আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের টার্গেট করে ফাঁদ পেতেছিলেন বাবা-মেয়ে মোহাম্মদ ইয়াসিন ও সুমাইয়া ইয়াসমিন। এক মনোনয়নপ্রত্যাশীর অভিযোগের ভিত্তিতে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাতে ধরা পড়েছেন তারা। বৃহস্পতিবার নোয়াখালী থেকে বাবা মোহাম্মদ ইয়াসিন ও মেয়ে সুমাইয়া ইয়াসমিনকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর ডিবি জানিয়েছে, মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মোবাইল নম্বর জোগাড় করে ২০ কোটি টাকার বিনিময়ে মনোনয়ন পাইয়ে দেওয়ার কথা বলতেন এই প্রতারক বাবা-মেয়ে। বিশ্বাস অর্জনের জন্য ব্যবহার করতেন একটি বিশেষ অ্যাপ। কল দিলেই মোবাইলে ভেসে উঠত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন ব্যক্তির নাম ও ছবি।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জানান, গত মঙ্গলবার একজন মনোনয়নপ্রত্যাশী ও প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীকে ফোন করেন এই প্রতারকরা। তাদের বলেন, ‘আপনার মনোনয়নের বিষয়ে বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে।
আপনি দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পাবেন। এজন্য দলের ফান্ডে আপনাকে ২০ কোটি টাকা দিতে হবে। আপনি এই টাকা রেডি রাখবেন। যখন জমা দিতে বলা হবে তখন দেবেন। আর অল্প সময়ের মধ্যে আপনি দেখা করবেন।
মনোনয়নপ্রত্যাশী ওই নেতা পরে আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতাকে বিষয়টি জানান। এটি প্রতারণা বুঝতে পেরে তখন তিনি ডিবিতে অভিযোগ করেন। পরে প্রতারক বাবা ও মেয়েকে গ্রেফতার করা হয়।
সূত্র বলছে, গণভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তা পরিচয়ে কখনো ইয়াসিন, আবার কখনো তার মেয়ে সুমাইয়া মনোনয়নপ্রত্যাশী বিভিন্ন ব্যক্তিকে ফোন করে মনোনয়ন পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে বড় অঙ্কের টাকা দাবি করছিলেন। তারা কয়েকজনের কাছ থেকে অল্প কিছু টাকাও নিয়েছেন।
ডিবি সূত্র জানায়, নির্বাচন এলেই প্রতারকরা বিভিন্ন ব্যক্তিকে মনোনয়ন পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে টাকা তুলে নেন। এসব প্রতারকের কারও কারও সঙ্গে সরকারি পদস্থ কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতাদের ছবি রয়েছে। এসব ছবি দেখিয়ে তারা মানুষকে ‘ফাঁদে’ ফেলেন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বাবা-মেয়ের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে ডিবির কর্মকর্তারা জানান, ইয়াসিনের বাড়ি নোয়াখালী। একসময় তিনি ঢাকার নবাবগঞ্জে ইলেকট্রনিক সামগ্রীর ব্যবসা করতেন। পরে তিনি প্রতারণায় জড়িয়ে পড়েন। ইয়াসিনের মেয়ে সুমাইয়ার বিয়ে হয়েছিল। কয়েক বছর আগে স্বামীর সঙ্গে তার বিচ্ছেদ হলে বাবার বাড়িতে চলে আসেন। পরে বাবার সঙ্গে প্রতারণায় জড়িয়ে পড়েন।
ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ জানান, একেক সময়ে প্রতারণার একেকটি মৌসুম থাকে। আগে চাকরি, পোস্টিং, বিদেশে লোক পাঠানোসহ বিভিন্নভাবে প্রতারণা করে অনেককে সর্বস্বান্ত করেছে এই ধরনের চক্র। বর্তমানে চলছে মনোনয়ন প্রতারণা। নির্বাচন কমিশন তফশিল ঘোষণার পরেই নির্বাচন ঘিরে সক্রিয় হয়ে উঠেছে এসব প্রতারক। অনেকেই তাদের ফাঁদে পা দিয়ে কিছু টাকাও দিয়েছে। আবার কেউ কেউ টাকা দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন।গোয়েন্দা পুলিশ।
মন্তব্য