২০০৮ সালের নির্বাচন। সাবেক এমপি বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলী এমপি প্রার্থী। আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থী হন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের তৎকালীন যুগ্ম সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী। দেশ-বিদেশের নজর ছিল এ আসনে। আলোচিত আসন হিসেবে বিবেচিত করা হতো এটিকে। নির্বাচনে অল্প ভোটে হেরে যান ইলিয়াস আলী। এমপি হন শফিকুর রহমান চৌধুরী। পরবর্তীতে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকও হন তিনি। এরমধ্যে ঘটে যায় অনেক ঘটনা। বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলী ঢাকা থেকে নিখোঁজ হন। উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এ আসনের ওসমানীনগর ও বিশ্বনাথ উপজেলা। ইলিয়াসের সন্ধান দাবিতে আন্দোলনের দাবানল ছড়িয়ে পড়ে। ইলিয়াস এখনো ফিরেননি। তার জন্য চলছে অন্তহীন অপেক্ষা। তবে ইলিয়াসের অবর্তমানে এ আসনে বিএনপি’র হাল ধরেছেন তার স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা। এখন তিনিই এ আসনের বিএনপি’র নিয়ন্ত্রক। অন্যদিকে; জোট-মহাজোটের হিসেবে পড়ে পিছিয়ে পড়েন শফিকুর রহমান চৌধুরী। মহাজোটের হিসেবে জাতীয় পার্টিকে এ আসনটি ছাড় দেয়া হয়েছিল। কপাল পুড়ে শফিক চৌধুরীর। ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপি। এমপি হওয়ার সব প্রস্তুতি থাকলেও ইলিয়াস আলীর স্ত্রী বেগম তাহসিনা রুশদীর লুনা প্রার্থী হননি। এ কারণে সহজেই এ আসনের এমপি হয়ে যান জাতীয় পার্টির নেতা ইয়াহিয়া চৌধুরী এহিয়া। ওই নির্বাচনে নৌকা কিংবা ধানের শীষের প্রতীকের ভোট দেয়া থেকে বঞ্চিত হয় সিলেট-২ আসনের মানুষ। শাসক দল আওয়ামী লীগ। এমপি জাতীয় পার্টির। এ কারণে ওই ৫ বছরে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হয়নি এ আসনে। যদিও জাতীয় পার্টির প্রার্থী নানা ক্ষেত্রে উন্নয়নের জন্য চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। তার কিছু কিছু উন্নয়নও দৃষ্টান্ত হয়ে রয়েছে। তবে বড় কোনো প্রকল্পের মুখ দেখেননি এ আসনের বাসিন্এরমধ্যে আসে ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচন। মাঠে প্রস্তুত আওয়ামী লীগের প্রার্থী শফিকুর রহমান চৌধুরী। সঙ্গে সিলেট সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। অন্যদিকে; ইলিয়াসপত্নী তাহসিনা রুশদীর লুনাও ভোটের মাঠে সক্রিয় ছিলেন। এ নির্বাচনেও কপাল পুড়ে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী শফিকুর রহমান চৌধুরীর। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়েও তিনি পড়েছিলেন চ্যালেঞ্জের মুখে। ফের মহাজোটের আসন ভাগ-বাটোয়ারা। প্রাধান্য পেলেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইয়াহিয়া চৌধুরী এহিয়া। তিনি হলেন মহাজোট প্রার্থী। ফলে নৌকা প্রতীক পরপর দুই নির্বাচনে অধরাই থেকে গেল এ আসনে। অন্যদিকে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী হয়ে এ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন নিখোঁজ বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলীর স্ত্রী ও দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তাহসিনা রুশদীর লুনা। একই সঙ্গে এ আসনে শরিক দল গণফোরাম থেকেও প্রার্থী দেয়া হয় বর্তমান এমপি মোকাব্বির খানকে। নির্বাচনের মাঠে অপরিচিত প্রার্থী ছিলেন মোকাব্বির। মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার পর আইনে আটকে যান তাহসিনা রুশদীর লুনা। এতে হঠাৎ করেই আলোচনায় আসেন মোকাব্বির খান। মাঠে খেলাফত মজলিসের প্রার্থী মুনতাসির আলী থাকলেও আসন ভাগ-বাটোরায় কপাল খুলে মোকাব্বিরের। তাকে ঘোষণা করা হয় বিএনপি’র জোটের প্রার্থী হিসেবে। ওই নির্বাচনে নানা নাটকীয় ঘটনা ঘটে সিলেট-২ আসনে। আইনি লড়াই চালিয়ে যান ইলিয়াসপত্নী তাহসিনা রুশদীর লুনা। প্রচারণার মাঝপথে লুনার লড়াইয়ে হাঁপিয়ে উঠেছিলেন গণফোরাম প্রার্থী মোকাব্বির খান। নির্বাচনের মাঠ ছেড়ে চলে যান লন্ডনে। শেষ মূহূর্তের নাটকীয়তায় আদালত থেকে ছাড় না পাওয়ায় নির্বাচন করতে পারেননি লুনা। এই অবস্থায় লন্ডন থেকে ডেকে এনে মোকাব্বির খানকে নামানো হয় ভোটের মাঠে। ফলে ধানের শীষ প্রতীকও অধরা থাকে এ আসনে। তবে নির্বাচনে কেন্দ্রের নির্দেশে এহিয়ার পক্ষে সক্রিয় থাকেন আওয়ামী লীগের শফিকুর রহমান চৌধুরী ও মোকাব্বিরের পক্ষে ভোটের মাঠে নামেন বিএনপি’র তাহসিনা রুশদীর লুনা। নির্বাচনের দিনও নানা নাটকীয়তা ঘটে এ আসনে। কেন্দ্র দখল, পাল্টা দখলের খেলায় ইলিয়াসপত্নী লুনার হাত ধরেই দলীয় প্রতীক সূর্য মার্কায় এ আসনে এমপি নির্বাচিত হন মোকাব্বির খান। এ আসনে পরপর দুই বার ভাগ-বাটোরায় পড়ে শরিকরা এমপি হয়েছেন। এতে করে আক্ষেপ কাটছে না আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র কর্মীদের। ভোটে পাননি দলীয় প্রতীক, উন্নয়নে হতে পারছেন না শরিক। আসনে তাদের রাজনীতিও পড়েছে হুমকির মুখে। শরিক এমপিরা নানাভাবে দলীয় নেতাকর্মীদের অবজ্ঞা করতে থাকেন। তবে এ আসনে সব সময়ই রাজনীতি নিয়ে সক্রিয় রয়েছেন শফিকুর রহমান চৌধুরী ও তাহসিনা রুশদীর লুনা। মূলত দু’দলের কর্মীরা পরিচালিত হয় তাদের দু’জনের ইশারায়।
আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছেন এ দু’নেতা। লড়াইয়ের জন্য তাদের মাঠও প্রস্তুত। কিন্তু শরিকরা হাঁটছেন ভিন্ন পথে। ভোটে কর্তৃত্ব নেই, এ কারণে তারা ভাগ-বাটোয়ারার হিসাবকে এবারো প্রধান্য দিচ্ছেন। এ আসনের দলীয় নেতারা জানিয়েছেন, বিগত ৫ বছরে চোখে লাগার মতো একটি বড় প্রকল্পও হয়নি এ আসনে। এমপিও হয়েছেন নানাভাবে বিতর্কিত। তার কাছ থেকে এমপিসূলভ ব্যবহারও মিলেনি। নির্বাচনে জয়লাভের পরপরই তিনি বিএনপি’র নেতাকর্মীদের প্রতিপক্ষ এ ছাড়া বার বার চেষ্টা করেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অনুকম্পা পাননি। গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। এ কারণে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিকে চেয়ে আছেন এ আসনের ভোটাররা। তারা জানিয়েছেন, নৌকা ও ধানের শীষ প্রতীকে ভোট দেয়ার জন্য মুখিয়ে আছেন নেতাকর্মীরা। সাধারণ মানুষও এই প্রত্যাশায়। উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এ আসন। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য আগামী নির্বাচনে দলীয় প্রতীকের প্রার্থী চান আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র নেতাকর্মীরা।
মন্তব্য