আন্দোলনকে দমন করতেই গ্রেফতার ও সাজা: রিজভী

গণতন্ত্রকামী জনগণের আন্দোলনকে দমন করতেই সরকার গ্রেফতার ও সাজা দেওয়ার পথ অবলম্বন করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।তিনি বলেন, ‘২৮ অক্টোবর সমাবেশের কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ ও স্বতঃস্ফূর্ত। তা সত্ত্বেও আওয়ামীপন্থি পুলিশ কর্মকর্তারা জনমনে নানা আতঙ্কের বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছেন ক্রমাগত হুমকির মাধ্যমে। কয়েক দিন ধরেই চলছে নির্বিচারে গ্রেফতার। ঢাকা মহানগরসহ দেশব্যাপী জেলাগুলোতে নেতাকর্মী বাড়িঘর পরিবার ছাড়া হয়ে হয়ে দিগ্বিদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে। দলের নেতাকর্মীদের যেখানেই পাচ্ছে সেখানেই নির্বিচারে আটক করছে পুলিশ। ইতোমধ্যে শীর্ষ নেতাসহ সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছে। গায়েবি মামলায় বিপুলসংখ্যক অজ্ঞাতনামা আসামি দেখানো হয়। এরপর গ্রেফতারদের ওই অজ্ঞাতনামা আসামির জায়গায় নাম বসিয়ে দেওয়া হয়।’ মঙ্গলবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সংম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।রিজভী আরও বলেন, ‘গায়েবি মামলায় এখন সরকার গায়েবি সাক্ষ্যও চালু করেছে। বানানো সাক্ষীকে গায়েবি সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করা হচ্ছে। এমনকি ফৌজদারি মামলায় পুলিশ সাক্ষী দিতে ইতস্তত করলে অথবা শেখানো কথা না বললে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পুলিশের সদর দপ্তর থেকে। পুলিশ প্রশাসন এখন জনগণের প্রতিষ্ঠান নয়, এটিকে গণতন্ত্রের শেষ চিহ্নটুকু মুছে দিতে নব্য বাকশালী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়েছে। দেশটাকে চিরতরে আওয়ামী কতৃর্ত্বের অধীনে রাখার জন্য গত ১৫ বছর ধরে শেখ হাসিনা (প্রধানমন্ত্রী) জনপ্রশাসন, পুলিশ ও বিচার বিভাগকে আওয়ামী লীগের উইং হিসেবে তৈরি করেছেন। সে কারণে তারা ন্যায়বিচার, সুশাসন এবং চিন্তার স্বাধীনতাকে সমাধিস্থ করেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘পুলিশের সর্বগ্রাসী গ্রেফতারি অভিযানের পরও সরকার শঙ্কামুক্ত হতে পারছে না বলেই আনসার বাহিনীকেও বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এটি নজিরবিহীন ঘটনা। এ ঘটনার মধ্য দিয়ে দেশের মানুষকে আওয়ামী কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পের মধ্যে চূড়ান্তভাবে বন্দি করা হলো। দেশকে প্রকৃত অর্থেই আওয়ামী বন্দিশালা বানানো হলো।’নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খুলনায় বলেছেন- সংবিধান মেনেই জাতীয় নির্বাচন হবে। তার এ বক্তব্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কার্বন কপি। বর্তমান নির্বাচন কমিশনকেও যে শেখ হাসিনা বিচারক, পুলিশ ও প্রশাসনের মতো আওয়ামী ক্যাডারদের দিয়ে সাজিয়ে রেখেছেন নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্যে তাদের মুখোশ খুলে পড়েছে। এ নির্বাচন কমিশন জনগণের স্বাধীন প্রতিষ্ঠান নয়, এটি একটি বাকশালী প্রতিষ্ঠান। তার বক্তব্যে একতরফা নির্বাচনেরই ইঙ্গিত ফুটে উঠেছে। এ কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন কখনই হবে না, এখানে ভোটের নামে ‘নির্বাচনবাজি’ হবে। আজ শুধু দেশের জনগণের অনাস্থা নয়, বিদেশি কূটনীতিকরাও বাংলাদেশের নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশের ঘাটতি দেখছে। অথচ নির্বাচন কমিশন নির্বাচন নিয়ে শেখ হাসিনার পথরেখাই অনুসরণ করছে।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম, সহ-প্রচার সম্পাদক আসাদুল করিম শাহিন, সহ-অর্থনৈতিক বিষয়ক মাহমুদুর রহমান সুমন, কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল প্রমুখ।