জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিকত্ব বাতিল করছেন ট্রাম্প!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :;জন্মসূত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পাওয়ার চলতি নিয়ম বাতিলের পরিকল্পনা করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে দেড়শ বছরের পুরনো এই নীতি বাতিল করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে এই ব্যবস্থা পরিবর্তনের জন্য সংবিধান সংশোধন প্রয়োজন বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। খবর বিবিসি বাংলা। জনপ্রিয় ওয়েবসাইট এক্সিওস এর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেছেন, আমেরিকার নাগরিক নন, এমন যে কেউ এসে সন্তান জন্ম দিলেই সেই সন্তান আমেরিকার নাগরিকত্ব দাবি করতে পারে। এই নিয়ম অত্যন্ত হাস্যকর, এটি বন্ধ হওয়া উচিত। কিন্তু প্রেসিডেন্ট কি তা করতে পারেন? এই প্রশ্ন অনেকে তুলেছেন। দেড়শ বছরের পুরনো এই নীতিতে বলা হয়েছে, আমেরিকার মাটিতে জন্মগ্রহণ করলেই দেশটির নাগরিকত্ব পাবে। ট্রাম্পের বক্তব্য হচ্ছে, তার আইন বিশেষজ্ঞরা তাকে নিশ্চিত করেছেন যে, তেমন কোনো সংশোধনীর প্রয়োজন নেই। নির্বাহী আদেশের মাধ্যমেই এটা করা সম্ভব। প্রেসিডেন্ট তার একক ক্ষমতাবলে এমন পদক্ষেপ নিতে পারেন কি না? জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের কারণে অবৈধ অভিবাসীরা বিশেষ কোনো সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করে কিনা? এখন যুক্তরাষ্ট্রে এসব প্রশ্নে উগ্র বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে ট্রাম্পের বক্তব্যের কারণে। যুক্তরাষ্ট্রের শাসনতন্ত্রে ১৪তম সংশোধনীর মাধ্যমে এই নাগরিকত্বের বিষয়টি নিশ্চিত করা আছে। এই সংশোধনীর প্রথম বাক্যতেই বলা আছে, ‘যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী সকল ব্যক্তিই দেশটির নাগরিক হবে। সে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে যেখানেই বসবাস করুক, সেটা বিবেচ্য বিষয় নয়।’ অভিবাসন নিয়ে কট্টরপন্থীরা বলছেন, এই ব্যবস্থা অবৈধ অভিবাসনের জন্য ‘চুম্বক’ হিসেবে কাজ করে থাকে। এবং সন্তান জন্ম দেয়ার জন্য গর্ভবতী নারীদের সীমান্ত অতিক্রম করে যুক্তরাষ্ট্র আসতে উৎসাহিত করছে। ট্রাম্প বলেছেন, জন্ম নেয়া শিশুটি ৮৫ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র্রের সব সুবিধা ভোগ করবে, এটা বন্ধ হতে হবে। ২০১৫ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, শতকরা ৬০ভাগ আমেরিকান জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের সুযোগ রাখার পক্ষে রয়েছে। আর এই সুযোগ বাতিলের পক্ষে আছে ৩৭ শতাংশ আমেরিকান। খবরে বলা হয়, গৃহযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ১৮৬৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে চতুর্দশ সংশোধনী আনা হয়েছিল। ত্রয়োদশ সংশোধনী আনা হয়েছিল ১৮৬৫ সালে।সেই সংশোধনীর মাধ্যমে দাসত্ব প্রথা বিলুপ্ত করা হয়েছিল। এরপর চতুর্দশ সংশোধনীর মাধ্যমে আমেরিকায় জন্ম নেয়া সাবেক ক্রীতদাসদের নাগরিকত্ব নিশ্চিত করা হয়েছিল। ১৮৫৭ সালে একটি ঘটনায় সুপ্র্রিমকোর্ট সিদ্ধান্ত দিয়েছিল, আফ্রিকান আমেরিকানরা কখনও আমেরিকার নাগরিক হতে পারে না। কিন্তু এরপর চতুর্দশ সংশোধনী তাদের নাগরিকত্ব নিশ্চিত করে। ১৮৯৮ সালে সুপ্র্রিমকোর্ট একটি মামলায় নিশ্চিত করে যে,অভিবাসীদের শিশুদের ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য হবে। চীনা বাবা-মা আমেরিকায় সন্তান জন্ম দিয়েছিলেন। ওয়াং কিম আর্ক নামের সেই শিশু ২৪ বছর বয়সে চীনে বেড়াতে গিয়েছিলেন। তিনি ফেরার সময় তাকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে বাধা দেয়া হয়।তখন ওয়াং যুক্তি দিয়েছিলেন যে, তিনি আমেরিকায় জন্ম নিয়েছেন। চতুর্দশ সংশোধনীতে যে অধিকার আছে, সেখানে তার বাবা মা'র অভিবাসন অবস্থা কোনো প্রভাব ফেলে না। এই যুক্তি দিয়ে তিনি সফল হয়েছিলেন। ইমিগ্রেশন হিস্ট্রি রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক ইরিকা লী লিখেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং ওয়াং কিম আর্কের মধ্যে তখন যে আইনি লড়াই হয়েছে, সেখানে এসেছিল যে আমেরিকায় জন্মগ্রহণকারি সকলে দেশটির নাগরিক হবে। তখন থেকে আদালত আর কখনও এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেনি। আইন বিশেষজ্ঞদের বেশিরভাগই মনে করেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের অধিকার বাতিল করতে পারেন না। ভার্জিনিয়া আইন স্কুলের অধ্যাপক এবং সংবিধান বিশেষজ্ঞ কৃষ্ণ প্রকাশ বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এমন কিছু করছেন, যা অনেক মানুষকে আঘাত করবে।তবে শেষপর্যন্ত বিষয়টি আদালতে যাবে এবং আদালতই সিদ্ধান্ত দেবে বলে তিনি মনে করেন। যুক্তরাষ্ট্রে মধ্যবর্তী নির্বাচনের আর কয়েকদিন বাকি আছে। সে সময় এমন পদক্ষেপের পিছনে রাজনীতি আছে বলে বিশ্লেষকরা বরছেন। ট্রাম্প এমন পদক্ষেপ নিয়ে নিজের সমর্থকদের চাঙা করতে চাইছেন। একই ভাবনা থেকে মাত্র একদিন আগেই হোয়াইট হাউজ মেক্সিকো সীমান্তে ৫০০০ সৈন্য পাঠানোর কথা ঘোষণা করেছে। দক্ষিণ আমেরিকার তিনটি দেশ থেকে মেক্সিকো হয়ে কয়েক হাজার অবধৈ অভিবাসীর যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ ঠেকাতে এই সৈন্য পাঠানোর ঘোষণা দেয়া হয়েছে।