শিক্ষা ব্যবস্থা দলীয়করণের কারণে শিক্ষকরা লাঞ্চিত হচ্ছেন

শিক্ষা ব্যবস্থা দলীয়করণের কারণে শিক্ষকরা লাঞ্চিত হচ্ছেন

শিক্ষা ব্যবস্থা দলীয়করণের কারণে শিক্ষকরা লাঞ্চিত হচ্ছেন বলে মনে করেন বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্যরা।

তারা বলেছেন, দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চরম নৈরাজ্য চলছে। শিক্ষকদের ছত্র-ছায়ায় মাস্তানি করছে ছাত্ররা। তাদের হাতে শিক্ষকরা লাঞ্ছিত হচ্ছেন। দলীয়করণের কারণে এমন ঘটনা ঘটছে। এ সময় নড়াইলে অধ্যক্ষকে জুতার মালা পরানোসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষক লাঞ্চিত ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে বাজেট পাসের প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন তারা।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কী হচ্ছে? এ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আরেফিন সিদ্দিক বলেছেন, ‘ডাক্তার-প্রকৌশলী বানাচ্ছি, কিন্তু মানুষ বানাচ্ছি কতগুলো।’ দায়িত্ব তো উনিও এড়াতে পারেন না। উনি তো ঢাবির ভিসি ছিলেন। তার কোনো গবেষণা ছিল না। ডক্টর ডিগ্রি নেই, শুধুমাত্র রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ পেয়েছেন। সমস্যাটা এখানে। যখন যে দল ক্ষমতায় আসবে, সেই দলের শিক্ষকদের পদোন্নতি হবে। তাদের ছত্রচ্ছায়ায় একশ্রেণির ছাত্রনেতারা মাস্তান হয়ে যায়।

নড়াইলে অধ্যক্ষকে জুতার মালা পরানোর ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে ফিরোজ রশীদ বলেন, নড়াইলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে জুতোর মালা দিয়ে ঘুরানো হয়েছে। তাকে শারীরিক ভাবে লাঞ্চিত করা হয়েছে। সাভারে একজন শিক্ষককে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকারী কিশোর গ্যাংয়ের কাছে ‘দাদা’ বলে পরিচিত। ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা কমিটির সদস্য তার আত্মীয়, আরেকজন শিক্ষক তাকে প্ররোচিত করেছেন। সেই শিক্ষক আবার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। শিক্ষার জায়গাটা নষ্ট হয়ে গেছে।

মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে একই দলের ফখরুল ইমামের সমালোচনার জবাবে ফিরোজ রশীদ বলেন, ধর্মীয় শিক্ষা নিয়ে তো কথা বাড়ানোর দরকার নেই। হাফপ্যান্ট আর গেঞ্জি পরিয়ে ছেড়ে দেবেন। এই দেশে এটা তো হবে না। এগুলো বাদ দিয়ে আসল শিক্ষায় আসেন। শুধু শিক্ষার মান নয়, নৈতিকতাও কমেছে। শিক্ষার মানোন্নয়নের পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটিকেও শক্ত হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

বিএনপির হারুনুর রশীদ বলেন, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শিক্ষা র‌্যাংকিংয়ে আমরা কোন জায়গায় আছি? পাঁচ হাজারের মধ্যেও নেই। এরপর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো দলীয় প্রভাবে চলছে। এবিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষা খাতের উন্নয়নে পদক্ষেপ নিতে হবে।

তিনি আরো বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মান নিচে নেমে গেছে। সবক্ষেত্রে অবক্ষয়ের চূড়ান্ত পর্যায়ে আছি। এর কারণ জবাবদিহিতার অভাব। তিনি বেসরকারি শিক্ষায় করারোপ প্রত্যাহারের দাবি জানান।

ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, শিক্ষার ক্ষেত্রে মানটাই বড় সমস্যা। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার জরিপে দেখা যায়, শিক্ষার মানে ক্রম অবনমন। র‌্যাংকিংয়ে ধস নেমেছে। বর্তমান সরকার দীর্ঘ দিন ক্ষমতায় থাকলেও আন্তর্জাতিক র‌্যাংকিংয়ের জন্য কোন সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি।

মুজিবুল হক বলেন, বিবিএসের রিপোর্ট অনুযায়ী প্রতি বছর বাংলাদেশে প্রায় ১৮-২০ লাখ নতুন চাকরিপ্রত্যাশী জব মার্কেটে প্রবেশ করেন। তারমধ্যে দেশ-বিদেশ মিলিয়ে ৫-৬ লাখের কর্মসংস্থান হয়। বাকি সবাই থাকে বেকার। এই বেকারের মধ্যে শিক্ষিত বেকার। যে শিক্ষা ব্যবস্থায় বেকারত্ব তৈরি করে, কর্মবিমুখ যে শিক্ষা ব্যবস্থা, সেই শিক্ষা ব্যবস্থা আমরা কেন রাখবো? কর্মবিমুখ শিক্ষা ব্যবস্থাকে পরিবর্তন করে কর্মমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা চালুর দাবি জানান তিনি।