আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সৌদি সাংবাদিক ও লেখক জামাল খাশোগিকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন দেশটির ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান (এমবিএস)। শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (সিআইএ) বরাত দিয়ে একথা জানিয়েছে মার্কিন গণমাধ্যমগুলো।
সিআইএ’র অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসা তথ্য সৌদি আরবের জানানো সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে। একদিন আগেই সৌদি সরকার জানিয়েছে যে, খাশোগির মৃত্যুর সঙ্গে ক্রাউন প্রিন্সের কোন সংশ্লিষ্টতা ছিল না। তাকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিল এক শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তা।
সিআইএ’র সিদ্ধান্তের বিষয়ে সর্বপ্রথম প্রতিবেদন প্রকাশ করে প্রভাবশালী মার্কিন পত্রিকা দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট। এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত প্রকাশ করেছেন বহু শীর্ষ মার্কিন কর্মকর্তা। তারা জানিয়েছেন, সিআইএ’র সিদ্ধান্তে তাদের প্রবল আত্মবিশ্বাস রয়েছে।
কাতার-ভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত খাশোগি হত্যাকাণ্ডে এমবিএস’র জড়িত থাকার সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য সূত্র এটি। একই সঙ্গে এই সিদ্ধান্ত, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখার চেষ্টায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
দ্য পোস্ট সিআইএ’র সিদ্ধান্ত নেওয়ার সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের বিবৃতি দিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তবে ওই কর্মকর্তাদের নাম প্রকাশ করা হয়নি। তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিবেদনগুলোর যথাযথতা নিশ্চিত করা যায়নি।
এদিকে, দ্য পোস্টের প্রতিবেদনটি নিয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে হোয়াইট হাউজ। তারা বলেছে, এটা গোয়েন্দা সংস্থার ব্যাপার। একইসঙ্গে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সিআইএ।
আরও পড়ুন- খাশোগি হত্যার রেকর্ডিং সৌদিসহ কয়েকটি দেশকে দিয়েছে তুরস্ক
তুর্কি গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, গত ২ অক্টোবর তুরস্কের ইস্তাম্বুলের সৌদি দূতাবাসে বিয়ের কাগজপত্র আনতে যান সৌদি লেখক ও সাংবাদিক জামাল খাশোগি। দূতাবাসে প্রবেশের পরপরই তাকে হত্যা করা হয়। হত্যার পর তার দেহ টুকরো টুকরো করে দূতাবাস সংলগ্ন সৌদি মহাদূতের বাসভবনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে দুই সপ্তাহ ধরে এসিড দিয়ে গলিয়ে দেওয়া খাশোগির মৃতদেহের সকল চিহ্ন।
তুর্কি কর্মকর্তারা আরও জানান, খাশোগিকে হত্যা করতে ঘটনার দিন তুরস্কে প্রবেশ করেছিল ১৫ সদস্যের একটি সৌদি দল। ওই দলে ক্রাউন প্রিন্সের তিন সহযোগীও ছিলেন।
খাশোগি সৌদি আরবের বর্তমান রাষ্ট্রনীতির কঠোর সমালোচক ছিলেন। মোহাম্মদ বিন সালমান ক্রাউন প্রিন্স ঘোষিত হওয়ার পরপরই তিনি সৌদি আরব ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছা নির্বাসনে যান। তার হত্যার পর অভিযোগ ওঠে তাকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন ক্রাউন প্রিন্স নিজেই। তবে বুধবার (১৫ নভেম্বর) ওই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন সৌদি প্রসিকিউটর।
বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে সৌদি আরবের ডেপুটি পাবলিক প্রসিকিউটর শালান বিন রাজিহ শালান জানান, খাশোগি হত্যায় ১১ ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে পাঁচজনের মৃত্যুদণ্ড দাবি করা হয়েছে। এছাড়া আরও ১০ ব্যক্তির বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।
বিন শালান, অভিযুক্তদের নাম প্রকাশ করেননি। কিন্তু তিনি বলেন, তদন্তে বেরিয়ে এসেছে যে খাশোগিকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন তুরস্কে পাঠানো দলের প্রধান। ক্রাউন প্রিন্স এ বিষয়ে কিছুই জানতেন না।
এদিকে, বিন শালানের সম্মেলনের পরপরই তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়্যিপ এরদোয়ানের এক উপদেষ্টা সৌদি আরবের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করার অভিযোগ আনেন।
নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছিল খাশোগিকে
শুক্রবারের প্রতিবেদনে দ্য পোস্ট ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের উদ্ধৃত করে লিখেছে, সিআইএ একাধিক গোয়েন্দা সূত্র যাচাই করে দেখার পর তাদের সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে। এসব সূত্রের মধ্যে রয়েছে ক্রাউন প্রিন্সের ভাই এবং যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত খালিদ বিন সালমানের সঙ্গে খাশোগির একটি ফোনকল।
খালিদ ওই ফোনকলে খাশোগিকে কাগজপত্র আনতে ইস্তাম্বুলের সৌদি দূতাবাসে যাওয়ার পরামর্শ দেন। খাশোগিকে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেন। ওই ফোনকলের বিষয়ে অবগত এমন ব্যক্তিদের উদ্ধৃত করে দ্য পোস্ট জানায়, খাশোগিকে হত্যা করে হবে এ বিষয়ে খালিদ জানতেন কিনা সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি। তবে এটা নিশ্চিত যে, তিনি তার ভাইয়ের নির্দেশনাতেই ফোনকলটি করেছিলেন।
তবে প্রতিবেদনে উল্লেখিত তথ্য অস্বীকার করেছেন খালিদ। শুক্রবার এক টুইটার পোস্টে তিনি লিখেন, খাশোগির সঙ্গে তার সর্বশেষ যোগাযোগ হয়েছিল ‘টেক্সট’র মাধ্যমে, গত বছরের ২৬ অক্টোবর, তার হত্যাকাণ্ডের প্রায় এক বছর আগে।
তিনি লিখেন, আমি কখনোই তার সঙ্গে ফোনে কথা বলিনি। আর নিশ্চিতভাবেই কখনোই তাকে কোন কারণেই তুরস্কে যেতে বলিনি। আমি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছে এমন দাবি সম্পর্কিত সকল তথ্য প্রকাশের আহবান জানাচ্ছি।
এদিকে বৃহস্পতিবার খাশোগির হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ১৭ ব্যক্তির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যে ক্রাউন প্রিন্সের শীর্ষ সহযোগী সৌদ আল-কাহতানিও রয়েছেন। এছাড়া মার্কিন সিনেটরদের একটি দ্বিপাক্ষিক দল কংগ্রেসের উচ্চকক্ষে খাশোগি হত্যাকাণ্ড ও ইয়েমেন ইস্যুতে সৌদি আরবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ বিষয়ক একটি বিল উত্থাপন করেছেন।
মন্তব্য