সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে বিএনপির ডাকা টানা ৭২ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি শুরু হয়েছে আজ। অবরোধের সমর্থনে আজ মঙ্গলবার সকালে ঢাকা নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে সাইনবোর্ড পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। এসময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. মো. রফিকুল ইসলাম, সহ অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন, নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনি, মন্টু মেম্বার সভাপতি নারায়ণগঞ্জ জেলা শ্রমিক দল, সালাউদ্দিন সালু সাধারণ সম্পাদক নারায়ণগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল, জুবায়ের রহমান জিকু সাধারণ সম্পাদক নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদল।
এসময় সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে রুহুল কবির রিজভী বলেন, আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীকে বাঁধা দিতে সর্বাত্মক চেষ্টা করেছে আওয়ামী লীগ ও তার ফ্যাসিবাদী সরকারের অনুগত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সরকারের নির্যাতন ও অনিয়মের বিরুদ্ধে যারাই প্রতিবাদ করেছেন, সমালোচনা করেছেন, তাদের বিরুদ্ধেই অত্যাচার ও মামলার খড়গ নেমে এসেছে। কুখ্যাত ডিজিটাল সিকিউরিটি এ্যাক্ট ২০১৮ এর কবলে পড়ে অসংখ্য রাজনৈতিক নেতাকর্মী, সাংবাদিক, সোশ্যাল মিডিয়া এক্টিভিস্ট, কার্টুনিস্ট, লেখক, কলামিস্ট ও সুশীল সমাজের অন্যান্য সদস্যরা অত্যাচারিত হয়েছেন, পুলিশি হেফাজতে ও কারাগারে নির্যাতনে মৃত্যুবরণ করেছেন। গুমঘর আর আয়নাঘরের দেয়ালে দেয়ালে লেখা হয়েছে অসংখ্য বেদনার ইতিহাস, গুমরে মরেছে নানা প্রাণ। বিচারবহির্ভূত হত্যা আর গুম হয়ে যাওয়া নেতাকর্মীদের পরিবারের সদস্য আর ছোট্ট অবুঝ সন্তানদের চোখের পানি শুকিয়ে গেছে।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো এসব মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে সোচ্চার রয়েছে এবং আওয়ামী লীগ সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যে এসব মানবাধিকার লঙ্ঘনের সাথে যুক্ত তার স্বপক্ষে সুনির্দিষ্ট প্রমান দাখিল করেছে।
রিজভী বলেন, নজিরবিহীন অত্যাচার, নির্যাতন, ও খুনের শিকার হয়েও বিএনপিসহ গণতন্ত্রের পক্ষের দলগুলো সহিংসতার পথ বেছে নেয়নি। নেতাকর্মীরাও শান্তিপূর্ণ ও অহিংস আন্দোলনে স্বত:স্ফূর্তভাবে যোগ দিয়েছেন। বিএনপির গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের যৌক্তিক দাবির সাথে একমত পোষণ করে গণতন্ত্রের পক্ষের সব রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন এবং ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে একত্রে জোর আন্দোলন গড়ে তুলেছেন। গণতন্ত্রের পক্ষের সব আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দেশগুলো একটি সুষ্ঠু ও অংশীদারিত্বমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সরকারকে চাপ দিচ্ছেন।দেশের ভেতরের সাধারণ মানুষ ও বাইরের আন্তর্জাতিক শক্তির জোর সমর্থন পাবার ফলে বিএনপির নেতৃত্বে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন যখন সফল হতে যাচ্ছে, তখন ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ ভীত হয়ে উঠেছে। এই অন্তিম অবস্থায় আওয়ামী লীগ যৌক্তিক জ্ঞান হারিয়ে সহিংসতার পথ বেছে নিয়েছে। তিনি দেশবাসীকে সর্বাত্মক শান্তিপূর্নভাবে অবরোধ কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানান।
প্রসঙ্গত, দেশে চলমান বিচারহীনতা, অপশাসন, সীমাহীন দুর্নীতি, অনাচার, অর্থ পাচার ও সিন্ডিকেটবাজীর ফলে দ্রব্যমূল্যের অব্যাহত উর্ধ্বগতিতে বিপর্যস্ত জনগণের জীবন-জীবিকা রক্ষার স্বার্থে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার এক দফা দাবী আদায়ের লক্ষ্যে আয়োজিত ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশে হামলা, নেতাকর্মীদের হত্যা, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ আন্দোলনরত বিভিন্ন দলের সহস্রাধিক নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, বাড়ী বাড়ী তল্লাশি, হয়রানী ও নির্যাতনের প্রতিবাদে এবং এক দফা দাবী আদায়ের লক্ষ্যে আজ ৩১ অক্টোবর এবং ১ লা ও ২’রা নভেম্বর ২০২৩ তারিখ দেশব্যাপী সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। একই সঙ্গে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এলডিপি, এবি পার্টি সহ কয়েকটি দল ও জোট অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা ও সমর্থন করেছে।
মন্তব্য