উত্তপ্ত রাবি ক্যাম্পাস, ভিসি অবরুদ্ধ

উত্তপ্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। মুখোমুখি শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা। শিক্ষার্থীরা নানা কর্মসূচি পালন করছে। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে সকল ধরনের ক্লাস ও পরীক্ষা। শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে তালা লাগিয়ে দিয়েছে। পদত্যাগ দাবি করেছে প্রক্টরের। অবরুদ্ধ করে রাখে ভিসিকে। শনিবার বাসের সিটে বসাকে কেন্দ্র করে ড্রাইভারের সঙ্গে কথা কাটাকাটির জের ধরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর থমথমে ক্যাম্পাস। সংঘর্ষে ৫ সাংবাদিকসহ কমপক্ষে ৩ শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে দু’দিনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ করা হয়েছে। 

ওদিকে, হামলার প্রতিবাদে শনিবার রাত ১১টার দিকে স্থানীয়দের দোকান ভাঙচুর ও আগুন লাগিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীএ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। গতকাল সকাল থেকে থমথমে পরিবেশ বিরাজ করলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উত্তপ্ত হতে থাকে ক্যাম্পাস। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনিক ভবনে তালা লাগিয়ে আন্দোলন করতে থাকে শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করেন। ঘণ্টাখানেক পর ক্যাম্পাসের প্রধান সড়কগুলোতে মিছিল করে ভিসি’র বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন তারা। কিছুক্ষণ পর ভিসি অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার সেখানে উপস্থিত হন। এ সময় শিক্ষার্থীরা তাকে বিনোদপুর সংঘর্ষের ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের সঙ্গে মানববন্ধনে অংশ নেয়ার দাবি জানান। এতে সম্মত না হলে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা তাকে অবরুদ্ধ করে রাখে। সেখানে শিক্ষার্থীরা ভিসি ও প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। প্রায় দুই ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর রাবি শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি গোলাম কিবরিয়া ও সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু’র প্রটোকলে ভিসি নিজ বাসভবনে যেতে সক্ষম হন। সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলছেন, আমাদের দাবিগুলোর তোয়াক্কা না করেই ছাত্রলীগ প্রটোকল দিয়ে ভিসিকে বাসভবনে পৌঁছে দিয়েছে। তার মানে ৩ শতাধিক শিক্ষার্থীর রক্ত বৃথা করে দিলো ছাত্রলীগ। একই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রধান ফটকে অবস্থান নেন শতাধিক শিক্ষার্থী। এ সময় তারা ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে গাছ, কাঠ ও টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করে। তাদের বিপরীত পাশে অবস্থান নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা। এর আগে, শনিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে স্থানীয়দের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হলে রাত ১০টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে অনিবার্য কারণ দেখিয়ে ২ দিনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেয় ভিসি অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার। 

উল্লেখ্য, বগুড়া থেকে ‘মোহাম্মদ’ নামের একটি বাসে রাজশাহী আসছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আলামিন আকাশ। আসনে বসাকে কেন্দ্র করে বাসের চালক শরিফুল ও চালকের সহকারী রিপনের কথাকাটাকাটি হয়। পরে বাসটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর ফটকে পৌঁছালে রিপনের সঙ্গে ওই শিক্ষার্থীর আবার বাকবিতণ্ডা হয়। এ সময় স্থানীয় এক দোকানদার এসে শিক্ষার্থীর সঙ্গে তর্কে জড়ান। এ সময় উভয়ের মধ্যে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। এ সময় সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে জড়ো হয়ে ওই দোকানদারের ওপর চড়াও হন। একপর্যায়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা একজোট হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। শিক্ষার্থীরাও পাল্টা ধাওয়া করেন। এতে উভয়পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।