‘তাদের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ফলাফল মানেননি, তারা আমাদের গণতন্ত্রের সবক দেয়’

নির্বাচন নিয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, সামনে নির্বাচন। আমরা নির্বাচনে বিশ্বাসী। জনগণের ভোটের মাধ্যমে সরকার নির্বাচিত হয়েছে। সামনের নির্বাচন নিয়ে সরকারের সুস্পষ্ট বক্তব্য হচ্ছে, নির্বাচন বিষয়ে সংবিধানের বাইরে কিছু হবে না। সংবিধানের বাইরে নির্বাচন হবে না।

তিনি বলেন, ৩০ লাখ শহিদের রক্তের বিনিময়ে এই সংবিধান। এই সংবিধান অনুসারে শুধু নির্বাচন নয়, ভবিষ্যতেও মানুষের ভাগ্যের উন্নয়নে কাজ করা হবে। সাম্প্রদায়িকতাকে যারা উসকে দিচ্ছে, এটা নতুন কিছু নয়। জাতির পিতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির দিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বাংলাদেশকে। এখন সময় এসেছে সেটা বন্ধ করার।

জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে শনিবার দুপুরে জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সমিতি’ আয়োজিত আলোচনা সভায় মন্ত্রী এসব কথা বলেন। 

যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে মন্ত্রী মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আজকের যে অবস্থা নিছক কোনো সাময়িক ঘটনা না। পৃথিবীর ২১টি রাষ্ট্রে এ বছর নির্বাচন হচ্ছে বা হবে। সেখানে কোনো কথা নেই। পাকিস্তানে কোনো কথা নেই, আফগানিস্তানে কোনো কথা নেই। কথা বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে। কারা আমাদের এত উপদেশ দেন? ওনাদের দেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সাহেব বলেছিলেন আমি যদি নির্বাচনে পরাজিত হই তাহলে ফলাফল মানব না।যে দেশের প্রেসিডেন্ট একথা বলেন, হেরে গেলে ফলাফল মানব না এবং কী কী করেছিল এখন সব প্রকাশ পাচ্ছে। তিনি ফলাফল মানেনওনি। দীর্ঘদিন বহুকিছু করেছেন। তারা আজকে আমাদের গণতন্ত্রের সবক দেয়। আমাদের কী করতে হবে, কী করতে হবে না বলে। জিয়াউর রহমানের ভোটের সময় যা হয়েছিল সেদিন তো মানবতার কথা বলেন নাই। ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল তখন তো মানবতার কথা বলেন নাই।’বাংলাদেশের আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের হস্তান্তর করার জন্য বিদেশি দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আজ যেসব দেশগুলো মানবাধিকারের কথা বলছে, সেই সব দেশই বঙ্গবন্ধুর খুনিদের আশ্রয় দিয়ে রেখেছে। বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত কিছু খুনি বিভিন্ন দেশে পালিয়ে রয়েছে। তাদের কোনো দেশ রাজনৈতিক আশ্রয় দিতে পারে না। যদি দেয়, তাহলে সেই হত্যাকাণ্ডের সপক্ষে আপনাদের অবস্থান পরিষ্কার করে। প্রমাণ করে যে, ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আপনাদের সম্পর্ক। তাদের আশ্রয় দিয়ে আপনারা যদি এদেশে মানবাধিকারের কথা বলেন, তাহলে সেটা কতটুকু যুক্তিযুক্ত হয় সেটা বিশ্ববাসী বোঝে। নিজের দেশের মানবাধিকার নিয়ে চিন্তা করুন। আমাদের প্রধানমন্ত্রী ১০ লাখ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছেন। এটা মানবাধিকারের সবচেয়ে বড় উদাহরণ।’ অনুষ্ঠানে ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মা বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের যে সম্পর্ক- তা সবচেয়ে উঁচুর বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, উন্নয়ন-সমৃদ্ধিতে ভারত সব সময়ই বাংলাদেশের পাশে আছে। সাম্প্রদায়িকতা, সস্ত্রাস, জঙ্গিবাদ প্রতিরোধেও বাংলাদেশের পাশে ভারত সব সময় থাকবে। একই সঙ্গে যেকোনো সহিংসতা ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কাজ করবে ভারত-বাংলাদেশ। 

ভারতীয় হাইকমিশনার বলেন, বাংলাদেশের পাশে ভারত সব সময় থাকতে চায়। মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের পাশে ছিল ভারত। সেই চেতনায় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং অগ্রগতিতে ভারত আছে-থাকবে। বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য, অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং যোগাযোগ প্রাধান্য দিচ্ছে ভারত। এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করতে চায় ভারত। 

সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, বিশিষ্ট সাংবাদিক আবেদ খান, সংসদ সদস্য আরমা দত্ত ও বাসন্তী চাকমা। স্বাগত বক্তব্য দেন- বাংলাদেশ ভারত মৈত্রী সমিতি সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ সাহা মনি। সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ভারত মৈত্রী সমিতির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রশিদুল আলম। সঞ্চালনা করেন সমিতির প্রেসিডিয়াম সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আবদুল হক।