আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর নির্যাতন-নিপীড়নের ঘটনা অনুসন্ধান করতে গিয়ে রাষ্ট্রীয় গোপন নথি সংগ্রহের অভিযোগে রয়টার্সের দুই সাংবাদিককে ৭ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে দেশটির একটি আদালত। এই ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ডেনমার্কসহ বেশ কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থা এ রায়ের প্রতিক্রিয়ায় বিবৃতি দিয়েছে।
সোমবার এ রায় ঘোষণার সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন মিয়ানমারে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূত। মিয়ানমারে রয়টার্সের প্রতিনিধি ওয়া লোন এবং কিয়াও সোয়ের ৭ বছরের কারাদণ্ডের এ রায় মিয়ানমারের গণতন্ত্রের জন্য আঘাত হিসেবে উল্লেখ করেন তারা।
ওয়া লোন এবং কিয়াও সোয়ে এবং তাদের পরিবারের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন মিয়ানমারে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত স্কট মার্শিয়েল। একই সঙ্গে তিনি মিয়ানমারের জন্যও দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, এখানে যারা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছেন তাদের জন্য এটা খুবই দুঃখের ব্যাপার। এই রায় মিয়ানমারের মানুষের নিরপেক্ষ বিচার পাওয়ার বিশ্বাসকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে।
মিয়ানমারে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত ডান চুগ যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যদের পক্ষে এ রায় নিয়ে বলেন, আমরা এই রায় নিয়ে মারাত্মক হতাশ। তিনি বলেন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং আইনের শাসনই হলো গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি। কিন্তু এই রায় এরৎ দুটোর উপরেই একটা কালো ছায়া ফেলে দিলো।
মিয়ানমারে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত ক্রিশ্চিয়ান শ্মিট এক টুইট বার্তায় বলেন, ওয়া লোন এবং কিয়াও সোয়ের এই মামলার রায় পর্যালোচনা করা উচিত এবং তাদের অতি শিগগিরই শর্তহীনভাবে মুক্তি দিতে হবে।
মিয়ানমারে জাতিসংঘের অধিবাসী এবং মানবাধিকার সহায়তা সমন্বয়কারী নাট ওস্তবি এ রায়ে হতাশা প্রকাশ করে সাজাপ্রাপ্ত দুই সাংবাদিককে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, জাতিসংঘ রয়টার্সের ওই দুই সাংবাদিককে মুক্তি দেওয়ার জন্য ক্রমাগতভাবে মিয়ানমারকে আহ্বান জানিয়ে আসছে। প্রকাশের স্বাধীনতা এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিতে সম্মান প্রদর্শনের আহ্বান জানানো হয়। তিনি বলেন, ওয়া লোন এবং কিয়াও সোয়েকে তাদের পরিবারের কাছে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেয়া এবং সাংবাদিক হিসেবে তাদের কাজ পরিচালনা করার অনুমতি দেয়া উচিত।
এক বিবৃতিতে ডেনমার্কের তরফ থেকে মিয়ানমার সরকারের এই অবিচার বাতিলের আহ্বান জানানো হয়। মিয়ানমারের ডাচ দূতাবাসের এক মুখপাত্র যত দ্রুত সম্ভব ওই সাংবাদিকদের মুক্তি দিতে প্রেসিডেন্ট ওইন মিন্টের প্রতি আহ্বান জানান।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এর এশিয়া বিষয়ক সহকারী পরিচালক এই সাজাকে বিদ্বেষপূর্ণ অবিচার বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি এক টুইট বার্তায় বলেন, মিয়ানমারের সেনাবহিনী ঠান্ডা মাথায় ১০ জনকে হত্যা করল কিন্তু তাদের কোনো সাজা হলো না উপরন্তু এ বিষয়ে অনুসন্ধান করতে যাওয়া দুই সাংবাদিককে সাজা দিলো আদালত।
সোমবার রয়টার্সের ওই দুই সাংবাদিকের কারাদণ্ড ঘোষণা করা হয়। মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর নির্যাতন-নিপীড়ন থেকে বাঁচতে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম। দুই সাংবাদিকের কারাদণ্ডের ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরি।
মন্তব্য