বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, “বিএনপির নেতাকর্মীদের মানবাধিকার নেই। সংবিধানে যতটুকু মানবাধিকার আছে সেটুকু প্রয়োগেরও অধিকার নেই। হত্যা, লুণ্ঠন ও বন্দি হওয়াই যেন তাদের ভাগ্যের লিখন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নীতিই যেন হয়, ‘আমাকে সমর্থন কর, না হলে নিশ্চুপ থাক।’ আওয়ামী শাসকগোষ্ঠীর উগ্র-প্রচারের বিরুদ্ধে টুঁ-শব্দ করতে পারবে না। লুণ্ঠন আর হত্যা যেন কোনো অমানবিক কাজ নয় ক্ষমতাসীনদের কাছে। শেখ হাসিনা লেলিয়ে দিয়েছেন তার পেটোয়া বাহিনীকে-যারা মনে করে লুটপাট, সহিংসতা ও হত্যা যেন তাদের দলীয়” বুধবার বিকালে ভার্চুয়াল এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
এদিকে একদফা দাবিতে অষ্টম ধাপের ২৪ ঘণ্টা অবরোধ কর্মসূচি পালনের পর বৃহস্পতিবার সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করবে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো। রিজভী বলেন, ‘সরকারের রক্তচক্ষু, চোখ রাঙানি, গ্রেফতার অভিযান, দমন-পীড়নের মধ্যেও অকুতোভয়ে নেতাকর্মীরা তাদের মিছিল অব্যাহত রেখেছেন। বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো দুর্জয় গতিতে জীবন বাজি রেখে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিগুলো পালন করছেন।’
তিনি বলেন, ‘সারা দেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে চলছে মাতম আর মর্সিয়া। কান্নার আহাজারিতে এক বিষণ্ন, গুমোট অবস্থা বিরাজ করছে জনসমাজে। হাতিরঝিলের বাসা থেকে বের হওয়ার সময় ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক সভাপতি ফজলুর রহমান খোকনকে বর্বরোচিত আক্রমণ করে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী ক্যাডাররা। প্রচণ্ড মারধরের পর রক্তাক্ত খোকনকে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেয়। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা আর সশস্ত্র আওয়ামী ক্যাডাররা একই দলে পরিণত হয়েছে। তাদের কাজ শুধু শেখ হাসিনার আক্রোশ বাস্তবায়ন করা।’
তিনি আরও বলেন, ‘দুজন শিশু বর্ষা ও নুরী চিৎকার করে কাঁদছে তার মায়ের মুক্তির জন্য। গোয়েন্দা পুলিশ শিশুদের বাবাকে না পেয়ে তার মাকে ধরে নিয়ে গেছে। ৬ বছরের শিশু সিয়াম বুকফাটা আর্তনাদ করছে তার কারাবন্দি বাবা আবুল কালামের জন্য। পিতা আব্দুল হাইয়ের তিন সন্তানকে কারান্তরীণ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে এক ছেলের হয়েছে ১০ বছর সাজা। আরেক ছেলেকে না পেয়ে তার স্ত্রীকে গ্রেফতার করে ৩ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। এ ধরনের ঘটনার বর্ণনা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হবে।’
বিএনপির নেতাকর্মীরা কঠিন সময় পার করছে জানিয়ে বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘বিগত ১৫ বছরে অনেককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে, চাকরি থাকলেও কোনো পদোন্নতি পাননি, ব্যবসা-বাণিজ্য কেড়ে নেওয়া হয়েছে, দোকানপাট, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ভেঙে ফেলা হয়েছে। ঘরছাড়া, বাড়িছাড়া, এলাকাছাড়া নেতাকর্মীরা ধান খেতে মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দৃশ্য দেশবাসী দেখেছেন। সুপারির বাগান, ফলের বাগান এবং রান্নাঘরের লাকড়ি রাখার স্তূপের মধ্যে কোনো রকমে জায়গা করে রাত পার করছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। রাষ্ট্র এখন তার নাগরিকদের জীবন আর সম্পদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেয় না। রাষ্ট্র বলতেই এখন শুধু শেখ হাসিনা।’
রিজভী জানান, মঙ্গলবার দুপুর থেকে বুধবার দুপুর পর্যন্ত সারা দেশে বিএনপি ও এর অঙ্গসহযোগী সংগঠনের ৩৬৫ নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছেন। ১৪ মামলায় আসামি হয়েছেন এক হাজার ৫৩০ জন। আর ৬৫ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। তফশিল ঘোষণার পর থেকে এ পর্যন্ত মোট পাঁচ হাজার ৬৯৫ জন বিএনপি নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছেন বলে দাবি করেন রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ‘তফশিল ঘোষণার পর থেকে মোট মামলা হয়েছে ১৮৯টি। আসামি হয়েছেন ২১ হাজার ৯৭৫ জনের অধিক নেতাকর্মী। আহত হয়েছেন ৭৬৭ জনের অধিক নেতাকর্মী। মারা গেছেন চারজন।’
সকাল-সন্ধ্যা হরতাল: সরকার পতনের একদফা দাবিতে বৃহস্পতিার সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করবে বিএনপিসহ সমমনা দল ও জামায়াতে ইসলামী। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে সংবাদপত্রের গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স, অক্সিজেন সিলিন্ডার গাড়ি ও জরুরি ঔষধ পরিবহণ এ হরতালের আওতামুক্ত থাকবে। হরতাল সফলে সব স্তরের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, সড়ক-মহাসড়কে নেমে শান্তিপূর্ণভাবে হরতাল কর্মসূচি পালন করবেন। সরকার নাশকতা করে এর দায় চাপাতে পারে। সেদিক থেকে সর্তক থাকতে হবে। সারা দেশে হরতাল পালন করবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, গণতন্ত্র মঞ্চ, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, ১২ দলীয় জোট, এলডিপি, নুরুল হক নুর নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদ, ড. রেজা কিবরিয়া নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদ, বাংলাদেশ লেবার পার্টিসহ আরও বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল। হরতাল কর্মসূচি সমর্থন করে বিক্ষোভ মিছিল করবে আমার বাংলাদেশ পার্টি-এবি পার্টি।
মন্তব্য