আন্তর্জাতিক ডেস্ক : শুধু আশ্বাসের ভিত্তিতে উত্তর কোরিয়াকে অপ্রত্যাশিত ছাড় দিয়ে প্রবল চাপের মুখে পড়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিশেষ করে দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে যৌথ সামরিক মহড়া বন্ধ রাখায় আঞ্চলিক সহযোগীরা দুশ্চিন্তায় পড়েছে।
মঙ্গলবার ট্রাম্প-কিম শীর্ষ বৈঠককে উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম বিপুল সাফল্য হিসেবে তুলে ধরেছে। বিশেষ করে ট্রাম্প দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে যৌথ সামরিক মহড়াকে ‘প্ররোচনা হিসেবে স্বীকার করে তা বন্ধ রাখার যে ইঙ্গিত দিয়েছেন, সেই বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। কোরীয় উপদ্বীপে শান্তি ও সমৃদ্ধির নতুন যুগের সম্ভাবনাকে ঘিরেও সে দেশে বিপুল প্রত্যাশা জেগে উঠছে।
উত্তর কোরিয়ার প্রাপ্তিতালিকা আরও দীর্ঘ। কোরীয় উপদ্বীপে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের অঙ্গীকার করে সে দেশ নিরাপত্তা নিশ্চয়তার প্রতিশ্রুতি আদায় করতে পেরেছে। সম্পর্কের উন্নতি হলে নিষেধাজ্ঞাও তুলে নেয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন ট্রাম্প। যথেষ্ট অগ্রগতি হলে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে মার্কিন সৈন্যও প্রত্যাহার করতে চান তিনি। উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা কেসিএনএ ফলাও করে বিষয়গুলো উল্লেখ করেছে।
কোনো স্পষ্ট অগ্রগতি ছাড়াই উত্তর কোরিয়ার প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের এমন নরম মনোভাবের কড়া সমালোচনা শোনা যাচ্ছে। বিশেষ করে ট্রাম্প যেভাবে দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে সামরিক মহড়া বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তের পক্ষে ব্যয়ভারের বিষয়টি তুলে ধরেছেন, আমেরিকায় অনেক মহল তার ফলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।
পুরো অঞ্চলে মার্কিন স্বার্থ বজায় রাখতে দক্ষিণ কোরিয়ায় মার্কিন সৈন্যদের উপস্থিতির গুরুত্বের কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন রিপাবলিকান দলের সংসদ সদস্য লিন্ডসে গ্রাহাম। উল্লেখ্য, ১৯৫০-৫৩ সালের কোরিয়া যুদ্ধের পর থেকে প্রায় ২৮ হাজার ৫০০ মার্কিন সৈন্য দক্ষিণ কোরিয়ায় মোতায়েন রয়েছে।
সিঙ্গাপুর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ফেরার পথে ট্রাম্প নিজে এক টুইট বার্তায় শীর্ষ বৈঠকের সাফল্য তুলে ধরেছেন। তার মতে, পথিবী এক পরমাণু বিপর্যয় থেকে পিছিয়ে এসেছে। তিনি কিম জং উনের প্রশংসা করে লেখেন, তিনি তার দেশের মানুষের জন্য উজ্জ্বল ভবিষ্যতের পথে প্রথম সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইনের সরকারও সামরিক মহড়া বন্ধ রাখার আচমকা ঘোষণার ফলে বিস্ময় প্রকাশ করেছে। সে দেশের অনেক বিশেষজ্ঞ বলছেন, উত্তর কোরিয়া তার উদ্দেশ্য পূরণ করতে পেরেছে।
পরমাণু শক্তিধর দেশ হিসেবে সমান মর্যাদা নিয়ে তারা মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে সামরিক মহড়া বন্ধ করাতে সফল হয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বুধবার সিউলে পৌঁছাচ্ছেন।
বৃহস্পতিবার তিনি প্রেসিডেন্ট মুন এবং পরে দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে উত্তর কোরিয়া সম্পর্কে ট্রাম্প প্রশাসনের অবস্থান তুলে ধরবেন। এই দুই সহযোগী দেশকে আশ্বস্ত করতে মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় মঙ্গলবারই এক বিবৃতি প্রকাশ করেছিল।
বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, উত্তর কোরিয়ার নেতাকে সৌজন্য, প্রশংসা ও একতরফা ছাড় দিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প উত্তর কোরিয়ার উপর নতুন চাপ তৈরি করেছেন। এতকাল শুধু সে দেশের উপরেই নানা পদক্ষেপ নেয়ার জন্য চাপ তৈরি করা হতো।
তারা বলছেন, ট্রাম্প কিম জং উনের প্রতি আস্থা দেখিয়ে তাকে পরমাণু অস্ত্র ত্যাগ করতে উদ্বুদ্ধ করতে চান। কিম জানেন, তিনি সেই পথে অগ্রসর না হলে ট্রাম্প ক্রোধের বশে অনেক কিছু করে বসতে পারেন। ট্রাম্প সম্প্রতি জি-সেভেন গোষ্ঠীর ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের প্রতি যে আচরণ করেছেন, তার আলোকে চট করে তাকে ক্ষুব্ধ করতে চাইবেন না কিম, এমনটা আশা করছেন অনেকে। ডিডব্লিউ।
মন্তব্য