বাবা ক্যানসারে আক্রান্ত। চার ভাই, এক বোন, মা ও স্ত্রী–সন্তান নিয়ে পরিবার। বড় ছেলে হিসেবে পরিবারের হাল ধরতে পাড়ি জমান ওমানে। বসতভিটা বন্ধক রেখে দুই লাখ টাকা খরচ করে তিনি গিয়েছিলেন সেই দেশে। কিন্তু পরিবারের হাল ধরা আর হয়নি ওই যুবকের। ওমানে যাওয়ার আট মাসের মাথায় এক দুর্ঘটনায় লাশ হয়ে তাকে বাড়িতে ফিরতে হয়েছে।
হতভাগ্য ওই যুবকের নাম দিলবার মিয়া (৩২)। তার বাড়ি সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার চিলাউড়া হলদিপুর ইউনিয়নের কবিরপুর গ্রামে। তার লাশ বুধবার রাতে গ্রামে নিয়ে আসার পর পরিবারের সদস্যরা কান্নায় ভেঙে পড়েন।
পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কৃষক আইবুল মিয়া ও রীনা বেগম দম্পতির বড় ছেলে দিলবার মিয়া (৩২)। পরিবারের হাল ধরতে জানুয়ারি মাসে চাচা ফারুক মিয়ার সহযোগিতায় ওমানে যান। ওমানে যেতে ব্যয় হওয়া দুই লাখ টাকার জন্য তাকে পৈতৃক বসতভিটা বন্ধক রাখতে হয়। আশা ছিল, সেখানে গিয়ে আয়রোজগার করে জায়গাজমি ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি ক্যানসারে আক্রান্ত বাবার চিকিৎসা ও সংসারের হাল ধরবেন। ওমানে এসে একটি আবাসন প্রতিষ্ঠানে নির্মাণশ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করেন।
পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা গেছে, ৯ আগস্ট ভবনের কাজ চলাকালে সাততলার ছাদ থেকে একটি কাঠের টুকরা তাঁর মাথায় পড়ে। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। সঙ্গে সঙ্গে তার সহকর্মীরা তাকে ওমানের একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে তার স্বজন, শুভাকাঙ্ক্ষী এবং তিনি যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন, সেই প্রতিষ্ঠানের মালিক মিলে লাশ দেশে পাঠানোর পদক্ষেপ নেন।
কবিরপুর গ্রামের বাসিন্দা চিলাউড়া হলদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য আহমেদ আলী বলেন, ‘যে টাকা ব্যয় করে সে বিদেশে গিয়েছিল, সেই টাকাও আয় করতে পারেনি। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারীকে হারিয়ে গোটা পরিবার এখন বিপদে পড়েছে। দিলবার মিয়ার এক বছরের কন্যাসন্তান লাশ দেখে কিছু না বুঝেই কাঁদছে। তার কান্নায় লাশ দেখতে যাওয়া গ্রামবাসী আমরাও কাঁদছি। বুধবার রাতেই দিলবারের লাশ গ্রামের কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।’
দিলবার মিয়ার স্ত্রী সুমি বেগম বলেন, দুই বছর আগে তাদের পারিবারিক পছন্দে বিয়ে হয়। চার মাসের ছোট কন্যাসন্তানকে রেখে তার স্বামী বিদেশে চলে যান। প্রায়ই মুঠোফোনে কথা বলতেন আর মেয়ের বাবা ডাক শোনার অপেক্ষা করতেন। মেয়ের বয়স এখন এক বছর। বাবা ডাক শোনার আগেই তাঁর স্বামী চলে গেলেন।
দিলবার মিয়ার বাবা আইবুল মিয়া বলেন, পরিবারের অভাব দূর করতে বড় স্বপ্ন নিয়ে বিদেশে গিয়েছিল তার ছেলে। এখন ছেলের মৃত্যুতে সব শেষ হয়ে গেল। তার ছেলের লাশের সঙ্গে ওমান থেকে পাঠানো ৩৫ হাজার টাকা পেয়েছেন বলে জানান তিনি।
চিলাউড়া হলদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহিদুল ইসলাম বলেন, হতদরিদ্র পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম যুবকের মৃত্যুতে গোটা এলাকায় শোক বিরাজ করছে। পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দিয়ে পাশে থাকার চেষ্টা করব।
মন্তব্য