২৪ ঘণ্টায় প্রাণ গেল সাত শতাধিক ফিলিস্তিনির

ফিলিস্তিনের গাজায় ঘুম ভাঙলেই লাশ দেখছে মানুষ। প্রতিমুহূর্তে তাদের মৃত্যু হচ্ছে। এত মৃত্যু আর লাশ দেখে সেখানকার অধিবাসীরা মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন। চোখ শুকিয়ে গেছে। কাঁদলে অশ্রু আসে না চোখে। তবুও বিশ্ববিবেক নীরব। আন্তর্জাতিক আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে গাজায় ইসরাইলের বর্বরোচিত বিমান হামলা অব্যাহত রয়েছে। এতে ২৪ ঘণ্টায় সাত শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে হামলার ১৮তম দিন মঙ্গলবার পর্যন্ত ৫ হাজার ৭৯১ জনের প্রাণ গেছে। আহত হয়েছেন ১৬ হাজারের বেশি মানুষ। এমন অবস্থায় ইসরাইলের মাটিতে পা রেখেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। তেল আবিবে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে ম্যাক্রোঁ বলেছেন, সন্ত্রাস ফ্রান্স ও ইসরাইলে কমন শত্রু। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লাড়াইয়ে আপনারা (ইসরাইল) একা নন। গাজা সংঘাতের বিষয়ে আলোচনা করার জন্য ওয়াশিংটন সফর করবেন চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। এ বিষয়ে আলোচনার জন্য জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বৃহস্পতিবার বিশেষ জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে। এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) মানবিক সহায়তার জন্য সাময়িক যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানোর বিষয়টি বিবেচনা করছে। এএফপি, রয়টার্স, আলজাজিরা, বিবিসি ও এনডিটিভি। গাজার চিকিৎসাসংশ্লিষ্ট সূত্র আলজাজিরাকে জানিয়েছে, ২৪ ঘণ্টার হামলায় নারী-শিশুসহ অন্তত ৭০৪ জন নিহত হয়েছেন। রাতে হামলা হয় গাজার উত্তরাঞ্চলের আল-শাতি ও জাবালিয়ার আল-বালাদ শরণার্থীশিবিরে। এছাড়া গাজার মধ্যাঞ্চলের আল-বুরেইজ ও দক্ষিণাঞ্চলের রাফাহ ও খান ইউনুস এলাকায় হামলার ঘটনা ঘটেছে। আল শাতি ও জাবলিয়ায় রাতভর হামলার পর ঘুম থেকে উঠেই প্রতিবেশী প্রিয়জনদের লাশ দেখছে মানুষ। এসব এলাকায় কবর দেওয়ারও জায়গা নেই। অতিরিক্ত কবর খুঁড়ে দাফন করা হচ্ছে লাশ। ফিলিস্তিনের একটি সংবাদ সংস্থার খবর, রাফাহ এলাকায় ইসরাইলি হামলায় ৩০ জনের বেশি মানুষের প্রাণ গেছে। আর খান ইউনুসে শিশুসহ ২৩ জন মারা গেছেন। আহতের সংখ্যা ৮০ ছাড়িয়েছে।এদিকে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র দানিয়েল হাগারি সকালে এক্স বার্তায় (সাবেক টুইটার) বলেন, গাজা উপত্যকায় ৪০০টির বেশি স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। এর মধ্যে মসজিদও রয়েছে। তিনি বলেন, হামাসের সদস্যরা মসজিদে বসে বৈঠক করছে। এ কারণে মসজিদে হামলা চালাতে হচ্ছে।চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বৃহস্পতিবার থেকে রোববার পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে থাকবেন। তিনি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। তাছাড়া মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভানের সঙ্গেও এ বিষয়ে আলাপ করবেন চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী। মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, ওয়াশিংটন সফরে ইসরাইল ও ইউক্রেনের ‘পরিস্থিতি’ নিয়ে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করা হবে। এই সংকট সমাধানে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে চাপ দেওয়া হবে। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠক হবে কি না, এ বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই।এ সফরকে সামনে রেখে সোমবার ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইলি কোহেনের সঙ্গে ফোনালাপ করেন ওয়াং। চলমান সংকট সমাধানের পরিকল্পনা নিয়ে আলাপ করেন তিনি।এক বিবৃতিতে ওয়াং বলেন, প্রতিটি দেশেরই আত্মরক্ষা করার অধিকার আছে। কিন্তু বেসামরিক নাগরিকের নিরাপত্তা রক্ষার্থে আন্তর্জাতিক মানবিক আইন অনুসরণ করা উচিত।‘কার্যকর আন্তর্জাতিক শান্তি সমাবেশের আয়োজন করার আহ্বান জানিয়ে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ফিলিস্তিনির পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিয়াদ মালকিকে বলেন, দ্বিরাষ্ট্র সমস্যা সমাধানের জন্য কাজ করবে চীন।ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সফরের আগে ইসরাইল সফর করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী রিসি সুনাক ও ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি।ফরাসি প্রেসিডেন্টের কার্যালয় এলিসি প্যালেস জানিয়েছে, ইসরাইলের প্রতি ‘পূর্ণ সংহতির’ বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে এই সফরে গেছেন ম্যাক্রোঁ। এদিকে জর্ডান ও মৌরিতানিয়ার অনুরোধে গাজা বিষয়ে আলোচনার জন্য জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের বৈঠক ডাকা হয়েছে। মঙ্গলবার এক এক্স (সাবেক টুইটার) পোস্টে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের প্রেসিডেন্ট ডেনিস ফ্রান্সিস বলেন, নিরাপত্তা পরিষদ কোনো পরিস্থিতিতে যথাযথ উদ্যোগ নিতে ব্যর্থ হলে সাধারণ পরিষদকে এগিয়ে আসতে হয়।১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদ ফিলিস্তিন-ইসরাইল সংঘাত নিয়ে নতুন এক প্রস্তাব পাশের চেষ্টা করছে। এর আগে গত সপ্তাহে যুদ্ধবিরতির একটি প্রস্তাব স্থায়ী সদস্য যুক্তরাষ্ট্রের ভেটোর কারণে বাতিল হয়ে যায়।অপরদিকে ইইউ পররাষ্ট্রনীতির প্রধান জোসেপ বোরেল বলেছিলেন, তিনি আশা করেছেন যে ইইউ নেতারা মানবিক সহায়তার জন্য যুদ্ধবিরতির আহ্বানকে সমর্থন করবেন।লুক্সেমবার্গে ইইউ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনার পর জোসেপ বোরেল বলেন, আমি বিশ্বাস করি যে মানবিক সাহায্যের সুবিধার্থে একটি মানবিক বিরতির ধারণা নেতারা সমর্থন করবেন। তেমন একটি বিরতি বাস্তুচ্যুত মানুষের আশ্রয় খুঁজে পেতে সাহায্য করবে।৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। ওইদিনই পালটা আক্রমণ শুরু করে ইসরাইল। এরপর থেকে নির্বিচার হামলা চলছে। অবরুদ্ধ রয়েছে গাজা উপত্যকা। অন্যদিকে ইসরাইল জানিয়েছে, হামাসের হামলা ও তাদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় তাদের দেশে নিহত মানুষের সংখ্যা ১ হাজার ৪০০ ছাড়িয়েছে, আহত হয়েছেন ৪ হাজারের বেশি। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ৩৬৩ সেনা ও পুলিশ সদস্য রয়েছেন