হামলায় গুঁড়িয়ে গেছে গাজার আল শিফা হাসপাতালে কার্ডিয়াক বিভাগ

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় বিমান হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। স্থল বাহিনীর সঙ্গে যুগপৎ হামলা চালিয়ে গাজায় সব গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর এখন তারা বেছে নিয়েছে সেখানকার হাসহামলার ৩৭তম দিনে রোববারও উত্তর গাজার বেশ কয়েকটি হাসপাতাল এখন আইডিএফ ঘিরে রেখেছে। এদিকে গাজার আল শিফা হাসপাতালের আইসিইউতে হামলা চালানোর পর সেখানকার কার্ডিয়াক বিভাগেও তারা হামলা চালিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। 

ইনকিউবেটরের শিশুসহ, হাসপাতালের রোগী এবং স্টাফদের যুদ্ধক্ষেত্রে মাঝে ফেলে শিশুদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে ইসরাইল। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে সেটা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। 

এদিকে পশ্চিম তীরেও হামলা জোরদার করেছে আইডিএফ। রোববার খান ইউনিসে বিমান হামলায় কমপক্ষে ১৮ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। খবর আলজাজিরা, রয়টার্স, বিবিসির। 

প্যালেস্টেনিয়ান রেড ক্রিসেন্ট (পিআরসিএস) বলেছে, জ্বালানি না থাকায় গাজার আল কুদস হাসপাতাল এখন পুরোপুরি অকার্যকর। এদিকে রোববার সকালে আল শিফা হাসপাতাল দখলে নেওয়ায় সেখানে ইসরাইল বোমাবর্ষণ শুরু করে বলে জানিয়েছেন ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক। 

এ পরিস্থিতিতে আইডিএফ মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি বলেছেন, যারা বের হতে চায়, তাদের জন্য হাসপাতালের পূর্ব দিক খোলা আছে। সেখান দিয়ে তারা নিরাপদে বেরিয়ে যেতে পারবে। আমরা হাসপাতালের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের জানিয়েছি চিকিৎসাধীন শিশুদের নিরাপদ হাসপাতালে নিয়ে যেতে প্রয়োজনীয় সহায়তা করব। 

তবে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আশরাফ আল কিদরা বলেছেন, ইসরাইলের বোমাবর্ষণে হাসপাতালের স্টাফ এবং বেসামরিক নাগরিক সবাই একইভাবে আতঙ্কিত। হাসপাতাল খালি করতে সহায়তার ব্যাপারে তিনি বলেন, আমরা শিশুদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে এখনো কোনো তথ্য পাইনি। এখন আমরা কেবল তাদের নিরাপত্তার জন্য দোয়া করছি। তাদেরকে যেন আমাদের হারাতে না হয়। তিনি বলেন, মোট ৪৫টি শিশু ছিল। কিন্তু দুটি শিশু ইতোমধ্যে মারা গেছে।

 

আল শিফা হাসপাতালের স্টাফরা জানিয়েছেন, ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে সেখানে বোমাবর্ষণ করা হয়েছে। সেখানে আশ্রয় নেওয়া বেশির ভাগ লোক এরই মধ্যে সরে গেলেও এখনো সেখানে ৫০০ রোগী রয়েছে। 

এর আগে জ্বালানি সংকটে গাজার সবচেয়ে বড় হাসপাতাল আল শিফার বিদ্যুৎ সংযোগ পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় ভেন্টিলেশন বন্ধ হয়ে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যেই গাজায় বোমা হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরাইলি বাহিনী। হাসপাতালের পরিচালক জানান, সেখান থেকে কেউ বের হতে চাইলেই হামলার শিকার হচ্ছে। চারদিকে ঘিরে রেখেছে ইহুদি বাহিনীর ট্যাংক বহর। আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও জানিয়েছে গাজায় আল শিফা হাসপাতালের সঙ্গে তারা কোনো ধরনের যোগাযোগ করতে পারছে না। 

এদিকে গাজা উপত্যকার আরও একটি হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। ফিলিস্তিনের রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (পিআরসিএস) জানিয়েছে, গাজার উত্তরাঞ্চলের আল কুদস হাসপাতালে আর কোনো ধরনের সেবা দেওয়া যাচ্ছে না। জ্বালানি শেষ হয়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়েই ওই হাসপাতাল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। 

এক বিবৃতিতে পিআরসিএস-এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতি, চিকিৎসা সরবরাহ, খাদ্য ও পানির ঘাটতি এবং বিদ্যুৎ না থাকার পরেও হাসপাতালের কর্মীরা রোগীদের সেবা দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

চলমান ইসরাইলি বোমাবর্ষণে হাসপাতালে আরকানো কার্যক্রম চালানো যাচ্ছে না। সেখানকার চিকিৎসাকর্মী, রোগী এবং বাস্তুচ্যুত বেসামরিক নাগরিকদের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে। বিবৃতিতে আরও জানানো হয়েছে, সেখানে ইসরাইলি বাহিনীর উপস্থিতি আরও বেড়ে গেছে। রেড ক্রসের কর্মীরা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় অ্যাম্বুলেন্সও পাঠাতে পারছেন না।

এদিকে গাজার পূর্বাঞ্চলীয় খান ইউনিসের একটি আবাসিক ভবনে হামলার ঘটনায় ১৮ জন নিহত হয়েছে। হামলায় আবাসিক ভবনটি ধ্বংস হয়ে গেছে। এর আগেও এ ধরনের বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। এ নিয়ে ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরাইলি হামলা ফিলিস্তিনে নিহতের সংখ্যা ১১ হাজার ১০০ ছাড়িয়ে গেছে। এদের মধ্যে শিশু ও নারীই রয়েছেন ৮ হাজারের বেশি। এর আগে জাতিসংঘ জানায়, গাজায় অবস্থিত তাদের একটি কার্যালয়ে রাতভর গোলাবর্ষণ করা হয়েছে। ওই কার্যালয়ে আশ্রয় নেওয়া বেশ কয়েকজন বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যু এবং আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।৫০ থেকে ১০০ জিম্মিকে ছাড়া হতে পারে: হামাসের হাতে আটক থাকা জিম্মিদের মধ্য ৫০ থেকে ১০০ জনকে ছেড়ে দিতে পারে। রোববার ইসরাইলের তিনটি টিভি চ্যানেল এ তথ্য জানিয়েছে। জিম্মিদের মুক্তির ব্যাপারে বিস্তারিত কোনো তথ্য প্রকাশ করবেন না বলে জানিয়েছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। 

তবে টিভি চ্যানেল এন১২ নিউজ জানিয়েছে, চুক্তির মাধ্যমে ৫ থেকে ১০০ জিম্মিকে ছাড়িয়ে নেওয়ার আলোচনা চলছে। যাদের প্রায় সবাই হলো নারী, শিশু ও বয়স্ক মানুষ। আর এসব জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার সময় ৩ থেকে ৫ দিন ইসরাইল সব ধরনের হামলা বন্ধ রাখবে।