যেভাবে নারী দিবসে যুক্ত হলো বেগুনি রং

প্রতি বছরের ৮ মার্চ বিশ্বব্যাপী পালিত হয় আন্তর্জাতিক নারী দিবস। নারী-পুরুষের সমতার লক্ষ্যেই ও নারী প্রতি সম্মান প্রদর্শনেই প্রতিবছর এই দিবস পালিত হয়ে আসছে।

তবে আন্তর্জাতিক এই দিবসের সঙ্গে বেগুনি রঙের কী সম্পর্ক, সে বিষয়ে কখনও ভেবে দেখেছেন? প্রতিটি দিবসে আলাদা রঙের প্রতীক হওয়ার পেছনেও আছে ভিন্ন ইতিহাস। নারী দিবসের প্রতীক হলো বেগুনি রং। আর এ রঙের পেছনেও রয়েছে ইতিহাস।

বিশ শতকের শুরুতে বেগুনির সঙ্গে সাদা ও সবুজ রং ব্যবহার করতেন নিজেদের ভোটাধিকার আদায়ের লক্ষ্যে পথে নামা ব্রিটেনের নারীরা। তারা বলতেন, বেগুনি আভিজাত্যের প্রতীক। সাদা শুদ্ধতার এবং সবুজ আশার প্রতীক। তাই আনুষ্ঠানিকভাবে বেগুনি নারী দিবসের রং হলেও অলিখিতভাবে সাদা আর সবুজও মিশে আছে নারী দিবসের সঙ্গে। শুধু তা-ই নয়, লাল আর নীলের মিশ্রণে বেগুনি। লাল বিপ্লবের প্রতীক। সেই বিপ্লবে মিশে আছে নীলের বিষাদ। তাই নারী দিবসের বেগুনি পালকে আছে সবুজ, সাদা, লাল ও নীল-এই পাঁচ রং।

এদিকে বিভিন্ন পণ্যে ব্যবহৃত রং নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান প্যানটোন। রঙের মিশ্রণ করা এবং রং মেলানোর মেশিন তৈরির জন্য প্রতিষ্ঠানটি সুপরিচিত। ২০১৮ সালে প্যানটোন বেগুনিকে বর্ষসেরা রঙের খেতাব দেয়। তবে এটি আমাদের চোখে দেখা বেগুনি রং নয়। এই বেগুনি হচ্ছে অতিবেগুনি রশ্মি।

মহাকাশের অজানার অস্তিত্ব বহনকারী রশ্মিকে সম্মান করতে বেগুনিকে বর্ষসেরা রঙের খেতাব দেওয়া হয়। প্যানটোনের ভাষ্য, বেগুনি মানে মহাকাশের মতো অসীম এবং তা থেকে নতুন কিছু পাওয়ার সম্ভাবনা।

আর প্যানটোনের দেওয়া এই ধারণাই লুফে নেয় আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদ্‌যাপন কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আগেও বেগুনিকে বহুবার ব্যবহৃত করেছে সমানাধিকারের প্রতীক হিসেবে। বিংশ শতকের শুরুতে ব্রিটেনের নারীরা যখন নিজেদের ভোটাধিকার আদায়ের জন্য পথে নেমেছিলেন, তারাও বেগুনি রঙকেই প্রাধান্য দিয়েছিলেন। তারা বেগুনির সঙ্গে সাদা ও সবুজকে ব্যবহার করতেন নিজেদের অধিকারের কথা তুলে ধরতে।

নারীদের অধিকার আদায়ের যুদ্ধ শুধু অভিজাত নারীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। পরবর্তীতে আমেরিকান লেখক অ্যালিস ওয়ার্কার আফ্রিকান আমেরিকান নারীদের বৈষম্য নিয়ে একটি বই লেখেন, নাম ‘দ্য কালার পার্পেল’ (বেগুনি রংটি) বইটির জন্য অ্যালিস প্রথম অশ্বেতাঙ্গ নারী হিসেবে পুলিৎজার পুরস্কার পান।

ইতিহাসের সঙ্গে মিলিয়ে সে বছর থেকেই নারী দিবসের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্ত হয় বেগুনি রংটি। ২০১৮, ২০১৯, ২০২০, ২০২১, ২০২২ ও ২০২৩- এই ছয় বছর বেগুনিকে নারী দিবসের রং হিসেবে বেছে নিয়ে উদ্‌যাপিত হয়েছে। আজও এর ব্যতিক্রম নয়। সমানাধিকারের প্রতীক হিসেবে আরও বহুবার বেগুনিকে ব্যবহার করা হয়েছে।