৫ম দিনে ফ্রান্সের বিক্ষোভ, এক রাতেই গ্রেপ্তার ১৩০০

চলমান বিক্ষোভ মোকাবিলা করতে দেশজুড়ে ৪৫ হাজার পুলিশ মোতায়েন করেছে ফ্রান্স। দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরাল্ড দারমানিন শনিবার রাতে ফ্রান্স জুড়ে পুলিশ মোতায়েনের এই ঘোষণা দিয়েছেন। এছাড়া দেশজুড়ে চলছে ধরপাকড়। শুধু শুক্রবার রাতেই ১৩০০ জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিক্ষোভ থামাতে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বড় শহরগুলোতে। 

ফ্রান্স২৪ জানিয়েছে, সবথেকে খারাপ পরিস্থিতি লিওন গ্রেনোবেল এবং মার্সেইলে। এসব অঞ্চলে আগেও তীব্র বিক্ষোভ দেখা যায়। এই তিন এলাকায় সবথেকে বেশি পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এছাড়া রাজধানী প্যারিসেও হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ করছে। পরিস্থিতি যে কোনো সময় আরও খারাপ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফ্রান্সের বিচার মন্ত্রী এরিক ডুপন্ড-মোরেটি শনিবার জানিয়েছেন, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ৩০ শতাংশ অপ্রাপঅন্যদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দারমানিন বলেছেন যে, গ্রেপ্তারকৃতদের গড় বয়স মাত্র ১৭।এর আগে গত মঙ্গলবার পুলিশের গুলিতে এক কিশোর নিহত হওয়ার ঘটনায় গোটা ফ্রান্স জুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। দেশটির বেশ কয়েকটি শহরে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের অনবরত সংঘর্ষ চলছে। জোর করে বিক্ষোভ থামাতে প্রথম থেকেই ব্যাপক ধরপাকড় চালাচ্ছে ফ্রান্সের পুলিশ। অপরদিকে পুলিশের আগ্রাসী আচরণের জবাবে বিক্ষোভ আরও জোরদারের চেষ্টা করছে সাধারণ জনগণ। 

যদিও পুলিশের অভিযোগ বিক্ষোভের নামে অনেকেই বিপণিবিতানগুলোতে লুটপাটের চেষ্টা করছে। পুলিশের হাতে ওই কিশোরের মৃত্যুর চতুর্থ রাত অর্থাৎ শুক্রবার রাতে ১৩৫০টিরও বেশি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরো জানিয়েছে, রাজপথে দুই হাজার ৬৫০টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এদিকে পুলিশ মোতায়েন করেও কোনো কাজ হচ্ছে না। অতিরিক্ত পুলিশ থাকার পরেও অন্তত ৩১টি থানায় হামলা হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা এখন গণপরিবহণগুলোকেও টার্গেট করছে বলে অভিযোগ করেছেন দারমানিন। তিনি দেশজুড়ে সব পাবলিক বাস ও ট্রামকে রাতে বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। বিক্ষোভকে উসকে দেয়ার কাজে যাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোকে ব্যবহার করা না হয়, সেই আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি। তার মতে, এসব ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো নিয়ন্ত্রণ বড় চ্যালেঞ্জ। 

যে কিশোররের মৃত্যুর ঘটনায় এই দাঙ্গার শুরু তাকে শনিবার দাফন করা হয়েছে। প্যারিসের কাছেই একটি তল্লাশি চৌকিতে নাহেল নামের এক কিশোরকে গুলি করে হত্যা করে এক পুলিশ কর্মকর্তা। এর প্রতিবাদেই শুরু হয় বিক্ষোভ। কোনো কারণ ছাড়াই একদম কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করা হয় ওই কিশোরকে। ওই পুলিশ কর্মকর্তা তার আইনজীবীর মাধ্যমে নেহালের পরিবারের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। ওই পুলিশ কর্মকর্তা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন বলেও জানিয়েছেন তার আইনজীবী লরেন-ফ্রাঙ্ক লিওনার্দ। কিন্তু তাতে চলমান বিক্ষোভের উত্তাপ কমেনি। নাহেলের মা ফ্রান্স ফাইভ টিভিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, যে পুলিশ কর্মকর্তা তার সন্তাকে হত্যা করেছেন, তার প্রতি তিনি ক্ষুদ্ধ। আলজেরিয়া থেকে আসা এই অভিবাসী মা আরো বলেন, ওই পুলিশ কর্মকর্তা নাহেলের চেহারা দেখেই তার জীবন কেড়ে নিয়েছেন। 

এদিকে বিক্ষোভের কারণে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন তার জার্মানি সফর বাতিল করেছেন। রোববার তার জার্মানিতে এক রাষ্ট্রীয় সফরে যাওয়ার কথা ছিল। তবে শেষ সময়ে এসে তা স্থগিত করা হয়। ্