ব্যাপকভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে নিরাপত্তা পরিষদের কর্তৃত্ব ও বিশ্বাসযোগ্যতা: গুতেরেস

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় দখলদার ইসরাইলি বাহিনীর টানা আগ্রাসন চলছে দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে। জল, স্থল ও আকাশ পথে তাদের নৃশংস হামলায় এখন পর্যন্ত ১৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যাদের ৭০ শতাংশই নারী ও শিআধুনিককালের বর্বরতম আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার বিশ্বের বিবেকমান কণ্ঠ। অন্যদের মতো জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসও ইসরাইলের নৃশংসতার তীব্র সমালোচনা করে আসছেন। নিয়েছেন কিছু পদক্ষেপও। কিন্তু জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী পাঁচ সদস্যের ভেটো ক্ষমতা থাকায় কোনো উদ্যোগই কাজে আসছে না। যুক্তরাষ্ট্র বার বার প্রস্তাবে ভেটো দিচ্ছ

এই পরিস্থিতিতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের কর্তৃত্ব ও বিশ্বাসযোগ্যতা মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন খোদ সংস্থাটির প্রধান গুতেরেস। এমনকি গাজার সংঘাত নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদের নীরবতার সমালোচনাও করেন তিনি। 

তুরস্কের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আনাদোলু সোমবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজা সংঘাত ইস্যুতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বিশ্বাসযোগ্যতা এবং কর্তৃত্ব উল্লেখযোগ্যভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস রোববার জানিয়েছেন।

গাজায় মানবিক সহায়তার আহ্বান জানিয়ে ইতোপূর্বে জাতিসংঘের পাস করা একটি প্রস্তাব সম্পর্কে গুতেরেস বলেন, বিলম্বের জন্য মূল্য দিতে হচ্ছে। নিরাপত্তা পরিষদের কর্তৃত্ব এবং বিশ্বাসযোগ্যতা মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে এবং রেজল্যুশনটি বাস্তবায়িত হচ্ছে না।

কাতারে অনুষ্ঠিত দোহা ফোরামে বক্তৃতাকালে গাজা সংঘাতের বিষয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ‘আলোড়ন-সৃষ্টিকারী নীরবতার’ সমালোচনা করেন গুতেরেস।

তিনি বলেন, গত ৭ অক্টোবর হামাসের ভয়ংকর আক্রমণ এবং এর পর থেকে গাজায় ইসরাইলের নির্বিচার বোমাবর্ষণের ঘটনায় নিরাপত্তা পরিষদ নীরব ছিল। এর এক মাসেরও বেশি সময় পর কাউন্সিল অবশেষে একটি রেজুলেশন পাস করে। যেটাকে আমি স্বাগত জানিয়েছলাম।

তবে রেজোলিউশনটি বাস্তবায়িত হচ্ছে না বলে এ সময় দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি। গুতেরেস জোর দিয়ে বলেন, গাজায় বেসামরিক নাগরিকদের জন্য কোনো কার্যকর সুরক্ষা নেই।

গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরাইল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরাইলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।

মাঝে হামাসের সাথে এক সপ্তাহব্যাপী মানবিক যুদ্ধবিরতির পর গাজা উপত্যকায় পুনরায় বিমান ও স্থল হামলা শুরু করে ইসরাইল। বিরতির পর শুরু হওয়া এই অভিযানে গাজায় হামলা আরও তীব্র করেছে দখলদার সেনারা।

গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, গত ৭ অক্টোবর ইসরাইল গাজা উপত্যকায় ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করার পর থেকে সেখানে কমপক্ষে ১৮ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত এবং আরও প্রায় ৫০ হাজার মানুষ আহত হয়েছেন।নিহত এসব ফিলিস্তিনিদের মধ্যে কমপক্ষে ৭ হাজার ১১২ জন শিশু এবং ৪ হাজার ৮৮৫ জন নারী রয়েছেন। এছাড়া ভূখণ্ডটিতে এখনও প্রায় ৭ হাজার ৬০০ জন নিখোঁজ রয়েছেন।