ডিসি-এসপিরা আওয়ামী লীগের বাবা: মির্জা ফখরুল

‘ডিসি-এসপিরা আওয়ামী লীগের বাবা’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, কুমিল্লার নাঙ্গলকোট থানার ওসি ফারুক হোসেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামালকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত করতে এক অনুষ্ঠানে সাধারণ মানুষের কাছে ভোট চেয়েছেন। ক্ষমতাসীন দল সব প্রতিষ্ঠানকে যে দলীয়করণ করেছে এটাই তার প্রবুধবার দুপুর ১২টার দিকে ঠাকুরগাঁও মির্জা রুহুল আমিন মিলনায়তনে জেলা বিএনপি আয়োজিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী বোগমুক্তি কামনা করকামনা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, চাকরিবিধিতে বলা আছে- সরকারি কর্মচারীরা কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষপাতিত্ব করতে পারবে না। ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে তাদের কাজ করতে হবে। চাকরিতে প্রবেশের আগে যে শপথ নিয়েছিলেন; সেই শপথ ভঙ্গ করে আমলাদের অনেকেই এখন আওয়ামী লীগের কর্মী।

তিনি আরও বলেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নীলনকশার কাজ শুরু হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে ডিসি-এসপি, ইউএনও, ওসিদের বদলি শুরু হয়েছে।

বিএনপির মহাসচিব আশঙ্কা করে বলেন, এবারের নির্বাচনে যদি আওয়ামী লীগ করে নিয়ে যেতে পারে- তাহলে আমাদের (বিএনপির) নেতাকর্মীদের কচুকাটা করবে। তাই তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের জীবনবাজি রেখে প্রতিরোধ করতে আহবান জানান।

তিনি বক্তৃতার একপর্যায়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি কেঁদে কেঁদে বলেন- সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া একজন মহীয়সী নারী। ১৯৭১ সালে চট্টগ্রাম থেকে কোলের দুই শিশুসন্তানকে নিয়ে বোরকা পড়ে নিরাপদের জন্য ঢাকায় আসেন। তবে ঢাকায় এসে তিনি পাক-হানাদার বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়ে ৯ মাস কারাবন্দি ছিলেন। সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর অনেকে ভেবেছিলেন বিএনপি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। তবে এই মহীয়সী নারীর হাত ধরে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বিএনপি।

তিনি আরও বলেন, খালেদা জিয়া রাজনীতিবিদ ছিলেন না, তিনি ছিলেন গৃহবধূ। স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। বেগম খালেদা জিয়া হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা। তাকে মুক্তি দিতে আওয়ামী লীগ ভয় পাচ্ছে। 

আওয়ামী লীগের একজন মন্ত্রী জিয়াউর রহমানকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি বলেছেন। তার বক্তব্যের প্রতিবাদে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বঙ্গবন্ধুকে আওয়ামী লীগের খন্দকার মোশতাক আহমেদরাই হত্যা করে শপথ নিয়ে সংসদে যোগ দেন।

তিনি বলেন, সরকার ক্যাসিনো সম্রাট লুটেরা ও টাকা পাচারকারীদের জামিন দিয়ে বিদেশ যাওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে। শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দিচ্ছে না। তিনি এখন চিকিৎসার অভাবে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে লড়াই করছেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, দেশে এতগুলো টিভি চ্যানেলের সংবাদকর্মী; কিন্তু তারাও স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছেন না। কয়েকটি টিভি চ্যানেল বিএনপির বিষোদগার করতে এখন ওঠে-পড়ে লেগেছে। তারা সরকারের সাফাই গাইছে।

জামায়াতে ইসলামীর নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সাঈদী একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আলেম ছিলেন। তার বিচার আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের ভিত্তিতে হয়নি।

মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ পার্লামেন্টকে ধ্বংস করে একটি সিলেকশন পার্লামেন্ট করে রেখেছে। এ পার্লামেন্টের এমপিরা ডুগডুগি বাজায়। আলোচনা হয় না জনগণের কোনো কথা।

পরে তিনি খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনা করে দোয়া মাহফিলে অংশ নেন।

এ অনুষ্ঠানে জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমুর রহমান, সহ-সভাপতি নুর করিম, আল মামুন আলম, সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমীন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. পয়গাম আলী, আনসারুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. দেলোয়ার হোসেন, মো. জাফরুল্লাহ, পৌর বিএনপির সভাপতি শরিফুল ইসলাম শরিফ, উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল হামিদসহ দলীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।