আন্দোলন ঠেকাতে ‘গুমের উৎসব’ শুরু করেছে সরকার: রিজভী

বিএনপির সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ গোটা দেশে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। জনগণের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন ঠেকাতে নব্য নাৎসি কায়দায় নতুন করে ‘গুমের উৎসব’ শুরু করেছে। সাদা পোশাকধারীদের কারণে শহর-বন্দর-জনপদে এখন হাড়-হিম করা আতঙ্ক। চারদিকে ভয়ার্ত পরিবেশ। যেন হানাদার বাহিনী আক্রমণ করেছে বাংলাদেশেরোববার বিকালে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। রিজভী বলেন, ‘শেখ হাসিনার গুম বাহিনীর ভয় দেখিয়ে মায়েরা এখন বাচ্চাদের ঘুম পাড়ান। চারদিকে শুধু জমাট বাঁধা কান্নার পাহাড়। প্রতিদিনই কান্নার পাহাড় আরও উঁচু হচ্ছে। ১৫ বছর ধরে কান্নার পাহাড় থেকে এখন চুইয়ে নামছে আর্তনাদ, আর গলগল করে উঠছে ক্রসফায়ারে মৃতদের আর গুম হওয়া মানুষের অভিশাপ।’ তিনি বলেন, ‘রাতে-দিনে সাদা পোশাকধারীরা কালো কাচ ঢাকা মাইক্রোবাসে নাৎসি বাহিনীর মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে। ছোঁ মেরে তুলে নিচ্ছে গণতন্ত্রকামীদের। তাদের হাতে সাধারণ মানুষও রেহাই পাচ্ছে না। র‌্যাব-পুলিশের নামধারীরা আন্দোলনরত বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের না পেলে তাদের পিতা-মাতা, পুত্র-সন্তান, ভাই-বোন এবং আত্মীয়স্বজনকে ধরে নিয়ে অদৃশ্য করে রাখছে। তুলে নিয়ে অস্বীকার করা হচ্ছে।’ রিজভী বলেন, ‘কোথাও কোথাও জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের মতো জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায় করছে আওয়ামী পুলিশ লীগ। বিনা মামলায়, বিনা ওয়ারেন্টে, গায়েবি মামলায় পাইকারি হারে হাজার হাজার নেতাকর্মী গ্রেফতার করে নির্যাতন করছে।’ 

তিনি বলেন, ‘তুলে নিয়ে বন্দি অবস্থায় অনেক নেতাকর্মীকে কোমর থেকে পায়ের তালু অবধি হাতুড়িপেটা করছে। অচল করে দেওয়া হচ্ছে, গুলি করে পঙ্গু করে দেওয়া হচ্ছে; যা চরম মানবতাবিরোধী। জাতিসংঘের কমিটি অ্যাগেইনস্ট টর্চার এবং নিপীড়নবিরোধী আন্তর্জাতিক কনসোর্টিয়াম ইউনাইটেড অ্যাগেইনস্ট টর্চার অনুযায়ী একটি গণবিরোধী ভয়াবহ অপরাধ; যা আন্তর্জাতিক আদালতে কঠিন শাস্তিযোগ্য অপরাধ।’

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশে রিজভী বলেন, ‘আপনারা ভোটের অধিকার আদায়ে জনগণের স্বতঃস্ফ‚র্ত আন্দোলনের প্রতিপক্ষ হবেন না। গণতন্ত্রকামী মানুষের জোয়ার ঠেকাতে পারবেন না। যেসব সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এখন পুলিশ কর্মকর্তা হয়ে গণতন্ত্রকামীদের হুমকি দিচ্ছেন, সবাইকে গ্রেফতার করা হবে বলে ভয় দেখাচ্ছেন, তারা গণবিরোধী অবস্থান থেকে সরে আসুন।’

দেশের তৈরি পোশাক ব্যবসা অন্য দেশের হাতে তুলে দেওয়ার চক্রান্ত হচ্ছে অভিযোগ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব বলেন, ‘সরকার অত্যন্ত সুকৌশলে দেশের সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের বড় খাত পোশাকশিল্প ধ্বংসের নীলনকশা বাস্তবায়ন করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুনরায় ’৭৪ সালের মতো দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করতে চান। দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করতে চান। মালিকরা শনিবার সরকারের প্ররোচনায় ১৫০টি পোশাক কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দিয়েছেন। ন্যায্য দাবি আদায়ে বিক্ষোভের দায়ে ১১ হাজার শ্রমিককে অভিযুক্ত করে সরকারের নির্দেশে মামলা করেছে পুলিশ।’তিনি বলেন, ‘শুধু বিরোধী দলের রাজনৈতিক নেতাকর্মী নন, পেশাজীবী, শ্রমজীবী, কর্মজীবী এমনকি পোশাক শ্রমিকরা পর্যন্ত ফ্যাসিস্টদের কাছে নিরাপদ নয়। বেতন-ভাতা বৃদ্ধির ন্যায্য দাবিতে আন্দোলনরত পোশাক শ্রমিকদের ওপর পুলিশ লেলিয়ে দিয়ে রোববার পর্যন্ত ৪ জন শ্রমিক হত্যা করা হয়েছে।’