বিয়ানীবাজারে নৌকা ডোবার নেপথ্যে জেলা আ.লীগ নেতা!

সিলেটের বিয়ানীবাজার পৌরসভা নির্বাচনে নৌকার ডোবার জন্য জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতাকে দায়ী করছেন নৌকার প্রার্থী বিদায়ী মেয়র মো. আব্দুস শুকুরের কর্মী-সমর্থকরা।

সরাসরি তারা দোষারোপ করছেন জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য সারওয়ার হোসেনকে। নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর বিজয়ী প্রার্থীকে মিষ্টি খাওয়ানোর ঘটনায় এমন অভিযোগ পায় ভিন্নমাত্রা।

তবে এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সারওয়ার হোসেন। তিনি বলেন, বিয়ানীবাজার পৌরবাসী ভোটাধিকারের মাধ্যমে তাদের আগামী দিনের মেয়র নির্বাচন করেছেন। বিদায়ী মেয়র ৫ বছর দায়িত্ব পালন করলেও তার জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন। এমনকি নিজের গ্রামের অধিকাংশ ভোটও পড়েছে তার বিপক্ষে। এ অবস্থায় নিজের ব্যর্থতা ঢাকতে আমাকে দোষারোপ করা হচ্ছে। নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় কোথাও আমি দলীয় প্রার্থী বা নৌকার বিপক্ষে কথা বলেছি এর প্রমাণ দিতে পারবে না। এ ধরনের অপপ্রচার থেকে বিরত থাকার জন্য তিনি সবার প্রতি আহবান জানান।

বুধবার অনুষ্ঠিত বিয়ানীবাজার পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকা বড় ব্যবধানে পরাজিত হয়েছে। এমনকি এ নির্বাচনী যুদ্ধে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পরিবেশ সৃষ্টিতে অনেকাংশেই ব্যর্থতা পরিলক্ষিত হয়েছে। বিপরীতে চমক সৃষ্টি করে বিপুল ভোটে জয়লাভ করে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত বহিষ্কৃত নেতা জিএস ফারুকুল হক।

দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের ভাষ্য, খোদ জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের পদধারী নেতারাও নৌকার বিপক্ষে অবস্থানে ছিলেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নির্বাচনে জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের পদধারী কতিপয় নেতা নানা কৌশলে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর বিরোধী হয়ে বিদ্রোহীকে জেতাকে ইন্ধন জুগিয়েছেন। এর মধ্যে জেলার আওয়ামী লীগের সদস্য সারওয়ার হোসেন নির্বাচনে ফলাফল ঘোষণা শেষে বিজয়ী প্রার্থীকে মিষ্টিমুখ করিয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন।

জনশ্রুতি রয়েছে, জেলা আওয়ামী লীগের ওই নেতা আগামী দিনে সিলেট-৬ (গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার) আসনে নৌকার টিকিটের দাবিদার। এই লক্ষ্যে তিনি বিগত কয়েক বছর ধরে বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জে কাজ করে আসছেন। সারওয়ার কানাডা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি থাকাকালে ২য় মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর থেকে তিনি দেশে অবস্থান করছেন। এরপর থেকে নানা বিতর্কে সৃষ্টি করেন।

গত উপজেলা নির্বাচনে বিয়ানীবাজারে নৌকার ভরাডুবি হয়। সে সময় আওয়ামী লীগ মনোনীত আতাউর রহমান খানের বিরুদ্ধ প্রার্থী হন বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য জাকির হোসেন ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম পল্লব। তিনি নৌকার প্রার্থীকে পরাজিত করে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

ওই সময়ও আওয়ামী লীগ নেতা সারওয়ারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠে। তাছাড়া উপজেলা নির্বাচনের মতো পৌর নির্বাচনেও পৌরসভার কোনো কেন্দ্রে নৌকা জয় পায়নি। এমনকি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এমপির কেন্দ্রে নৌকা বিপুল ভোটে পরাজিত হয়।

এদিকে বিয়ানীবাজার পৌরসভায় জামানত হারিয়েছেন ৭ জন মেয়র প্রার্থী। প্রদত্ত ভোটের এক-অষ্টমাংশের কম ভোট পেয়ে জামানত হারানো প্রার্থীরা হচ্ছেন- সাবেক পৌর প্রশাসক তফজ্জুল হোসেন (১৪৯৯ ভোট), আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত আহবাব হোসেন সাজু (১৪৬৩ ভোট), স্বতন্ত্র আব্দুস সামাদ আজাদ (১১৬৪ ভোট), আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত আব্দুল কুদ্দুছ টিটু (৬৭১ ভোট), স্বতন্ত্র প্রার্থী অজি উদ্দিন (২১৫ ভোট), জাতীয় পার্টির সুনাম উদ্দিন (১৩৮ ভোট) ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির আবুল কাশেম (১৭৩ ভোট)।

নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জিএস ফারুকুল হক। চামচ প্রতীকে তার প্রাপ্ত ভোট ৪১০০। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মোবাইল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুস সবুর পান ২৩১৮ ভোট। বিদায়ী মেয়র আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও নৌকা প্রতীকের মো. আব্দুস শুকুর পেয়েছেন ২২৭০ ভোট।