ছাতকে দুই এসএসসি পরীক্ষার্থীর মারামারি, আহত ৩০

সুনামগঞ্জের ছাতকে নাহিদ ও মারুফ নামে দুই এসএসসি পরীক্ষার্থীর মধ্যে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে।

মঙ্গলবার বিকা‌লে উপজেলার গোবিন্দগঞ্জ কলেজ সংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। দেড় ঘন্টাব্যাপী ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় মধ্যস্থকারী, পথচারীসহ উভয়পক্ষের অন্তত ৩০ জন ব্যক্তি আহত হয়েছেন।

জানা যায়, মঙ্গলবার উপজেলার গোবিন্দগঞ্জ-সৈদেরগাঁও ইউনিয়নের আয়াজুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ে এসএসসি পরীক্ষা শেষে কেন্দ্র থেকে বের হয়ে বুড়াইরগাঁও এলাকায় পৌঁছা মাত্র দুই পরীক্ষার্থীর মধ্যে পূর্ব বিরোধ নিয়ে বাকবিতণ্ড হয়। এক পর্যায়ে তারা মারামারি শুরু ক‌রেন।

প্রথম দফা মারামারি শেষে গোবিন্দগঞ্জে ফেরার পর ওই দুই ছাত্র ও তাদের পক্ষের লোকজনরা ফের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু করে । এসময় স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে দ্রুত তারা তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে বাধ্য হন। পথচারীরা এসময় দিকবিদিক ছুটাছুটি করে নিরাপদ আশ্রয় খোঁজতে থাকে।

ট্রা‌ফিক পয়েন্ট এলাকা থেকে সব ধরণের যানবাহন চালকরাও নিরাপদ আশ্রয়ে নিতে দেখা গেছে। সিলেট-সুনামগঞ্জ ও ছাতক সড়কে প্রায় ঘন্টা সব ধরণের যানচলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। ঘন্টাব্যাপী ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা থামাতে গিয়ে মধ্যস্থকারী, পথচারীসহ দুই পক্ষের অন্তত ৩০ ব্যক্তি আহত হয়েছে।

মধ্যস্থকারী সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোস্তাকিম আহমদকে ছাতক স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পারভেজ নামের এক এসএসসি পরিক্ষার্থীকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যান্য আহতদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। 

এ খবর পেয়ে ছাতক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুর রহমান, থানার উপ-পরিদর্শক মহিন উদ্দিনসহ একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে দুই পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়ে‌ছেন।

পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। ইট পাটকেল ছাড়াও দুই পক্ষের লোকজনের হাতে রামদাসহ ধারালো অস্ত্র দেখা গেছে।

আহত গোবিন্দনগর গ্রামের আশরাফ আলীর পুত্র ও গোবিন্দগঞ্জ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মানবিক বিভাগের এসএসসি পরিক্ষার্থী মারুফ আহমদ জানান, গত মঙ্গলবার সকালে কেন্দ্রে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য গেলে তকিপুর গ্রামের এসএসসি পরীক্ষার্থী আজিজ এবং তার সাথে থাকা অন্যরা তাকে গত সোমবার কেন গালাগাল করে এ বিষয়ে জানতে চায়। পরে সে কাউকে গালাগাল করেনি বলে জানিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করেছিল। পরীক্ষা দিয়ে সহপাঠী আল আমিনকে সাথে নিয়ে বের হয়ে অটোরিকশা যোগে তার বাড়ি ফেরার পথে আজিজসহ গংরা তাকে রাস্তায়  গতিরোধ করে মারধর করে।

পরে অন্য অটো রিকশা যোগে গোবিন্দগঞ্জ কলেজ এলাকায় পৌঁছার পর তার স্কুলের শিক্ষক ফজলুল করিম বকুল তাকে নিরাপদে নিয়ে যান। এদিকে, আজিজের সাথে যোগাযোগ করে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

মধ্যস্থতা করতে গিয়ে আহত হয়েছেন হাসপাতালে ভর্তি সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোস্তাকিম আহমেদ রায়হান। 

তিনি বলেন,এসএসসি পরিক্ষার্থী গোবিন্দনগর গ্রামের মারুফ ও পুরানবাজার মাধবপুরের নাহিদের মধ্যে মারামারি হয়।

বুড়াইরগাঁও এলাকায় প্রথম দফা ও দ্বিতীয় দফা ঘটনা ঘটেছে গোবিন্দগঞ্জ কলেজ গেট এলাকায়। এমন খবর পেয়ে মধ্যস্থতা করতে যাই। এসময় গোবিন্দগঞ্জ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক ফজলুল করিম বকুল আহত মারুফকে সাথে নিয়ে স্কুলে যাচ্ছিলেন। আমাকেও স্কুলে যাওয়ার জন্য তিনি বলায় আমিও তার পিছনে যাচ্ছিলাম। কিন্তু আল্লাহু চত্ত্বর এলাকায় পৌঁছার আগেই চিহ্নিত অস্ত্রধারীরা হঠাৎ অতর্কিত হামলা চালিয়ে রক্তাক্ত করে‌। 

এ ব‌্যাপা‌রে থানার উপ-পরিদর্শক, গোবিন্দগঞ্জ-সৈদেরগাঁও ইউনিয়নের বিট অফিসার মুহিন উদ্দিন বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে নাহিদ ও মারুফ নামের দুই এসএসসি পরিক্ষার্থীদের মধ্যে কথা কাটাকাটি এবং পরে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছিল।