আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সিলেট-৩ আসনে এক ডজন প্রার্থী মাঠে তৎপর রয়েছেন। যে কোনো মূল্যে তারা নিজ নিজ দলের মনোনয়ন পাওয়ার চেষ্টা করছেন। এক্ষেত্রে বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যশীরা বেশি তৎপর। নিজ নিজ দলের হাইকমান্ডের পাশাপাশি অনেকে লন্ডন কানেকশন বাড়িয়েদক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ নিয়ে গঠিত এই আসনে কে হবেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী-এ নিয়ে দলটির মধ্যে কোন্দল প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। অন্যদিকে বিএনপি সরকারবিরোধী আন্দোলনে মাঠে থাকলেও মনোনয়ন নিয়ে দলটির ভেতরে দ্বন্দ্ব রয়েছে। বিএনপি সূত্রে জানা যায়, দলটির নেতারা অনেকটা চুপিসারে প্রস্তুতি গ্রহণ করে রেখেছেন। তারা দলীয় নির্দেশনার অপেক্ষার প্রহর গুনছেন। একসময় আসনটি জাতীয় পার্টির দুর্গ হিসাবে পরিচিত ছিল। তবে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসাবে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী নির্বাচিত হওয়ার পর আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে চলে যায়। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হন মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী।
একাদশ সংসদ নির্বাচনেও তিনি সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন। ২০২১ সালের ১১ মার্চ মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর আকস্মিক মৃত্যু হলে আসনটি শূন্য হয়। ওই বছরের ৪ সেপ্টেম্বর উপনির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হন জেলা আওয়ামী লীগ নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব। এরপরই এই আসনে শুরু হয় নতুন মেরূকরণ। এমপি হাবিবকে ঘিরেই চলে থাকে দলীয় সব কর্মকাণ্ড। ইতোমধ্যে দলটিতে গ্রুপিং-দ্বন্দ্ব আরও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। একাধিক বলয়ে বিভক্ত আওয়ামী লীগে বিভিন্ন উপগ্রুপ সৃষ্টি হয়েছে। এসব গ্রুপের মধ্যে পালাটাপালটি হামলা ও মামলার ঘটনা ঘটছে। গত বছরের ২৫ আগস্ট দক্ষিণ সুরমা ময়ূরকুঞ্জ কনভেনশন হলে আয়োজিত শোকসভায় সিলেট-৩ আসনের এমপি হাবিবুর রহমান হাবিব ও যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক আ স ম মিসবাহর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ১০/১২ জন আহত হন। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় পালটাপালটি মামলা হয়।
এদিকে বিএনপিতে প্রকাশ্যে বিরোধ পরিলক্ষিত না হলেও দলটিতে দুটি বলয় রয়েছে। একটি বলয়ের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ূম চৌধুরী। অপর গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছেন কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক যুক্তরাজ্য প্রবাসী ব্যারিস্টার এমএ সালাম।
একসময় জাতীয় পাটির দুর্গ হিসাবে পরিচিত এই আসনে এবার দলটির মনোনয়নপ্রত্যাশী মোহাম্মদ আতিকুর রহমান। তিনি দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য। দীর্ঘদিন ধরে তিনি মাঠে কাজ করে আসছেন। সর্বশেষ উপনির্বাচনে তিনি লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নের দৌড়ে আছেন ৭ জন। তারা হলেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও বর্তমান সংসদ-সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল, আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক আ স ম মিসবাহ, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি, জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট নিজাম উদ্দিন, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবু জাহিদ এবং সাবেক সংসদ-সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর স্ত্রী ফারজানা সামাদ চৌধুরী। বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী হলেন জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ূম চৌধুরী, কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার এমএ সালাম এবং জেলা বিএনপির যুগ্মসাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার রিয়াসাদ আজিম হক আদনান। বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত সাবেক সংসদ-সদস্য শফি আহমেদ চৌধুরীও দলের মনোনয়ন পেতে তৎপর। নির্বাচনের আগে তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হতে পারে-এমনটি মাঠে গুঞ্জন রয়েছে।
মন্তব্য