বিএনপির সিদ্ধান্ত মানছেন না সিলেটের নেতাকর্মীরা

বর্তমান সরকারের অধিনে কোন নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপি। তবে এই সিদ্ধান্ত মানছেন না দলটির নেতাকর্মীরা। তারা নির্বাচনমুখী। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে মরিয়া তারা। মনোনয়নপত্র সংগ্রহ থেকে জমা দেয়া, এমনকি প্রচারাণাও চালিয়ে যাচ্ছেন বেশ জোরেশুরে। আর তাদের এই বর্জন-গ্রহণ নিয়ে সিলেটজুড়ে চলছে তুমুল আলোচনা সমালোচনা।

এই সরকারের অধিনে কোন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেনা বিএনপি। এমন নীতিতে তারা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে গেলেও মাঝে মাঝে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকা এলাকাগুলোয় তারা অংশগ্রহণও করেন।

মূলত: বিএনপির এমন নীতির কারণে তৃণমূল নেতাকর্মীরা দলটির নীতিনির্ধারকদের তেমন একটা বিশ্বাস করতে পারেন না। আর তাই সিলেট সিটি করপোরেশনের এবারের নির্বাচনে কঠোর নির্দেশনা তাকে পাত্তা দেয়ার প্রয়োজনই মনে করছেন না।  

জানা গেছে, সিলেট সিটি করপোরেশনের এবারের নির্বাচনে বর্তমান ৭ কাউন্সিলরের মধ্যে ৬জনই নির্বাচনী মাঠে সক্রিয়।  তারা মনোনয়নপত্রও দাখিল করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দিয়ে একমাত্র বিএনপি নেতা রেজাউল হাসান কয়েস লোদী নির্বাচন বর্জন করেছেন। 

বিএনপির বর্তমান কাউন্সিলরদের মধ্যে যে ৬জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন তারা হলেন, সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও ৬নং ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীম, ২১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুর রকিব তুহিন, মহানগর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও ১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর তৌফিকুল হাদী, ১৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম মুনিম, ১৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবিএম জিল্লুর রহমান উজ্জ্বল ও সংরক্ষিত ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর, সদ্য বিদায়ী সিলেট মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক রোকসানা বেগম শাহনাজ 

(২৫নং ওয়ার্ড)।  

আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীসহ আরও কয়েকজন বিএনপি নেতা।

এদিকে জানা গেছে, বিএনপি এবং ছাত্রদলের আরও কয়েকজন নেতা বিভিন্ন ওয়ার্ডে নির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন জেলা ছাত্রদলের বর্তমান সভপতি আলতাফ হোসেন সুমন। সোমবা তিনি জেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছে তার মনোনয়নপত্র জমা দেন।

তবে এসময় তার মুখে মাস্ক পরা থাকায় গণমাধ্যম কর্মীদের অনেনেক চিনতে পারেন নি। দু'একজন চিনলেও তিনি তার সাথে কথা বলতে রাজি হননি। 

সুমনের মতো এমন আরও অনেকেই গোপনে বা আড়ালে আবডালে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দিয়েছেন।

বিএনপির মাঠের নেতাকর্মীদের মধ্যে যারা নির্বাচন নিয়ে আগ্রহী তাদের কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নির্বাচন বিমুখতা আমাদের সাধারণ মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে। নেতারা এটা বুঝতেই পারছেন না। অংশগ্রহণ করলে কারচুপি হলেও জনগনের কাছে সেটা তুলে ধরা যেত। তাই আমরা নির্বাচনে আগ্রহী। 

এমনকি ইভিএম নিয়ে সমালোচনাকেও তারা পাত্তা দিচ্ছেন না। তাদের বক্তব্য, খাদিমনগর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে কিছুদিন আগে। ইভিএম-এ অনুষ্ঠিত এ নির্বচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি নেতা দেলোয়ার হোসেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা ইকলাল আহমদ।

এমন তরতাজা উদাহরণ চোখের সামনে থাকায় তৃণমূল বিএনপির অনেক নেতাকর্মী মনে করেন, ইভিএম- এ হলেও নির্বাচন সুষ্ঠ সুন্দর হবে। তাই তারা রাজনৈতিক একগুয়েমিকে পাত্তা না দিয়ে নির্বাচনমুখী।

অবশ্য সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন গণমাধ্যমকে বলেছেন, সরকারের পাতানো ফাঁদ বুঝতে না পেরে কোন কোন বিএনপি নেতা নির্বাচন নিয়ে আগ্রহী। 

তারপরও তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, তারা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নির্বাচন বর্জন করবেন। অন্যথায় দল থেকে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুমকিও দিয়ে রেখেছেন।