সুনামগঞ্জে ২১৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ, ভেসে গেছে মাছ

ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের নদ-নদী ও হাওরের পানি বেড়ে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। পানিবন্দি হয়েছে জেলার কয়েক হাজার মানুষ। রাস্তা-ঘাট ভেঙে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে হাওরবাসীদের। এতে করে সুনামগঞ্জ সদর, বিশ্বম্ভরপুর, ছাতক, দোয়ারাবাজার, দিরাই ও শাল্লা উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকার বাসা বাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। থাকা খাওয়াসহ ভোগান্তিতে পড়েছেন পানিবন্দী মানুষ। এছাড়া জেলার চার উপজেলার জেলা সদরের সাথে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

এদিকে পানিতে বাড়ি-ঘর তলিয়ে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানি সঙ্কট দেখা দিয়েছে। সবকটি উপজেলার মৎস্য চাষিদের খামার তলিয়ে ভেসে গেছে মাছ।

বুধবার (১৮ মে) বিকেলেও সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ১৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিলো। স্থানীয়রা জানান পাহাড়ি ঢলের পানি বাড়ছেই, কমছে না। প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। পানিতে তলিয়ে গেছে উচ্চ ফলনশীল বোরো ধান, বাদাম, কৃষি ফসল।

মৎস্য চাষি সিরাজ মিয়া বলেন, তার পাঁচটি পুকুরের মাছ ঢলের পানিতে ভেসে গেছে। তার মতো উপজেলার অধিকাংশ খামারির মাছ পানিতে ভেসে গেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত তারা। জেলার পাঁচটি উপজেলার ২১৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি প্রবেশ করায় বিদ্যালয় সাময়িক বন্ধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুর রহমান। এছাড়া ২৮টি বিদ্যালয়ে আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। পানি কমলে বিদ্যালয় খুলবে বলে জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সামসুদ্দোহা বলেন, সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতের মেঘালয়ে ২১৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বুধবার সন্ধা ৬টায় সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ১৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে দেখা গেছে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র এবং বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী আগামি ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন ভারতের আসাম, মেঘালয় ও হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা ও মিজোরাম প্রদেশের কতিপয় স্থানে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এতে করে মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদ-নদীসমূহের পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে এবং সুরমা, কুশিয়ারা, ভোগাই-কংস, ধনু-বাউলাই নদীর পানি সমতল কতিপয় পয়েন্টে দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে।

আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হতে পারে। সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, বন্যা দুর্গতদের জন্য ১৫ মেট্রিক টন চাল ও আড়াই লক্ষ নগদ টাকা, শুকনো খাবার ও রান্না করা খাবার দেওয়া হচ্ছে। সব ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে সরকারের পক্ষ থেকে সাহায্যের আওতায় নিয়ে আসা হবে।