গায়েবি মামলা চলতে থাকলে সুষ্ঠু নির্বাচন অসম্ভব: আসিফ নজরুল

ঘটনা ঘটেনি অথচ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এমন ঘটনা সাজিয়ে পুলিশ মামলা করছে। এমন মামলাই গায়েবি মামলা। এসব মামলার ঘটনায় সম্প্রতিকালে সরকারি দলের নেতাদের বাদী করা হচ্ছে। এসব মামলা অজ্ঞাত ও অনেক সংখ্যক মানুষকে আসামি করা হয় যাতে তাদের গ্রেফতারের ভয় দেখিয়ে বিরোধীদের এলাকা ছাড়া করা হয়। অবাধে নির্বাচনে কারচুপি করতেই নির্বাচনের আগে এ ধরনের মামলা বাড়ে। এ ধরনের মামলা অব্যাহত থাকলে আগামীতে সুষ্ঠু নির্বাচনরোববার দুপুরে ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ আয়োজিত’ গায়েবি মামলা ও আগামী নির্বাচন’ শীর্ষক ওয়েবিনারে এসব কথা বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরু

তিনি বলেন, ‘এই সরকারকে পুলিশ টিকিয়ে রেখেছে এমন কথাটা যে প্রায়ই শুনি, সেটা যতটা না হামলা করে তার চেয়ে বেশি মামলা করে। গায়েবি মামলা অব্যাহত থাকলে আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু করা অসম্ভব।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘বেশির ভাগ গায়েবি মামলায় ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঢোকানো হয়। অথচ এলাকাবাসী বলছেন, ককটেল বিস্ফোরণের কোনো ঘটনাই ঘটেনি। কেন ককটেল তাহলে? এক. এটা জামিন অযোগ্য অপরাধ। দুই. বিস্ফোরক আইনে দ্রুত শাস্তি দেওয়া সম্ভব।’ 

দণ্ডবিধির ২১১ ধারা অনুযায়ী গায়েবি মামলা শাস্তিযোগ্য অপরাধ জানিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, ‘একই সঙ্গে এটি গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন। সংবিধান অনুযায়ীও এ ধরনের মামলা প্রশ্নবিদ্ধ।’ 

এ ধরনের মামলা প্রতিরোধে উচ্চ আদালত, সংসদীয় কমিটি, মানবাধিকার কমিশন ও নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা পালনের সুযোগ রয়েছে জানিয়ে তিনি হতাশা জানিয়ে বলেন, ‘২০১৮ সালের জঘন্য নজির থাকা সত্ত্বেও এসব প্রতিষ্ঠানকে আমরা ভূমিকা রাখতে দেখিনি।’ 

ওয়েবিনারে সাংবাদিক গোলাম মর্তুজা অন্তু বলেন, ‘২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে শুধুমাত্র সেপ্টেম্বর মাসে রাজধানীতে বিস্ফোরক আইনে ১৯৬টি মামলা হয়েছিল। নাশকতার মামলা ছিল ৫৭৮ টি। এসব মামলায় ১১৮৬টি ককটেল এবং ৩৭০টি পেট্রল বোমা উদ্ধার দেখানো হয়েছিল।’ 

অস্ট্রেলিয়ার চার্লস ডারউইন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র আইন কর্মকর্তা ড. রিদওয়ানুল হক বলেন, ‘যারা রাজনৈতিক সভা-সমাবেশগুলো আয়োজন, মানুষ নিয়ে আসায় মুখ্য ভূমিকা পালন করছে পুলিশ তাদের বিরুদ্ধেই এই মামলাগুলো দিচ্ছে। যেন সামনে তারা এগুলো না করতে পারে। এই মামলাগুলোর উদ্দেশ্য হচ্ছে আন্দোলন দমন করা।’ আগরতলা যড়যন্ত্র মামলাও গায়েবি মামলার একটি উদাহরণ বলে উল্লেখ করেন তিনি। 

সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এমএ মতিন বলেন, ‘এটা কোনো বিতর্কিত বিষয় নয় যে, গায়েবি মামলা অসাংবিধানিক এবং আইনের অপব্যবহার। আমরা এখনো একটা শাসনতন্ত্রের অধীনে আছি, জঙ্গলে নেই। মৌলিক অধিকারগুলো শুধু কাগজে থাকল, বাস্তবে নেই তাহলে তো ব্রিটিশ আমলেই ভালো ছিলাম। অন্তত আইনের শাসন ছিল। আইনের শাসন না থাকলে আইন দিয়ে কী করব?’ 

ইন্ডিপেনডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান বলেন, ‘এই সরকারের আমলে যে গায়েবি মামলাগুলো করা হয়েছে সেগুলো চরিত্রগত দিক থেকে একেবারেই ভিন্ন। এগুলোর উদ্দেশ্য একেবারেই সুনির্দিষ্ট। তা হলো, আগামী নির্বাচনকে তাদের মতো করে প্রভাবিত করা।’