সিলেটে যে কারণে পরীক্ষায় আনোয়ার

কেন্দ্রের ‘গ্রিন সিগন্যাল’ পেয়ে নির্বাচনের মাঠে নামা যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী সহজেই ছাড় পাচ্ছেন না। বরং তার সঙ্গে মাঠে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলেছেন সিলেট আওয়ামী লীগের অন্য প্রার্থীরা। তারাও মাঠে সক্রিয় হয়ে উঠছেন। নানা ইস্যু নিয়ে নিজেদের পক্ষে ‘জনমত’ গড়তে কথাও বলছেন। এক্ষেত্রে সিলেটের রাজনীতির মাঠে কঠিন পরীক্ষা দিতে হচ্ছে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে। তবে- দমে নেই তিনি। বাড়িয়েছেন গতি। দলীয় নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের মুল স্রোত নিজের পক্ষে নেয়া আনোয়ারুজ্জামানের জন্য চ্যালেঞ্জের। সেটির ধারে-কাছেও তিনি পৌঁছাতে পারেননি। মাঠে নামার দুই মাস হতে চললেও একই বৃত্তে ঘুরসহসাই এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে না পারলে সামনে আরও কঠিন সময় অপেক্ষা করছে তার জন্য। তারা জানিয়েছেন, মেয়র নির্বাচনের আগে সিলেট আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ করা প্রয়োজন। মনোনয়নকেন্দ্রিক দলীয় বিভেদ রেখে নির্বাচনে গেলে বিগত দুই টার্মের নির্বাচনের মতো ফলাফল একই হতে পারে। কামরানের মতো পরিণতি হতে পারে দলীয় প্রার্থীর। সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন হতে পারে জুন-জুলাইয়ে। নির্বাচন কমিশন থেকে ইতিমধ্যে এ আভাস পাওয়া গেছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে বর্তমান পরিষদের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। এই অবস্থায় সিলেট আওয়ামী লীগে আগে থেকেই নির্বাচনী তোড়জোড় শুরু হয়েছে। গত ২২শে জানুয়ারি যুক্তরাজ্য থেকে সিলেটে এসে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়ে মাঠে নামেন যুক্ত্যরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। এরপর তিনি ঢাকায় গিয়ে প্রধানমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে দেখা করে আসেন। তবে- তার আগে থেকেই মাঠে সরব ছিলেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আসাদ উদ্দিন আহমদ, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, যুগ্ম সম্পাদক এটিএম হাসান জেবুল, আজাদুর রহমান আজাদ, সাংগঠনিক সম্পাদক ও কামরানপুত্র ডা. আরমান আহমদ শিপলু, মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাংস্কৃতিক সম্পাদক প্রিন্স সদরুজ্জামান। আনোয়ার মাঠে নামার পর প্রার্থিতা ঘোষণা করে মাঠে নামেন আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। এত প্রার্থী থাকার পরও নতুন করে আনোয়ার সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মাঠে নামায় তোলপাড় শুরু হয়। ‘কম্পন’ দেখা দেয় সিলেটের রাজনীতিতে। সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ এখন ঐক্যবদ্ধ। এই ঐক্যবদ্ধতার মধ্যে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলকে সঙ্গে নিয়ে আনোয়ার মাঠে নামেন। এতে করে সিলেট আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা বেঁকে বসেন। তারা হঠাৎ করে সিটি নির্বাচনে আনোয়ারের পথচলাকে সহজভাবে নেননি। এই অবস্থা এখনো বিরাজমান। বরং এই দূরত্ব, দ্বন্দ্ব আরও বেড়েছে। প্রার্থিতা নিয়ে রীতিমতো চলছে প্রতিযোগিতাও। 

আনোয়ারুজ্জামান মাঠে নামার পরপরই অন্য প্রার্থীরা প্রচার প্রচারণায় গতি বাড়িয়েছেন। তারাও আনোয়ারের মতো সিলেটে পোস্টারিং, ব্যানার করে চলেছেন। প্রতিদিন তারাও রাজনৈতিক ও সামাজিক অনুষ্ঠান নিয়ে ব্যস্ত থাকছেন। বরং আনোয়ার ইস্যুতে সিলেটের নেতাদের মধ্যে প্রার্থিতা ঘোষণাকারীদের বিবদমান দ্বন্দ্ব কমে এসেছে। আওয়ামী লীগ নেতা ও সিটি নির্বাচনের সম্ভাব্য এক প্রার্থী গতকাল বিকালে মানবজমিনকে জানিয়েছেন, পরিস্থিতি এখন এমন হয়েছে যে; সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা চাইছেন- আনোয়ার ছাড়া তাদের যে কাউকে প্রার্থী দিলে তারা ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে থাকবেন। তবুও আনোয়ারকে তারা মেনে নেবেন না। ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় তারা প্রকাশ্য বলতে শুরু করেছেন। 

ওই নেতা জানিয়েছেন, আনোয়ার উপর থেকে এসে জুড়ে বসতে চাইছেন। অথচ ‘গ্রিন সিগন্যাল’ পেলে তার উচিত ছিল আগে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বসে সবকিছু ঠিকঠাক করা। সেটি না করে আনোয়ার এককভাবে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে শোডাউনসহ নানা কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছেন। এ কারণে এখন নতুন করে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলা আনোয়ারুজ্জামানের জন্য কঠিন হয়ে পড়ছে। তিনি চেষ্টা করে সেটি করতে পারছেন না বলে জানান ওই নেতা। আর বিষয়টিও কেন্দ্রীয় নেতারা পর্যবেক্ষণ করছেন। তবে, ইতিমধ্যে অনেক ক্ষেত্রে সফল আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। সিলেটে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সিনিয়র পর্যায়ের নেতারা ছাড়া আওয়ামী লীগের মাঝারি সারির অনেক নেতা, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীদের কাছে টেনে নিয়েছেন। এর বাইরেও সিলেট-১ আসনের এমপি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনকে নিয়ে সিলেটে বড় অনুষ্ঠান করেছেন। এতে মন্ত্রীরও প্রশংসা পেয়েছেন তিনি। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অনুগত নেতা হিসেবে আগে আজাদুর রহমান আজাদকে জানতেন সবাই। কিন্তু আনোয়ার সেই জায়গায় সফল হয়েছেন বলে নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন। বিএনপি দলীয় মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের নানা সমালোচনা মাঠে নেমেই করছেন আনোয়ার। নতুন করে ইস্যুভিত্তিক সমালোচনা করছেন অন্য প্রার্থীরা। 

ইতিমধ্যে মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী আসাদউদ্দিন আহমদ নগরে মশার উপদ্রপ নিয়ে মেয়র আরিফের সমালোচনা করে বিবৃতি দিয়েছেন। তার এই বিবৃতির পর নগরের ধুলোসহ অপরিকল্পিত উন্নয়ন নিয়ে সমালোচনা করেছেন কামরানপুত্র ডা. আরমান আহমদ শিপলু। ভার্চ্যুয়ালি এ লড়াইয়ে পাল্টাপাল্টি চলছে। ফলে সিলেট আওয়ামী লীগ থেকে সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় নেতারা সহজেই ছাড় দিচ্ছেন না আনোয়ারুজ্জামানকে। এতে করে কিছুটা নিজ দলেই প্রতিরোধের মুখে আনোয়ার। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে তার অনুসারীরাই আলোচনা করছেন। এর থেকে উত্তরণের জন্য তারাও চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। তবে আনোয়ারের অনুসারীদের দাবি হচ্ছেÑ সিলেট আওয়ামী লীগে ধীরে ধীরে বলয় বড় হচ্ছে আনোয়ারের। সিটি নির্বাচনে আনোয়ার নৌকার টিকিট পেলে মনোনয়নকেন্দ্রিক দূরত্ব কিংবা দ্বন্দ্ব থাকারা।  পাক খাচ্ছেন তিনি।