দ্বিগুণ শক্তি নিয়ে আসছে বিএনপি

সরকার পতনের একদফা দাবিতে দ্বিগুণ শক্তি নিয়ে ফের মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। এজন্য আরও সুসংগঠিত হয়ে আন্দোলন সফল করতে কেন্দ্র থেকে তৃনমূল-সব পর্যায়ে বার্তা দেওয়া হয়েছে। কর্মসূচি প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়নে এবার সমন্বয়ের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওযনেতাকর্মী ও শরিকদের অন্ধকারে না রেখে সবার মত নিয়ে চূড়ান্ত করা হচ্ছে নতুন কর্মসূচি। আপাতত ঢাকায় টানা আন্দোলনের পরিবর্তে জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের সমাবেশ, পদযাত্রাসহ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দিতে চায়। সময় ও সুযোগবুঝে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমেই দাবি আদায়ের পরিকল্পনা

সম্প্রতি ঢাকার প্রবেশপথে অবস্থান কর্মসূচি পালনে কী কী দুর্বলতা ছিল, তাও চিহ্নিত করেছে বিএনপি। সে অনুযায়ী আগামী দিনের কর্মসূচি সফলে করণীয় নিয়ে সিনিয়র নেতাদের পরামর্শ নিচ্ছেন দলটির হাইকমান্ড। নতুন কর্মসূচি প্রণয়নে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সমমনা দল ও জোট নেতাদের মতামত নেওয়া হচ্ছে। সবার মতামতের ভিত্তিতে একদফা দাবিতে শিগগিরই পূর্ণাঙ্গ কর্মসূচি দেওয়া হবে। বিএনপি সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘সরকার আবারও একটি একতরফা নির্বাচন করার পাঁয়তারা করছে। কিন্তু এবার সেই সুযোগ পাবে না। গণ-আন্দোলনে সরকারকে বিদায় নিতেই হবে। কারণ ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র রক্ষায় দেশের মানুষ জেগে উঠেছে। সরকারের পদত্যাগে একদফা দাবিতে শিগগিরই ঘোষণা করা হবে নতুন কর্মসূচি। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমেই নিশ্চিত করা হবে এ সরকারের পতন।’

শুক্রবার নয়াপল্টনের সমাবেশে সরকার হটানো আন্দোলনে মরণপণ যুদ্ধের সর্বাÍক প্রস্তুতি নেওয়ার ঘোষণা দেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘স্বৈরাচারী সরকারকে আরেক ধাক্কা দিতে হবে। সামনে এর বিকল্প কোনো পথ নেই। আমাদের ফিরে যাওয়ার কোনো পথ নেই। জাতির অস্তিত্বের জন্য সরকার পতন আন্দোলনে সবাইকে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। জনগণের পার্লামেন্ট গঠন করতে হবে-সেটাই হচ্ছে জনগণের একমাত্র চাওয়া।’

সূত্র জানায়, দুদিন ধরে গুলশান কার্যালয়ে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপি। এসব বৈঠকে সমমনা দলের একাধিক নেতার আশঙ্কা-আন্দোলন দমাতে হামলা-মামলা ও দমন-পীড়নের মাত্রা আরও বাড়তে পারে। তখন পরিস্থিতি বিবেচনায় হঠাৎ করে কর্মসূচি পরিবর্তন করতে হতে পারে। সেক্ষেত্রে পরিকল্পনায় একাধিক কর্মসূচি রাখা উচিত। যাতে পরিস্থিতি অনুযায়ী কর্মসূচিতে পরিবর্তন আনা যায়।

সমমনা দলগুলোর একাধিক শীর্ষ নেতা জানান, বিএনপির দীর্ঘদিনের জোট শরিক ছিল জামায়াতে ইসলামী। যুগপৎ আন্দোলনে তাদেরও যুক্ত করার প্রয়োজনীতার কথা উঠেছে বিভিন্ন ফোরামের বৈঠকে। জামায়াতকে সঙ্গে নিতে বিএনপিতে পক্ষে-বিপক্ষে দুটি গ্র“প থাকলেও আন্দোলন ও ভোটের মাঠে তাদের গুরুত্ব অনুধাবনের কথা বিবেচনায় নেওয়ার প্রসঙ্গও ওঠে।

সম্প্রতি বিএনপির দুজন সিনিয়র নেতার সঙ্গে জামায়াতের দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে কথাও হয়েছে। যে কারণেই অবস্থান কর্মসূচিতে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা এবং দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জোবাইদা রহমানকে সাজার সমালোচনা করে জামায়াতে ইসলামী বিবৃতি দিয়েছে। জামায়াত এখন পৃথকভাবে কর্মসূচি পালন করলেও সামনে একপর্যায়ে যুগপৎ আন্দোলনেও থাকবে।

বিএনপি কেন্দ্রীয় নেতারা জানান, ঢাকার প্রবেশপথে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি তাদের সরকার পদত্যাগের চ‚ড়ান্ত কর্মসূচি ছিল না। ঢাকায় মহাসমাবেশ ও প্রবেশপথে অবস্থান কর্মসূচির মাধ্যমে বিএনপির সাংগঠনিক শক্তি জানান দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। এর পাশাপাশি সরকারের ভ‚মিকাও প্রকাশ্যে আনা সম্ভব হয়েছে। তারা মুখে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বললেও বাস্তবে তাদের পরিকল্পনা ভিন্ন। বিরোধী দলকে মাঠ ছাড়া করে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে আবার যেনতেন একটি নির্বাচন করাই সরকারের মূল লক্ষ্য-চিত হয়েছে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতিতে সরকার বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তোয়াক্কা করছে না বলেও প্রমাণ করা সম্ভব হয়েছে।

তারা আরও জানান, অবস্থান কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে দলের কিছু দুর্বলতাও চিহ্নিত করা গেছে। কেন্দ্রীয় নেতারা অনেকে দলীয় হাইকমান্ডকে কথা দিয়েছিল ওই কর্মসূচিতে থাকবেন। সে অনুযায়ী অনেককে প্রবেশপথের কর্মসূচিতে দায়িত্বও দেওয়া হয়। কিন্তু দেখা যায় বেশিরভাগ দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতাই কর্মসূচিতে অংশই নেননি। এমনকি আশপাশের জেলার শীর্ষ নেতাদের সর্বোচ্চসংখ্যক নেতাকর্মীদের নিয়ে অবস্থান কর্মসূচিতে থাকার কথা থাকলেও সেভাবে যাননি।

গাজীপুর জেলা ও মহানগরের উদাহরণ দিয়ে নেতারা জানান, উত্তরার বিএনএস ভবনের সামনে বৃহত্তর উত্তরাসহ পাশের গাজীপুর মহানগর ও জেলার নেতাকর্মীদেরই বেশি থাকার কথা ছিল। কিন্তু উত্তরার নেতাকর্মীদের দেখা গেলেও ওই দুই সাংগঠনিক জেলার একবারেই কমসংখ্যক নেতাকর্মীকে দেখা গেছে। আগের দিন মহাসমাবেশে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী ঢাকায় থাকলেও অবস্থান কর্মসূচি ঘিরে সমন্বয় না থাকায় তাদের অর্ধেকও নামানো যায়নি।

সূত্রমতে, অবস্থান কর্মসূচি নিয়ে নেতাদের কার কী ভ‚মিকা ছিল তা ইতোমধ্যে দলের হাইকমান্ড বিভিন্নভাবে খোঁজ নিয়েছেন। সমস্যা চিহ্নিতও করা হয়েছে। তাই আগামী দিনের আন্দোলন কর্মসূচি সফলে সমন্বয়কে বেশি গুরুত্ব দিতে চায়। সেভাবেই কেন্দ্র থেকে তৃণমূল নেতাদের দিকনির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। চ‚ড়ান্ত আন্দোলনে সবাইকে মাঠে নামার জন্য যা যা করণীয় তা ঠিক করা হচ্ছে। সব প্রস্তুতি নিয়েই এবার মাঠে নামা হচ্ছে।

জানতে চাইলে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবি আদায়ে দেশের জনগণ ফুঁসে উঠেছে। এ সরকারকে আর এক মুহূর্তও দেখতে চায় না জনগণ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে হামলা চালিয়ে তা দমন করা যাবে না। রাজনীতি হচ্ছে কৌশলের খেলা। সেই খেলায় বিএনপি আপাতত এগিয়ে রয়েছে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে একদফা আন্দোলনে আমরাই জয়ী হব।