ্রে প্রবেশ করল। অতঃপর লোকটি ফিরে গেল এবং নিজের শহরে যাওয়ার জন্য যানবাহন খুঁজতে লাগল।

এদিকে ঋণদাতা এই আশায় সমুদ্রতীরে গেল যে হয়তো ঋণগ্রহীতা কোনো নৌযানে করে তার পাওনা সম্পদ নিয়ে এসেছে। তার দৃষ্টি কাঠের টুকরার ওপর পড়ল, যার ভেতরে পাওনা সম্পদ ছিল। সে কাঠের টুকরা তার পরিবারের জ্বালানির জন্য নিয়ে গেল। যখন সে তা চিরল, তখন সে মাল ও পত্র পেয়ে গেল। কিছুদিন পর ঋণগ্রহীতা এক হাজার দিনার নিয়ে এসে হাজির হলো এবং বলল, আল্লাহর কসম! আমি আপনার পাওনা দিনার যথাসময়ে পৌঁছিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে সব সময় যানবাহনের খোঁজে ছিলাম। কিন্তু আমি যে নৌযানে এখন এলাম, তার আগে আর কোনো নৌযান পাইনি। ঋণদাতা বলল, তুমি কি আমার কাছে কিছু পাঠিয়েছিলে? ঋণগ্রহীতা বলল, আমি তো তোমাকে বললামই যে এর আগে আর কোনো নৌযান আমি পাইনি। সে বলল, তুমি কাঠের টুকরার ভেতরে যা পাঠিয়েছিলে, তা আল্লাহ তোমার পক্ষ থেকে আমাকে আদায় করে দিয়েছেন। তখন সে আনন্দচিত্তে এক হাজার দিনার নিয়ে ফিরে চলে গেল। (বুখারি, হাদিস : ২২৯১)

এই হাদিসের শিক্ষা হলো, আল্লাহ তাআলা বান্দার প্রতি অনুগ্রহশীল ও তার হেফাজতকারী। সুতরাং কোনো ব্যক্তি যদি আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা রেখে সব বিষয় তার হাতে সোপর্দ করে, আল্লাহ তার জন্য রক্ষক ও যথেষ্ট হন। মহান আল্লাহ আমাদের চিন্তা ও কর্মে তাঁর ওপর পূর্ণ আস্থা রাখার তাওফিক দান করুন।