সুনামগঞ্জের বোরো ফসল রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় কাবিটা (কাজের বিনিময়ে টাকা) নীতিমালায় প্রতি বছরের ন্যায় বাঁধ নির্মাণ ও মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে। তবে গেল বছরের ন্যায় এবারও বাঁধের অতিরিক্ত প্রকল্প (অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প) নিয়ে হাওরেরপাড়ে আলোচনা হচ্ছে।
শনিবার (৭ জানুয়ারি) জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার দেখার হাওরে বাঁধ পরিদর্শনে গিয়ে প্রস্তাবিত পাঁচ প্রকল্পের প্রায় ১ কোটি টাকার বাঁধ নির্মাণকাজের প্রকল্প বাতিলের নির্দেশ দিয়েছেন ফসলরক্ষা বাঁধ বাস্তবায়ন ও মনিটরিং জেলা কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী।
স্থানীয়রা জানান, দেখার হাওরের মাঝখানে নতুননগর থেকে পলিরচর পর্যন্ত ২০১৭ সালে প্রথম বাঁধ নির্মিত হয়েছিল। এটি হাওরের বোরো ফসল রক্ষায় অকাল বন্যা ও পাহাড়ি ঢল ঠেকাতে কাজে লাগছে না। এটি কেবল ফসল কেটে ঘরে নেওয়ার ক্ষেত্রে কাজে লাগে। তাই প্রকল্পটি পরিদর্শনকালে বাতিলের নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
পানি উন্নয়ন বোর্ড দোয়ারা বাজার উপজেলার উপসহকারী প্রকৌশলী (শাখা কর্মকর্তা) আবু সায়েম বলেন, দেখার হাওরের প্রকল্পগুলো দেওয়ার সময়ই ফসল বহন করার কাজে লাগবে উল্লেখ করে প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। পাঁচটি প্রকল্পে এখানে ৯৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছিল। পিআইসি গঠন ও প্রকল্পগুলো অনুমোদন হয়নি। জেলা প্রশাসক সরেজমিনে দেখে বলেছেন, এই প্রকল্পটি এবার না হলেও চলবে। প্রকল্পগুলো নিয়ে জেলা কমিটির সভায় কথা বলবেন।
শুধু দোয়ারা বাজার উপজেলা নয় একইভাবে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় প্রায় ছয় কোটি টাকার প্রকল্পসহ বিভিন্ন উপজেলার কমগুরুত্বপুর্ন নতুন বাঁধ নির্মাণ আটকে দিয়েছেন জেলা প্রশাসক। সদর উপজেলায় বিগত বছরগুলোর চেয়ে এই বছরে দ্বিগুণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল। এ নিয়ে গত কয়েকদিন স্থানীয় গণমাধ্যমে সংবাদও ছাপা হয়। জেলা প্রশাসক ৭১ প্রকল্পের ৩০টি প্রকল্পের কাজ না করে আরও যাচাই-বাছাই করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।
জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বলেন, হাওরে বোরো ফসলরক্ষা বাঁধ নীতিমালার আলোকেই নির্মাণ করা হবে। অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণ করে সরকারি অর্থের অপচয় করতে দেওয়া হবে না। কেবল হাওরের ফসল রক্ষার প্রয়োজনেই বাঁধ হবে। দেখার হাওরে কয়েকটি প্রকল্প বাতিলের জন্য মৌখিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যেহেতু প্রকল্প অনুমোদন ও বাতিলের ক্ষমতা জেলা কমিটির। মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) জেলা কমিটির সভায় বিষয়টি উত্থাপন করা হবে।
সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্তৃপক্ষরা জানান, সুনামগঞ্জে চলতি বোরো মৌসুমে ২ লাখ ২৩ হাজার ৩০০ হেক্টর জমি চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ১৩ লাখ মে. টন। এই ফসলরক্ষায় জেলার ১৩৭টি হাওরের মধ্যে ৪৮টি হাওরে বাঁধ নির্মাণ ও মেরামত কাজ করা হবে। স্থানীয় কৃষকদের দিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠন করে কাজ বাস্তবায়ন করবে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন। কাজের মেয়াদ ১৫ ডিসেম্বর থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
ইতোমধ্যে উপজেলা কমিটি থেকে ৯১৩টি প্রকল্প প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মধ্যে জেলা কমিটি থেকে ৫৮০টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত কাজ শুরু হয়েছে মাত্র ১৭০টির। এবার ৬২৫ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারে ১৭০ কোটি টাকার প্রাক্কলন তৈরি করা হয়েছে। বরাদ্দ অনুমোদন হয়ে গেছে ১০০ কোটি টাকা। ছাড় হয়েছে ২৫ কোটি টাকা।
মন্তব্য