প্রশাসন আর সরকারকে রক্ষা করতে পারবে না

সরকার পদত্যাগের একদফা দাবিতে শুক্রবার রাজধানীতে পৃথক গণমিছিল করেছে ৩৮টি রাজনৈতিক দল। দলগুলোর অধিকাংশই গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, বাম গণতান্ত্রিক ঐক্য জোটভুক্তএদিকে প্রথমবারের মতো বিএনপি নেতৃত্বাধীন যুগপৎ আন্দোলনে যুক্ত হয়েছে ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি)। এ দলটিও এদিন গণমিছিল করেছে, যেখানে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নেন। 

এছাড়া যুগপৎ-এ না থাকলেও একদফা আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছে আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি)। এসব গণমিছিলে নেতারা বলেন, প্রশাসন এই সরকারকে আর রক্ষা করতে পারবে না। তাদের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। এই সরকারকে যত দ্রুত সম্ভব ক্ষমতা থেকে হটানো যাবে ততই মঙ্গল।

গণতন্ত্র মঞ্চ: বিকালে গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গণমিছিলের আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়। ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলুর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব হাবিবুর রহমান রিজুর সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন-জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জেএসডি’র সভাপতি আ স ম আব্দুর রব, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম ও গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়ক আবুল হাসান রুবেল। 

শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন, এই সরকারের শেষ রক্ষা হবে না। পদত্যাগ করতেই হবে। আ স ম আব্দুর রব বলেন, বৈদেশিক সম্পর্ক নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে কূটনৈতিক শিষ্টাচার, নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে বক্তব্য দিচ্ছেন তাতে বোঝা যায়, এই সরকারের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। 

মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, বিচারপতিরা আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম মেম্বারের মতো করে বক্তব্য দিচ্ছেন। আওয়ামী লীগ দেশের সব প্রতিষ্ঠানগুলোকে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। এই সরকারকে ক্ষমতা থেকে নামানো ছাড়া দেশকে রক্ষা করা যাবে না। সাইফুল হক বলেন, এই সরকারকে যত দ্রুত সম্ভব ক্ষমতা থেকে হটানো যাবে ততই মঙ্গল। সমাবেশ শেষে একটি গণমিছিল পল্টন মোড় হয়ে কাকরাইল মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।

যুগপৎ আন্দোলনে ফিরল আন্দালিব রহমান পার্থর বিজেপি: এদিন কর্মসূচি পালন করে ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি)। এ কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে প্রথমবারের মতো বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ কর্মসূচিতে ফিরল দলটি। বিকালে ফকিরাপুল পার্টি অফিসের সামনে থেকে মিছিল বের করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ঘুরে পুরানা পল্টনে গিয়ে শেষ হয়। 

সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে আন্দালিব রহমান পার্থ বলেন, ‘আমরা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই। এই সরকার দুবার ভোট চুরির মাধ্যমে মানুষের বুকের ওপর চেপে বসেছে। গণতন্ত্রের গলা চেপে ধরেছে এই সরকার। পরিষ্কারভাবে বলে দিতে চাই, আমেরিকার স্যাংশনে সরকার এখন টেনশনে। আর আগামীতে দেশে এ ধরনের নির্বাচন আর হবে না।’ 

তিনি বলেন, ‘আজকে সরকার ক্ষমতার মোহে সাধারণ জনগণ থেকে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে পারে না। একজন ব্যবসায়ী লাখ লাখ টাকা বিদেশে পাচার করছেন। কিন্তু কষ্ট হয় একজন কৃষককে ২৫ হাজার টাকার জন্য জেলে যেতে হয়।’

পার্থ বলেন, ‘জাতীয়তাবাদীর শক্তির কেন্দ্রবিন্দু খালেদা জিয়াকে মাত্র ২ কোটি টাকার জন্য জেলখানায় থাকতে হয়। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও স্ত্রীকে মাত্র ৩৫ লাখ টাকার জন্য মিথ্যা মামলা দিয়ে হেনস্তা করা হয়। অথচ দেশ থেকে লাখ কোটি টাকা পাচার হয়ে যায়। এ সময় আর বেশিদিন থাকবে না। আগামীতেও দলীয় কর্মসূচির পাশাপাশি সব কর্মসূচিতে বিএনপির পাশে থাকব।’

গণমিছিলে আরও অংশ নেন-বিজেপির মহাসচিব আব্দুল মতিন সাউথ, প্রেসিডিয়াম সদস্য ওয়াশিকুর রহমান অঞ্জন, সালাউদ্দিন মতিন, ইমন, কেন্দ্রীয় নেতা ফারহান আহমেদসহ ঢাকা মহানগর ও অঙ্গসংগঠনের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী। 

১২ দলীয় জোট: বিকালে বিজয়নগর পানির ট্যাংকির সামনে থেকে গণমিছিল বের করে ১২ দলীয় জোট। গণমিছিলপূর্ব সমাবেশে নেতারা বলেন, জনগণের ব্যাপক আন্দোলন এবং গণতান্ত্রিক বিশ্বের বহুমুখী চাপে সরকার দিশেহারা হয়ে পড়েছে। মুখে মুখে যতই দাপট দেখানোর চেষ্টা করুক সরকারের ভেতরের অবস্থা ভালো নয়। 

জোট প্রধান ও জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দারের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন-মুখপাত্র ও বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বাংলাদেশ জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মুফতি গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের (বিএমএল) অ্যাডভোকেট শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, বাংলাদেশ জাস্টিস পার্টির মানসুর আলম শিকদার প্রমুখ। 

এলডিপি: লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বলেন, এখন সরকারের সামনে একটিই পথ খোলা তা হলো সসম্মানে পদত্যাগ করা। প্রশাসন এখন আপনাদেরকে রক্ষা করতে পারবে না। বিকালে পূর্ব পান্থপথের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এলডিপি আয়োজিত গণমিছিল পূর্ব সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। 

মিছিলটি মালিবাগ মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। গণমিছিলে আরও অংশ নেন-এলডিপির নূরুল আলম তালুকদার, ড. নেওয়ামূল বশির, ড. আওরঙ্গজেব বেলাল, অ্যাডভোকেট এসএম মোরশেদ, অধ্যক্ষ সাকলায়েন, মাহে আলম চৌধুরী, অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান, অধ্যাপিকা কারিমা খাতুন প্রমুখ। 

জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট: রাজধানীর পুরানা পল্টন মোড়সংলগ্ন আলরাজি কমপ্লেক্সের সামনে থেকে গণমিছিল শুরু করে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট। মিছিলটি পল্টন মোড়, জাতীয় প্রেস ক্লাব হয়ে পুনরায় আলরাজি কমপ্লেক্সের সামনে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। 

জোটের সমন্বয়ক ও এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে বিএনপি ও যুগপতের শরিকরা জনগণের ভোটে বিজয়ী হয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যাবে। তখন খালেদা জিয়া আবার দেশের প্রধানমন্ত্রী হবেন। এনপিপির মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফার সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন-জাগপার সভাপতি খন্দকার লুৎফর রহমান, গণদলের এটিএম গোলাম মওলা চৌধুরী, বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টির সুকৃতি কুমার মণ্ডল প্রমুখ। 

এবি পার্টি: যুগপৎ আন্দোলনে না থাকলেও একদফা দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করে আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি)। বিজয় নগরস্থ দলীয় কার্যালয় থেকে বেলা সাড়ে ১১টায় পূর্বনির্ধারিত বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়। 

সেগুনবাগিচা, কাকরাইল ও নাইটিঙ্গেল হয়ে মিছিলটি নয়া পল্টনের দিকে যেতে চাইলে পুলিশি ব্যারিকেডের মুখে পড়ে। পুলিশ মিছিলের গতিপথ আটকে দেয়। পরে মিছিল পুরানা পল্টন ও পল্টন মোড় ঘুরে বিজয়-৭১ চত্বরে গিয়ে সমাবেশের মধ্যদিয়ে শেষ হয়। 

দলের সিনিয়র সরকারী সদস্য সচিব আনোয়ার সাদাত টুটুলের সঞ্চালনায় ও মহানগর দক্ষিণ আহ্বায়ক বিএম নাজমূল হকের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন-পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম ও সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু। এছাড়াও রাজধানীতে গণমিছিল করেছে মোস্তাফিজুর রহমান ইরান নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ লেবার পার্টি, গণফোরাম (একাংশ) ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টি, নুরুল হক নুর নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদ, ববি হাজ্জাজ নেতৃত্বাধীন জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম, বাম গণতান্ত্রিক ঐক্যসহ সমমনা দলগুলো।।