জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে মাঠের কর্মসূচি আরও জোরালো করবে আওয়ামী লীগ। পরিকল্পনা সাজাতে জেলা, উপজেলা ও মহানগরের নেতাদের নিয়ে বৈঠকও শুরু করেছেন দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। দেওয়া হচ্ছে নানা দিকনির্দভোটের আগে নেতাকর্মীদের চাঙা রাখতে রংপুরের মতো সব বিভাগে নির্বাচনি জনসভা করার পরিকল্পনা রয়েছে আওয়ামী লীগের। এতে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই কর্মসূচি বিস্তৃত হবে জেলা পর্যায়েও। এর সঙ্গে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বিভাগ ও জেলা পর্যায়ে সমাবেশ কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলী
দলের সহযোগী সংগঠন ও তৃণমূলকে সার্বক্ষণিক সক্রিয় রাখতে ইতোমধ্যেই প্রাথমিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। রোববার গণভবনে অনুষ্ঠেয় আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় এসব নির্দেশনা চ‚ড়ান্ত করা হবে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধীদের ফাঁকা মাঠ না ছাড়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে ক্ষমতাসীনদের। ফলে এ ধরনের কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে চায় তারা। এরই ধারাবাকিতায় রংপুরের জনসভায় ব্যাপক উপস্থিতির মধ্য দিয়ে বড় শোডাউন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। বাকি বিভাগের জনসভাগুলোতেও এই ধরনের বড় জনসমাবেশ করার পরিকল্পনা রয়েছে দলটির। এর সঙ্গে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বিভাগ ও জেলা পর্যায়ে অব্যাহত থাকবে শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ। আয়োজন করা হবে সভা-সেমিনারেরও। এদিকে এবার প্রচলিত ধারা থেকে বেরিয়ে আগস্টে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করছে আওয়ামী লীগ। ফলে মাসব্যাপী শোকের কর্মসূচির পাশাপাশি অন্যান্য কর্মসূচি নিয়েও মাঠে থাকছে ক্ষমতাসীনরা।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, প্রতিটা বিভাগীয় সদরে জনসভা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কয়েকটা ইতোমধ্যে হয়ে গেছে, বাকিগুলোও পর্যায়ক্রমে হবে। পরে জেলা পর্যায়েও নেতাদের নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পার্টি অফিসে বা গণভবনে বসবেন। আগস্টের পরে এসব কাজগুলো আরও গতি পাবে। এ ব্যাপারে রোববার আমাদের বিশেষ বর্ধিত সভা আছে। সেখানেও প্রধানমন্ত্রী দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখবেন।
একই বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম যুগান্তরকে বলেন, প্রথমে সব বিভাগে আমাদের (আওয়ামী লীগ) বিভাগীয় জনসভা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জেলাপর্যায়ে জনসভা শুরু করবেন। তিনি আরও বলেন, জেলাপর্যায়ে জনসভা শুরু হলে প্রধানমন্ত্রী এর আগে (নির্বাচনের আগে) যেসব জেলা নির্বাচনি জনসভা করেননি, সেই জেলা প্রাধান্য দেওয়া হবে।
২৪ নভেম্বর যশোরের শামস্-উল হুদা স্টেডিয়ামে জনসভা করে আওয়ামী লীগ। এরপর চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাজশাহী ও ময়মনসিংহে জনসভা করে আওয়ামী লীগ। সর্বশেষ বুধবার রংপুর জিলা স্কুল মাঠে জনসভা করে আওয়ামী লীগ। প্রতিটি জনসভাতেই বিশাল জনসমাবেশের মধ্য দিয়ে বড় শোডাউন দেয় আওয়ামী লীগ। এই জনসভাগুলোতে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন। জাতীয় নির্বাচনের আগে এই জনসমাবেশে শেখ হাসিনা সরকারের নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরার পাশাপাশি তা অব্যাহত রাখতে আবারও নৌকায় ভোট চান।
জানা গেছে, নির্বাচন সামনে রেখে সামনে সিলেট, খুলনা, বরিশালে নির্বাচনি জনসভা করবে আওয়ামী লীগ। দলীয় একটি সূত্র জানায়, এতদিন যে জনসভাগুলো হচ্ছে, সেগুলো নির্বাচন সামনে রেখে হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনি প্রচার শুরু বলা যাবে না। সিলেটে শাহজালাল-শাহ পরান (রহ.)-এর মাজার জিয়ারত এবং সেখানে জনসভার মধ্য দিয়েই আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগের নির্বাচনি প্রচার শুরু করবেন দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বলেন, সিলেটের পবিত্র মাটি থেকেই প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগের নির্বাচনি প্রচারণা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করেন। এবারও তাই করা হবে বলে আমার ধারণা। যদিও তারিখ এখনো চ‚ড়ান্ত করা হয়নি। তিনি আরও বলেন, সিলেটর জনসভা জনসমুদ্র তো হবেই। একই সঙ্গে সেখান থেকে বঙ্গবন্ধুকন্যা গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেবেন। যা হবে ইলেকশনের বার্তা, ইলেকশনে জয়ের বার্তা।
একই বিষয়ে দলটির আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনি জনসভা শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে কয়েকটি অনুষ্ঠিত হয়েছে। সর্বশেষ বুধবার রংপুরে বিশাল জনসভা করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাকি বিভাগগুলোতেও একইভাবে জনসভা অনুষ্ঠিত হবে।
ছাত্রলীগ, যুবলীগ, যুব মহিলা লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগকে সারা দেশে ছাত্র-যুব সমাবেশের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ২৮ জুলাই যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ ঢাকায় বড় সমাবেশ করে শোডাউন দিয়েছেন। সেপ্টম্বর থেকে ঢাকার বাইরেও বিভাগীয় পর্যায়ে এই ধরনের কর্মসূচির আয়োজন করা হবে।
এছাড়া সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হবে গণসংযোগ কর্মসূচি। সেখানে তুলে ধরা হবে সরকারের উন্নয়ন-অর্জন এবং বিএনপি-জামায়াতের ‘অপকর্ম’। বিভিন্নœ পেশাজীবী ও কৃষকদের নিয়েও সমাবেশের কথা ভাবছে আওয়ামী লীগ। যুব মহিলা লীগ ও মহিলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগেও নানা কর্মসূচির পরিকল্পনা রয়েছে ক্ষমতাসীনদের।
এদিকে নির্বাচন সামনে রেখে জোট নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের পরে মাঠে কর্মসূচি জোরালো করছে ১৪ দল। ইতোমধ্যে কর্মসূচি নিয়ে মাঠেও নেমেছে তারা। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার বিকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে ১৪ দল সমাবেশ করবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। সোমবারের পর এই মাসেও আরও চারটি সমাবেশ করবে ১৪ দল।
মন্তব্য